• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

পুলিশী প্রহরায় খেলার মাঠে নির্মিত হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ১১ জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৩২ পিএম
পুলিশী প্রহরায় খেলার মাঠে নির্মিত হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর
নির্মিত হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ: শতবর্ষী প্রাচীণ খেলার মাঠে নির্মাণ করা হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় গুচ্ছ গ্রামের ঘর।

নেত্রকোনার কেন্দুয়ার বলাইশিমুল ইউনিয়নের বলাইশিমুল গ্রামের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী মাঠটি রক্ষায় গ্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে শিশু-কিশোর-নারী-পুরুষ-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। মানুষের ক্ষোভ প্রতিবাদের মূখে তিনটি তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে নিরাপত্তা প্রহরায় নির্মাণ করা হচ্ছে গৃহহীনদের জন্য ঘর।

প্রশাসন স্থানীয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার একাংশ মানুষের সাথে বৈঠকে সমঝোতায় হলেও বলাইশিমুল ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ খেলার মাঠে গৃহনির্মাণের পক্ষে নন বলে অনেকে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস জানান, পূর্বপরিকল্পণা অনুযায়ী আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহ নির্মাণে ইতোমধ্যেই ১৪/১৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে অন্যত্র এটি স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। স্থানীয় মানুষের সাথে আলোচনা করে তাদের বোঝানো হয়েছে। তাদের সাথে সমন্বয় করে নির্মাণকাজ চলছে। এখানে স্থানীয় গৃহহীনদেরকেই পুনর্বাসন করা হবে। এখন মানুষ বুঝতে পেরেছে তাই কাজে বাধা দিচ্ছে না।

এ ব্যাপারে নেত্রকোণা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মনির হোসেন জানান,  গত ৮ জুন বলাইশিমুল মাঠে গ্রামের মানুষের সাথে এক বৈঠকে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তাদের দাবী অনুযায়ী মাঠ রক্ষা করে এর উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক পাকাকরণ, মাঠের একপাশে নির্মাণাধীন আশ্রয়ন প্রকল্পের সীমানা চিহ্নিত করে বেড়া দেয়া, খেলাধুলার সরঞ্জমাদি প্রদান করে প্রশাসনের সহযোগিতায় খেলাধুলার আয়োজনসহ অন্যান্য সহযোগিতায় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।

প্রশাসনের এসব আশ্বাস জানেন না এলাকার অধিকংশ মানুষ। প্রতিবাদকারীরা জানান, বলাইশিমুল ইউনিয়নে প্রচুর খাস জমি আছে, সেগুলোতে আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ না করে একশ্রেণীর অতিউৎসাহী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সরকারকে খুশি করার জন্য মাঠ দখল করে আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে যার ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শতবর্ষী প্রাচীণ লম্বালম্বি বলাইশিমুল খেলার মাঠটির দক্ষিণ পাশে একটু নিচু  প্রচুর খালি জমি পড়ে আছে। তা সত্ত্বেও যাতে মাটি ভরাট করা না লাগে সেজন্য উচু মাঠটিই ধ্বংস করে নির্মিত হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম। স্থানীয় সকল শ্রেণীপেশার মানুষ আশ্রয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্বেষ পোষণ করছে না, এলাকাবাসীর দাবী আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহ নির্মিত হোক এবং খেলার মাঠটিও অক্ষত থাকুক।

নেত্রকোনার কেন্দুয়ার বলাইশিমুল ইউনিয়নের বলাইশিমুল গ্রামে ১ একর ৮৭ শতাংশ ভূমির প্রাচীণ একটি খেলার মাঠের এক অংশে সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় গুচ্ছ গ্রাম করছে কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এলাকাবাসী মাঠে গুচ্ছগ্রাম না করে পাশের খাসভূমিতে অসহায় ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রাম করার দাবী জানিয়ে এলাকার নারী-পুরুষ একাধিক মানববন্ধনসহ আদালতে মামলা করেছেন।

অপরদিকে আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করলে, তা অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক ভেঙ্গে ফেলার দায়ে মামলা করেন উপজেলা প্রশাসন। এ মামলায় বলাইশিমুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর তালুকদার মল্লিক ও সাবেক ইউপি সদস্য বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হায়দার আলী তালুকদারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তারা এখনও জেল হাজতে রয়েছেন। মাঠ রক্ষার দাবীতে সোচ্ছার গ্রামবাসীর বক্তব্য শতবছরের প্রাচীণ এই মাঠটিতে পূর্ব পুরুষেরা খেলাধুলা করেছেন এখনও খেলছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন খেলতে পারে সে জন্য মাঠ রক্ষার দাবীতে গত ২৮ মে তারা প্রথম মানববন্ধন করেন। পরদিন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় নের্তৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক আলোচনার সভার মাধ্যমে গুচ্ছগ্রাম তৈরির কার্যক্রম শুরু করা হলে ২দিন পর কে বা কারা তা ভেঙ্গে পেলে। এঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি মামলা করা হয়।

 গত ৮ জুন বুধবার দুপুরে মাঠ রক্ষা ও মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু মানববন্ধন করেন। এ সময় বৃদ্ধা তাজবানু (৬৫), তাহেরা (৬০), সালেহা (৬০), আমেনা (৬৫), রেহানা (৩০), শরিফা (২০), তামান্না (১২), হেলাল উদ্দিন (৬৫), বকুল (৬০), উবাইদুলসহ অনেকেই বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবতার নেত্রী। তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়হীন মানুষদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এটি ইতিহাসে বিরল ঘটনা। তবে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বলাইশিমুল মাঠটিতে গুচ্ছগ্রাম না করে মাঠের পাশেই অনেক খাস জমি রয়েছে। সেই খাস জমিতে গুচ্ছগ্রাম করার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। আমরা গুচ্ছগ্রাম চাই, তবে খেলার মাঠটি নষ্ট করে নয়।

বলাইশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান  বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের বাস্তবায়ন চাই। আবার মাঠটি যাতে নষ্ট না হয় সে চেষ্টাও আমরা করছি।

বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওমীলীগের সাধারষ সম্পাদক কামরুজ্জামান জুমান বলেন, মাঠটি থাকা যেমন জরুরি তেমনি অসহায় মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন চাই। বিষয়টি  এখন আইনি পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঁঞা বলেন, মাঠের ক্ষতি করে নয় এক পাশে প্রধানমন্ত্রীর এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। এতে মাঠের কোন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া এলাকাবাসীর সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন গিয়ে বৈঠক করেছেন। তার পরও নির্মাণাধীন কাজ ভেঙ্গে ক্ষতি করা হয়েছে। খবর পেয়ে স্থানীয় এমপি অসীম কুমার উকিল, নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁঞা, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম, ওসি আলী হোসেন, নেত্রকোনার এডিসিসহ আমরা গিয়ে এলাকার গণ্যমান্য মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এখন আবার মানববন্ধন কেন ?

মানববন্ধনের মূল সমন্বয়ক মামুনুল কবির খান হলি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিরাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং সাধারণ সম্পাদক, আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন (বাসক), কেন্দুয়া উপজেলা শাখা, নেত্রকোনা তার বক্তব্যে বলেন, নেত্রকোনা জেলাধীন কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের শতবর্ষী খেলার মাঠটি রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরকারি খাস জমির পরিমান ৮৪ একর, তন্মধ্যে বলাইশিমুল গ্রামেই সরকারি খাস জমির পরিমাণ ১০ একর, ৩ একর ৬৭ শতাংশ জমি কান্দা যা বাড়ি করার উপযোগী।

প্রয়োজনে গ্রামের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার  আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জায়গা কিনে দিতেও প্রস্তুত। খেলার মাঠ ঠিক রেখে অন্যত্র আশ্রয়ন প্রকল্প হোক এটাই জনতার চাওয়া। প্রশাসন এবং জনতার মাঝে  সাংঘর্ষিক কোন কিছু কাম্য নয়, চাই সুন্দর একটি সমাধান।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image