
নিউজ ডেস্ক: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এদেশের মানুষ এখনো মুক্তি পায়নি। যে মুক্তির ডাক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দিয়েছেন, সে মুক্তির স্বাদ স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা এখনো পাইনি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটশন বাংলাদেশের মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের শেষে বঙ্গবন্ধুর সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এখানে যে স্বাধীনতার কথা তিনি বলেছেন, সে স্বাধীনতা একাত্তরেই অর্জন করেছিলাম। কিন্তু যে মুক্তি কথা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তা এখনো অর্জিত হয়নি।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা’ আর ‘মুক্তি’ এক নয়। মুক্তির গভীর অর্থ রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়নি। সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
রেহমান সোবহান বলেন, সমতাভিত্তিক বণ্টন ব্যবস্থা বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। বাজার ব্যবস্থায়ও অসমতা রয়েছে। এর ফলে বৈষম্য বাড়ছে। কৃষি পণ্য উৎপাদন করেও কৃষক কিছু পাচ্ছে না। অন্যদিকে যারা কিছু করছে না, তারাই সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে।
দীর্ঘ ৫০ বছরেও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, সকল নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক হওয়া দরকার। সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পরিষদে সকল শ্রেণীর সকল মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকা দরকার। অথচ আমরা দেখি, সংসদের ৭০ শতাংশ সদস্যই ব্যবসায়ি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায়ও তাই।
ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন রাজনীতিতে পদ পদবি, তা যাই হোক, তা-ই লাভজনক। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত হতে এত তোড়জোড়।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হতে যাচ্ছে দেশ। এটা অবশ্যই বড় অর্জন। তবে শুধু অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে নয়, এখন সব মাপকাঠিতেই আমাদের উন্নতি দৃশ্যমান হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমিতে আমূল সংস্কার দরকার। সরকারি খাস জমি ও জলার অধিকার দরিদ্র মানুষের কাছে যাওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারাকাত বলেন, রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোই এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি। এ কাঠামো খুবই অন্যায্য। এ কাঠামো ধনীকে তোষণ করে, গরিবকে করে শোষণ।
তিনি বলেন, সমাজে, রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার করার বাংলাদেশের সংবিধানের ভূমিকাতেই বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখি না।
বাজার অর্থনীতির নৈরাজ্য প্রসঙ্গে আবুল বারাকাত বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা কদাচিৎ মিলিত হন। যখন দেখা সাক্ষাত হয়, তারা পণ্যের দর কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তার কৌশল জেনে যান।
দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য অর্থনীতি সমিতি আবুল বারাকাতকে মুজিব স্বর্ণপদক প্রদান করেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: