মোঃ নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক সিটি কর্পোরেশন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
নাগরিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভালো পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসুন। এই বিপ্লবে আপনারাই সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার।
আগামীর সিটি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, একটি সুন্দর পরিকল্পনা কাজের অর্ধাংশ। আমি এতোদিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মকর্তা ছিলাম, এখন পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব এসেছি।
উম্মে সালমা তানজিয়া আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে সাধারণ মানুষের অনেক চাওয়া-পাওয়া। যিনিই এই চেয়ারে বসুক, যাতে জনগণের কল্যাণে, জনস্বার্থে কাজ করে, ময়মনসিংহবাসীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে সেই চেষ্টা করা উচিৎ।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ছাত্র সমন্বয়ক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছেন নবযোগদানকৃত প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া।
মতবিনিময় সভার শুরুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও দোয়া করা হয়। এরপর মুক্ত আলোচনায় এক প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক বলেন, রাজশাহী এত সুন্দর, খুলনা এত পরিকল্পিত শহর, আমাদের ময়মনসিংহ কেন পারে না। যানজটে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ময়মনসিংহ। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন ময়মনসিংহ দেখতে পারবেন আপনারা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে, ছাত্ররা পরিবর্তনের নজির স্থাপন করেছে। পরিবর্তনটা শুরু হোক নিজের থেকে।
ময়মনসিংহ বড় মসজিদ এর ইমাম আল্লামা আব্দুল হক এর কথার আলোকে প্রশাসক বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে চায় ছাত্ররা। তারা এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চায় যে বাংলাদেশে সবাই তার দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে, সবাই স্বাধীনভাবে তার মতপ্রকাশ করতে পারবে। জেন-জি এটা করে দেখিয়েছে। যখন সবাই এক হয়ে সকল বৈষম্যকে রোধ করতে পারবো তখনই এটি সফল গণআন্দোলন হবে।
'কেমন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন আমরা চাই' নামক উন্মুক্ত আলোচনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন। তারা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিগত দিনের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করেও তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ, যানজট, ফুটপাত দখল, অপরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা, নতুনবাজার রেল গেইট এর রাস্তা ঢালাই না হওয়া, বিদ্যুৎ এর প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা, মাদক ও সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, শিক্ষা বাণিজ্য নিয়ে নবযোগদানকৃত প্রশাসকের সাথে কথা বলেন এবং বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
অংশীজনরা বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি দুর্নীতির আখড়া। কোনো মাস্টারপ্ল্যান নাই, বিল্ডিং কোড না মেনে ইচ্ছামতো অনুমোদন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অটোরিকশা অনুমোদনসহ ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট বরাদ্দ নিয়েও মত বিনিময় বক্তারা প্রশ্ন তোলেন।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি কর্ণেল মাহমুদ হাসান বলেন, প্রথমেই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আপনারা সেনাবাহিনীর নাম উচ্চারণের সাথে সাথে দেশপ্রেমিক ও গর্বিত এই শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। সততা ও সদিচ্ছা থাকায় সেনাবাহিনী যেকোনো কাজ করতে পারে। চার্টার অভ ডিউটি এন্ড টাস্ক এর ভিত্তিতে সেনাবাহিনী বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে থাকে। সমালোচনা না করে আত্মপর্যালোচনা করি। ময়মনসিংহ ধর্মীয় সম্প্রীতির যে উদাহরণ সেট করেছে তা বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা চাই।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে মসিক প্রশাসক বলেন, সব আন্দোলনেই কিছু সম্মুখ সারির যোদ্ধার দরকার হয়। দেশের ৯৮শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন করলেও এই আন্দোলনে তা পালন করেছে ছাত্ররা এজন্য ছাত্রদের ধন্যবাদ। মেধাবী হলো সেই যে ভালোবাসতে জানে। ঘৃণা ধরে রাখলে নিজেরই ক্ষতি। ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করতে চাই।
সকলের উদ্দেশ্যে উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, মাথায় আইস ফ্যাক্টরি (বরফ), মুখে স্যুগার ফ্যাক্টরি, হৃদয়ে লাভ ফ্যাক্টরি থাকলে স্যাটিসফ্যাক্টরি (সন্তুষ্টি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। চলুন বুকের মধ্যে বাংলাদেশকে ধারণ করে সকলে হাতে হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যাই।
সভায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি কর্নেল মাহমুদ হাসান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পরিষদের প্রশাসক তাহমিনা আক্তার, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আমজাদ আলীসহ বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির আব্দুল করিম, নায়েবে আমির অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, মহানগর আমীর কামরুল হাসান এমরুল, সিপিবি ময়মনসিংহ সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম সহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সাহিত্য-সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও গণমাধ্যমের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: