• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যে তিন পরিণতির দিকে যাচ্ছে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫০ এএম
ফ্লোরেন্ট পারমেন্টিয়ার ও সিরিল ব্রেট
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

ফ্লোরেন্ট পারমেন্টিয়ার ও সিরিল ব্রেট

যুদ্ধক্ষেত্রে জয়-পরাজয়ের ফয়সালার বিষয়টি থমকে গেলেও ইউক্রেনে লড়াই কিন্তু থেমে নেই। পূর্ব দনবাসের বাখমুত শহরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে মস্কো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষকদের মতে, ওই অঞ্চলে লড়াই করতে গিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে রাশিয়ার সামরিক ভাণ্ডারে বেশ ভালো টান পড়েছে। প্রতিদিন শত শত রুশ সেনা হতাহত হচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুদ্ধের যে গতিপ্রকৃতি সেটাকে অচলাবস্থা বলা চলে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক বছর হতে চলেছে। রাশিয়া বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক এই সংঘাতের গতিপ্রকৃতি আগে থেকে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, ভ্লাদিমির পুতিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঠেকাতে ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করেছেন। তাঁরা বলতেন, এটা মস্কোর ‘ভারী ধাতব কূটনীতি’। কিন্তু অনুমান ব্যর্থ প্রমাণ করেই রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করে।

এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধ সামরিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত অনেক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। লড়াইয়ের প্রতি ইউক্রেনীয় বাহিনীর দৃঢ়সংকল্প এবং কিয়েভের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন একদিকে মস্কোকে বিস্মিত করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা যে নিষেধাজ্ঞার কূটনীতি প্রয়োগ করেছে, তা বাস্তবায়নের পথে চীন, ভারত ও আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ অন্তরায় হয়েছে।

পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রধান লক্ষ্যটি ছিল রাশিয়াকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে দেওয়া। কিন্তু রাশিয়া ভালোভাবেই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সামলেছে। যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপের অনেক দেশ তাদের আগেকার রক্ষণশীল অবস্থা পাল্টে ইউক্রেনীয় অভিবাসীদের মুক্তহস্তে আশ্রয় দিয়ে চলেছে। আমাদের মূল্যায়নে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য তিন পরিণতি হতে পারে।

এ বিষয়গুলো যদি ঘটতেই থাকে, তাহলে সেটা ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে খারাপ হবে। তাতে করে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাদের অস্ত্রের জোগানও কমে আসতে পারে। বিষয়টি জেলেনস্কি সরকারকে দুর্বল করে দিতে পারে। জাতীয়তাবাদী শক্তি ও কথিত ‘শান্তি দল’-এর চাপ তাতে বাড়বে। পশ্চিমা সমর্থন পাওয়া ও পশ্চিমা মতামত বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়ে যাবে ইউক্রেন সরকার।

এক. রাশিয়া বড় ধাক্কা খেতে পারে

রাশিয়া সম্প্রতি কিয়েভ, দনবাস ও খেরসনে নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। এরপর ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ব্যর্থ হতে পারে। কেননা, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অবৈধভাবে যে চারটি অঞ্চল নিজেদের অধিকারে নিয়েছিল, সেখানকার অনেক ভূখণ্ড তাদের হাতছাড়া হয়েছে। তাদের অনেক সৈন্য হতাহত হয়েছেন।

কিয়েভে সরকার পরিবর্তনের যে লক্ষ্য প্রথম দিকে মস্কো নিয়েছিল, সেই কৌশলগত অবস্থান তাদের পাল্টাতে হয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়ার অনেকগুলো শক্ত ঘাঁটি পুনর্দখলে নিয়েছে এবং ক্রিমিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে।

রাশিয়ার এই পরাজয় বেশ কিছু কারণে আরও ত্বরান্বিত হতে পারে। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ দিকটা বিবেচনা করা যাক। বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে কি না, সেই ভয়ে দেশটির সক্ষম তরুণেরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় নতুন করে সেনা নিয়োগ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। নতুন নিয়োগ করা সেনাদের কার্যকর প্রশিক্ষণ দিতে না পারায় রুশ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে ভালো বেকায়দায় পড়েছে। তাদের প্রতিরক্ষাপ্রযুক্তি ও শিল্প ভিত্তিও সংকটে পড়েছে। এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তার কামড় বসিয়ে চলেছে, সংকটটা এখন রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণির ভেতরেও ছড়িয়ে পড়েছে।

ইউক্রেন এ সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে বেশ কিছু কারণে। প্রথমত, দেশটির জনগণ এখন যুদ্ধের ভয় ও বিভীষিকা সয়ে নিয়েছে। ২০২৩ সালের শরৎকালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগপর্যন্ত দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিরাজ করবে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা নিয়মিত পেয়ে চলেছে, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী বেশ কিছু ফ্রন্ট নিজেদের কবজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

অন্যদিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখায় আন্তর্জাতিক মহলে রাশিয়ার অবস্থান অনেকটাই কমেছে। এ প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার জ্বালানির ক্রেতাদের বিকল্প বাজার খুঁজতে হয়েছে।

ঘটনাপ্রবাহ একটা যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দিতে পারে। কালক্রমে সেটা সত্যিকারের শান্তি আলোচনায় সুযোগ সামনে নিয়ে আসতে পারে। ইউক্রেন মনে করছে, বিজয় হলো তাদের পুরো ভূখণ্ড রাশিয়ার কবজা থেকে মুক্ত করা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাশিয়াকে বিচার ও মস্কোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা।

যাহোক, পরাজয়টা যদি অনেক বড় হয়, তাহলে রাশিয়ায় রাজনৈতিক অরাজকতা সৃষ্টি হবে। তাতে করে দেশটির নেতৃত্ব ভেঙে পড়বে এবং মস্কোয় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এর ফলে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।

দুই. রাশিয়া অল্পস্বল্প সাফল্য পেতে পারে

শীত শেষে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত একটা দৃশ্যপট দেখা যাচ্ছে। খেরসন প্রদেশের বেশির ভাগ অঞ্চল তারা পুনর্দখলে নিয়েছে। এর ফলে বেলারুশ দিয়ে সরাসরি কিয়েভে হামলার হুমকি তৈরি হয়েছে। তবে সেটা করতে গেলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ হতে হবে। যেমন ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম ফুরিয়ে আসতে হবে।

রাশিয়ার বিবেচনায় ক্রেমলিন এ যুদ্ধে এমন কিছু অর্জন করতে পেরেছে, যেটা দীর্ঘদিন ধরেই তারা ব্যর্থ হয়ে এসেছে। ২০২২ সালের শরতে তারা সফলভাবে নতুন সেনাদের প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সফলভাবে তাদের নিয়োগ দিতে পেরেছে। তিনটি প্রধান ফ্রন্টে সরবরাহ শৃঙ্খলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পেরেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ থেকে শিক্ষা নিয়ে রুশ বাহিনী অত্যাধুনিক রকেট সিস্টেম হিমার্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের নাগাল থেকে নিজেদের সামরিক ভান্ডার দূরে সরিয়ে রাখতে পেরেছে।

এ সাফল্যের সঙ্গে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তাদের দখলে নেওয়া চারটি অঞ্চলে যদি তারা রুশপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে সেটা সুস্পষ্টভাবে রাশিয়ার জয়। মস্কোর বিবেচনায় দেশ পুনর্গঠনের জন্য যে ধরনের ঐক্য দরকার, তার ঘাটতি রয়েছে ইউক্রেনের নাগরিকদের মধ্যে।

এ বিষয়গুলো যদি ঘটতেই থাকে, তাহলে সেটা ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে খারাপ হবে। তাতে করে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাদের অস্ত্রের জোগানও কমে আসতে পারে। বিষয়টি জেলেনস্কি সরকারকে দুর্বল করে দিতে পারে। জাতীয়তাবাদী শক্তি ও কথিত ‘শান্তি দল’-এর চাপ তাতে বাড়বে। পশ্চিমা সমর্থন পাওয়া ও পশ্চিমা মতামত বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়ে যাবে ইউক্রেন সরকার।

সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিসরে এশিয়ায় তাদের জ্বালানি রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পারবে রাশিয়া। বড় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক হওয়ায় এর দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা থেকেই যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলায় চীনের জোরালো সমর্থনে মস্কো তার কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক পুরোটাই কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। তাহলে পোল্যান্ড ও উত্তর ইউরোপের ইউক্রেনের পক্ষের সরকার সংকটে পড়ে যাবে। রাশিয়ার ধাক্কা যদি মোক্ষম হয়, তাহলে তাইওয়ানে যে ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, পূর্ব ইউরোপেও একই ধরনের সংকট দেখা দেবে।

তিন. দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হতে পারে

যুদ্ধের তৃতীয় ফলাফল হতে পারে, জয় বা পরাজয়ের সক্ষমতা দুই পক্ষের কারোরই হলো না। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে সারা বিশ্বকেও ভুগতে হবে।

ফ্লোরেন্ট পারমেন্টিয়ার সায়েন্সেস পিওর সেন্টার ফল পলিটিক্যাল রিসার্চের মহাসচিব

অনুবাদক  সিরিল ব্রেট সায়েন্সেস পিওর ভূরাজনীতি বিশ্লেষক

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image