• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হারল টাইগাররা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
টি২০ ,স্কটল্যান্ড ,বাংলাদেশ
ছবি: স্কটল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ সংগৃহীত।

নিউজ ডেস্ক: শেন বার্জার বাগ্‌যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করলেও ম্যাচের আগে শান্তই ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান দেখানোর কৌশল নিয়ে মরুর উত্তাপেও পরিবেশ রেখেছিলেন শান্ত করে। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দলনেতার মুচকি হাসির অন্তরালে যে আগুনে উত্তাপ দেখা গেছে, মাঠের লড়াইয়ে তা আর থাকেনি। স্কটিশ ফাস্ট বলের ঝোড়ো হাওয়ায় নিভে গেছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে জয়ের আলোয় আলোকিত হতে চাওয়া স্বপ্নের প্রদীপের সলতে। বিশ্বকাপ মঞ্চে মরুর কাঁটায় বিঁধল পায়ে। অঘটনে শুরু হলো বাংলাদেশের অভিযান।

আইসিসির সহযোগী দেশ স্কটল্যান্ডের কাছে ছয় রানে হেরে মাহমুদউল্লাহরা প্রমাণ করলেন, দেশ থেকে নিয়ে এসেছেন ফলস কনফিডেন্স। এই ভুল বিশ্বাস থেকে বেরোতে না পারলে মরুর কাঁটার পরের ম্যাচে ওমান পাথুরে ক্ষতবিক্ষত হবে চলনশক্তি। পরের ম্যাচটিই হলো স্বাগতিক ওমানের সঙ্গে। যে ম্যাচ থামিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অগ্রযাত্রা।

টি২০ সংস্করণে ছোট দলও বড় দলকে ফেভারিটের তকমা দিতে চায় না। এর পেছনে কিছু যুক্তিও আছে। শুক্রবার স্কটল্যান্ডের কোচ শেন বার্জার সে কারণেই বাংলাদেশকে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির থেকে আলাদা করে দেখতে চাননি। গতকাল ম্যাচ জিতে তার দল প্রমাণ করল অতি আত্মবিশ্বাস বা অহম দেখাতে বাংলাদেশকে খাটো করে দেখাননি তিনি। বিশ্বকাপের আগে সত্যিই ভালো ক্রিকেট খেলেছে স্কটল্যান্ড। বিশ্বকাপ ভেন্যুতে এক মাসের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে বেশ কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে জয়ের ছন্দেও ছিল তারা। সেটাই আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে দলটিকে। ঠিক উল্টোটাই ঘটেছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দেশে স্লো অ্যান্ড লো উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস অর্জনের স্লোগান তুলেছিলেন খেলোয়াড়রা। ওমানের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেও পেয়েছেন ভুল ধারণা। আইসিসির অফিসিয়াল দুই প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজয়ে বাংলাদেশের দুর্বলতা ফুটে ওঠে। যদিও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ একদিন আগেও তা মেনে নেননি। বরং নিকট অতীতের পারফরম্যান্সকে ধর্তব্যে রাখার পক্ষে ছিলেন না তিনি। বাস্তবতা হলো, নিকট অতীতের পারফরম্যান্সই বাস্তবতা।

মাসকটের এই আল আমেরাত স্টেডিয়ামে ওমান 'এ' দলের বিপক্ষে ২০৭ রান করাও ফলস কনফিডেন্স দিয়েছে টাইগারদের। তা না হলে গতকাল টস জিতে ফিল্ডিং নিতেন না মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়ক উইকেটে বিশাল রান দেখতে পেয়েছিলেন। উইকেট রানের জন্য ভালোও ছিল। শুধু রান ছিল না তাদের ব্যাটে। ফাঁপা ব্যাট ফেটে গেছে স্কটিশ বোলিং তোপে। মাত্রই তো ১৪১ রানের টার্গেট ছিল বাংলাদেশের সামনে। টি২০ ক্রিকেটে মাঝারি মানের স্কোর এটি। মোটামুটি ব্যাটিং পারা দলও আয়েশে করে ফেলতে পারে এই রান। স্লো উইকেটে খেলে সাকিবদের মনমানসিকতাও যে স্লো হয়ে গেছে, সেটা দেখা গেল বিশ্বকাপ উদ্বোধনী দিনে। বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে গেছে ১৮ ওভারেই। শেষ ১২ বলে ৩২ রান করতে হতো জিততে। ১৯তম ওভারে ৮ রান তোলে দুই উইকেট হারিয়ে। শেষ ওভারে অসম্ভব টার্গেটের মুখে পড়ে দল। ছয় বলে করতে হতো ২৪ রান। সাইফউদ্দিন বা মেহেদীর যে কোনো একজনকে কার্লোস ব্রাথওয়েট হতে হতো জিততে হলে। সাফায়ন শরিফকে চার-ছক্কা মারতে হতো টানা চার বলে। ছয় বলের চারটিতে ছক্কা হাঁকালেও হতো। তারা দু'জন ব্রাফেটও হতে পারেননি, বাংলাদেশও ম্যাচ জেতেনি। বরং পরাজয়ে সাকিব, মাহমুদউল্লাহর ডট করা বলগুলো মরুর পাহাড়ের ওজন নিয়ে চেপে বসেছে সমর্থকদের মনে। মরুর কাঁটা হয়ে বিঁধছে পায়ে পায়ে।

স্কটিশ অধিনায়ক কাইল কোয়েটজে খুশি হয়েছিলেন ব্যাটিং পেয়ে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশকে বিশাল টার্গেট দিতে পারবেন। সেটা তিনি স্পষ্ট করে বলেছেনও, 'আগে ব্যাট করতে পেরে আমরা খুশি। বোর্ডে রান থাকলে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা যাবে। হ্যাঁ, কিছু শিশির থাকলেও মানিয়ে নেব।' কোয়েটজের বিশাল স্কোরের স্বপ্ন পূরণ হতে দেননি বোলাররা। মাহমুদউল্লাহর মুনশিয়ানায় স্কটিশদের বেঁধে রাখা গেছে ১৪০ রানে। বোলার পরিবর্তনে মাহমুদউল্লাহর কিছু কৌশল আছে। পাওয়ার প্লের ছয় ওভার চার-পাঁচজন বোলারকে বোলিংয়ে আনেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের এ প্র্যাকটিস আন্তর্জাতিক ম্যাচেও করেন তিনি। গতকাল অবশ্য তিন পেসারকে দিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করান। তাসকিন আহমেদ একটু খরুচে হলেও মুস্তাফিজুর রহমান আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মিতব্যয়ী ছিলেন। সাইফউদ্দিন তো বোলিংয়ে এসেই ব্রেক থ্রু এনে দেন কাইল কোয়েটজেকে বোল্ড করে। ইনিংসের তৃতীয় আর নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলটি সাইফউদ্দিন ব্লকহোলে ফেলায় ব্যাটার লাইন মিস করলে অফস্টাম্প উড়ে যায়। জর্জ মানসির প্রচেষ্টায় পাওয়ার প্লে থেকে ৩৯ রান তোলে স্কটল্যান্ড। ১০ ওভার শেষ করে ৫১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে। সপ্তম ওভার থেকে দুই প্রান্তে স্পিনার আনেন অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান চাপ তৈরি করায় মেহেদী হাসান ব্রেক থ্রু পান। নিজের প্রথম ওভারেই ম্যাথু ক্রস আর জর্জ মানসিকে ড্রেসিংরুমে ফেরান মেহেদী। তার জোড়া আঘাতে কিছুটা ব্যাকফুটে যেতে হয় স্কটল্যান্ডকে। একাদশ ওভারটি ছিল সাকিবের ম্যাজিক। দ্বিতীয় বলে বেরিংটনের উইকেট নিয়ে টি২০ সংস্করণে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি লাসিথ মালিঙ্গাকে ছুঁয়ে ফেলেন। চতুর্থ বলে মিচেল লিস্ককে ক্যাচ আউট করে রেকর্ডটা এককভাবে নিজের করে নেন। এদিন দুই ব্যাটারকে আউট করায় সাকিবের টি২০ উইকেট এখন ১০৮টি। বিশ্বকাপ মঞ্চ রেকর্ডের বরপুত্রের আরও একটি রেকর্ড হয়েছে, তিন সংস্করণ মিলে ছয়শ আন্তর্জাতিক উইকেটের মালিক হলেন তিনি। আইপিএলে দুর্দান্ত খেলা সাকিব চার ওভার শেষ করেন ১৭ রানে। মেহেদী ১৯ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। রাজস্থান রয়্যালসের ডেথ ওভার বোলার মুস্তাফিজ ডেথেই পান দুটি উইকেট। মিডলঅর্ডার ব্যাটার ক্রিস গ্রেভস ২৮ বলে ঝোড়ো ৪৫ রান না করলে ১৪০ স্কোরে যেতে পারে না স্কটল্যান্ড। প্রতিপক্ষকে এই রানে বেঁধে রাখার কৃতিত্ব বোলারদের দিতেই হবে। ভালো ক্যাচ নেওয়ায় লিটন আর আফিফও ধন্যবাদ পাবেন।

ব্যাটিং স্বর্গে ১৪১ রানের ছোট টার্গেট পেলেও ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি। সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস পাওয়ার প্লের ছয় ওভার টেকেননি। সৌম্য দ্বিতীয় আর লিটন চতুর্থ ওভারে ক্যাচ দেন পাঁচ রান করে। টাইগার ওপেনারদ্বয়ের ১০ রান করতেও লেগেছে ১২ বল। দলের ১৮ রানে দুই উইকেট পড়ে যাওয়া স্বাভাবিকভাবেই চাপ তৈরি হয় পরের জুটির ওপর। সেট হতে বেশ সময় নেন সাকিব আর মুশফিক। ওই সময় বেশ কিছু ডট বল চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ফলে পাওয়ার প্লে থেকে মাত্র ২৫ রান পায় বাংলাদেশ। অথচ স্কটল্যান্ড পাওয়ার প্লেতে এক উইকেট কম হারিয়ে ৩৯ রান করেছিল। তবে মুশফিক পরপর দুটি ছক্কা মারায় ১০ ওভার শেষে ৮ রান বেশি তোলে বাংলাদেশ। পরের ৬০ বলে ৮১ রান করতে হতো টাইগারদের। সাকিব রক্ষণাত্মক খেলে গেলেও মুশফিকের চেষ্টা ছিল শট খেলা। সাকিব ২৮ বলে ২০ রান করে (৯টি ডট) উইকেট ছুড়ে দেওয়ার পর মুশফিক ভুল শট খেলে ফেরেন ৩৮ রানে (৩৬ বলে ১৩ ডট)। মাহমুদউল্লাহ-আফিফের জুটিটা ভালো জমে উঠলেও বেশিদূর এগোয়নি। অপরিণত শট খেলে একেকজন উইকেট ছুড়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। বাংলাদেশ বলে বলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে থাকে। বোলারদের অর্জন শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকানিউজ২৪.কম / মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।

আরো পড়ুন

banner image
banner image