আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদিভূমি গুজরাট। ভারতের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির আদিভূমি গুজরাট। সেই রাজ্যে বিপুল জয় তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে মোদিকে এগিয়ে রাখল বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির।
ভারতের গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে রেকর্ড সৃষ্টি করে জয়ী হয়েছে বিজেপি। মোট ১৮২ আসনের মধ্যে ১৫৬টিতে জয় পেয়েছে দলটি। রাজ্যের ভোটের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনো দল এত আসন পায়নি। অন্যদিকে রাজ্যটিতে মাত্র ১৭ আসন পেয়েছে কংগ্রেস। হার মেনে নিয়ে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন দলটির সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। তবে গুজরাটে হারলেও হিমাচল প্রদেশে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যটিতে ৬৮ আসনের মধ্যে ৪০টিই গেছে উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরোনো এই দলটির ঘরে।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ফল ঘোষণার শুরু থেকেই সবার মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল: এই ফলাফল কি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির কাছে বড় ভিত তৈরি করে দিলো? প্রধানমন্ত্রী মোদির নিজের আসন হওয়াই সেখানে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়া তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এদিকে হিমাচল প্রদেশে সরকার ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। রেওয়াজ মেনে শাসক বদলে নিয়েছে রাজ্যটি। কিন্তু গুজরাটের জয়ে যে আলো ছড়িয়েছে, তাতে হিমাচলে হারের আঁধার ঢেকে গিয়েছে।
বিজেপির ধারণা, তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ অনেকটাই প্রশস্ত করে দিয়েছে গুজরাট। আগামী বছরেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। তার জন্যও গুজরাটের ফল অনেকটা অক্সিজেন দিলো মোদি তথা বিজেপিকে।
২০০১ সালে গুজরাটে প্রশাসক হিসেবে উত্থান মোদির। টানা ১২ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ২০২১ সালেই প্রশাসক মোদির ২০ বছর পালন করেছে বিজেপি। ঠিক তার পরই কোনো কালে যে ফল গুজরাটে হয়নি সেটাই করে দেখালেন মোদি। দলের নেতারাও মনে করছেন, বিজেপি নয়, আসলে এই জয় মোদিরই।
তাকে সামনে রেখেই নির্বাচনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে দলটি। স্লোগানে বারবার বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ফের ভূমিপুত্র নরেন্দ্রভাইকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে হলে গুজরাটে নজির সৃষ্টি করতে হবে। কর্মীদের চাঙা করা থেকে ভোটারদের আর্জি জানানো–সবখানে এটাই ছিল বিজেপির মূল স্লোগান।
মোদি নিজেও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। গুজরাটের ১৮২টি আসনের মধ্যে ৩১টিতে বড় সমাবেশ করেছেন মোদি। যোগ দিয়েছেন তিনটি বড় শোভাযাত্রায়। প্রচারে সময় দেয়া দেখে বোঝা যায়, গুজরাটের ভোটকে নিজের লড়াই হিসেবে দেখেছেন মোদি। তার সঙ্গে সর্বক্ষণ ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তারও নিজের রাজ্য গুজরাট।
গুজরাটে অনেক বেশি সময় কাটিয়েছেন অমিত শাহ। তাকে বিভিন্ন বুথ স্তরের বৈঠকেও দেখা গিয়েছে। আবার প্রচারের যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করেছেন। প্রচার বইয়ে কী লেখা হবে, তা-ও দেখেছেন অমিত শাহ। গুজরাটে ফল ভালো করতে না পারলে বাকি প্রদেশেও যে এর প্রভাব পড়বে, তা আগে থেকে ভেবে রেখেছিলেন অমিত শাহ। এ জন্য নির্বাচন পরিচালন কমিটি থেকে শুরু করে দলের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আনেন।
নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই বিজয় রূপাণীকে সরিয়ে ভূপেন্দ্র পাটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করার পাশাপাশি রাজ্য সভাপতি হিসেবে জিতু ভাঘানিকে সরিয়ে সিআর পাটেলকে আনেন শাহ। বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)। বিধানসভা নির্বাচনের পরিকল্পনার প্রথমেই ২০২১ সালে ওই পদে ১৩ বছর থাকা ভিখুভাই দালসানিয়াকে সরিয়ে আনা হয় রত্নাকরকে। তিনিই এবারের ভোট পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন।
টানা ক্ষমতায় থাকায় বিরোধীদের রোষানলে পড়ে দলটি। এ জন্য প্রার্থী বাছাইয়ে অনমনীয় ছিল বিজেপি। ৪১ জন বিধায়ককে এবার মনোনয়ন দেয়নি দলটি। প্রচারে মোদি-শাহর পাশাপাশি ছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ ছাড়া আশপাশের রাজ্যগুলো থেকে মন্ত্রী, নেতাদের প্রচারে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় মোদিকে ‘উন্নয়নের কারিগর’, ‘গুজরাটের হীরা’, ‘দেশের গর্ব’; আবার কোথাও ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। আসলে সব মিলিয়ে একা মোদির নামেই গুজরাটকে বাজি ধরেছিল বিজেপি। ‘মোদি-ম্যাজিক’ কাজ করবে ধরে নিলেও ‘শাহ-স্ট্র্যাটেজি’ যাতে একটুও এদিক-ওদিক না হয়, সেদিকেও ছিল কড়া নজর।
আরও পড়ুন: চায়ের আড্ডা, বিরোধীদের সঙ্গে মোদির হাসি-ঠাট্টা-করমর্দন
১৯৯৮ সাল থেকে টানা গুজরাটের ক্ষমতায় বিজেপি। সবশেষ ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে গুজরাটে ৯৯টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে দলটি। ওটাই ছিল বিজেপির পাওয়া সবচেয়ে কম আসন। ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, গুজরাটে প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। গুজরাটে আগামী ১২ ডিসেম্বর শপথ নিতে পারেন বিজেপির নবনির্বাচিত বিধানসভার সদস্যরা। রাজ্যটিতে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: