মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়ন পরিষদ মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও ৩নং ইউপি সদস্য আবুল কালামের।
ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, 'চালা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দু'তলায় একটি রুমে খাট পেতেছে। পরিষদের চাবি চেয়ারম্যানের লোকেদের কাছে থাকায় রাতের বেলায় তারা ওইখানে মাদক সেবন করে।
গত ২'জুন চেয়ারম্যানের লোক বক্কার বেপারী কে দু'তলায় বারান্দায় খোলা-খুলি ভাবে গাঁজা সেবন করতে দেখে আমি তাকে বলি আপনি পরিষদের মধ্যে এই সব খাচ্ছেন কেন? বাইরে গিয়ে খাইতে বলি তখন বক্কার বলে, ইউনিয়ন পরিষদ কি তোর নাকি? চেয়ারম্যান তো আমাকে কিছু বলে না তোর সমস্যা কি? এই কথার পর আমি নিচে নেমে আসি। নিচে আসার পর বক্কারের সাথে অন্য বিষয়ে কথা কাটা-কাটি হয়, এক পর্যায়ে আমি তার শার্টের কলার ধরি। তার কলার ধরায় আমার ভুল হয়েছে বলে তার কাছে ক্ষমাও চাই।
গত ৫'জুন তার তিন ছেলে মনির, রবিন, আশিক ও তার ভাই মোবারক পরিকল্পিত ভাবে আমাকে হত্যা করার জন্য এলোপাথারী ভাবে কিল ঘুষি ও লাথি মেরে আমার কাছে থাকা এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা নিয়ে যায়।এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, দু'তলায় চেয়ারম্যানের বিশ্রাম কক্ষে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ লোক শুয়ে সিগারেট খাচ্ছে এবং মুঠো ফোনে অশ্লীল ভাবে কথা বলছে।
চেয়ারম্যানের বিশ্রাম রুমের বিষয়টি চালা ইউপি সচিব (বাসেদের) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান যখন বিশ্রাম নেয় তখন রুম টি খোলা হয়। রুমের চাবির ব্যপারে বল্লে তিনি বলেন, চাবি চেয়ারম্যানের কাছে থাকে। পরিষদে চেয়ারম্যানকে না দেখতে পাওয়ায়, চেয়ারম্যান এখন নেই তবুও তার বিশ্রামের রুম খোলা কেন? প্রতিবেদক প্রশ্ন করলে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তবে সচিব ৫'জুনের ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, চেয়ারম্যান যদি ২'জুন ঘটে যাওয়া ঘটনার সমাধান করে দিত তবে আজ এই ঘটনা ঘটত না বলে মনে করেন তিনি।
বক্কর বেপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি গাজার বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে কালাম আমাকে চেয়ার থেকে ঘুষি মেরে ফেলে দিয়েছে। আবার আমার হাত ধরে ক্ষমাও চেয়েছে। সেদিন এক সাথে আমরা বল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। কালামের প্রতি আমার কোন রাগ ছিল না আমি বিষয়টি কারো কাছে বলিনি। তবে আমার ছেলেরা কোথা থেকে যেন শুনেছে।ছেলেরা আমাকে চাপ দেওয়ার পর তাদের কে বিষয়টি বললে রাগের মাথায় কালামকে তারা মেরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের ৩ জন এবং পরিষদের এক গ্রাম পুলিশ সদস্য বলেন, চেয়ারম্যানের বিশ্রাম কক্ষে কি হয় জানি না তবে রাতের বেলায় পরিষদের মধ্যে আড্ডা হয় এবং বক্কার নেশা করে বলেও জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ইউপি সদস্য বলেন, চেয়ারম্যানের লোকেরা পরিষদে দাপট দেখিয়ে বেড়ায়। তার লোকদের কারণে চেয়ারে পর্যন্ত বসতে পারেনা ইউপি সদস্যরা। ইউপি সদস্যদের পার্সনাল মিটিং এ চেয়ারম্যানের লোকেরা থাকে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের চেলাদের থেকে রেহায় পেতে চান ইউপি সদস্যরা।
এদিকে প্রতিবেদক চালা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদের বক্তব্যের জন্য মুঠোফোনে কল করলে তিনি পরিষদে বসতে বলেন এবং প্রায় চার ঘন্টা অপেক্ষার পরও তার কোন খবর পাওয়া না গেলে প্রতিবেদক তার পরবর্তীদিন মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের লোক বক্কার বেপারীর ছেলেদের মারধরের ঘটনা শিকার করেন। তিনি আরো বলেন, আমি একজন চেয়ারম্যান হিসেবে যা করার তা করেছি। আব্দুল কালামকে হাসপাতালে ভর্তি করে ৫ হাজার টাকা চিকিৎসার বিল দিয়েছি। তারা দু'জনেই আমার কাছের লোক আমি কি বিচার করব? বিশ্রাম কক্ষে রাতে নেশা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, আমি এবং আমার পরিবারের কেও সিগারেট খায় না। বিশ্রাম কক্ষের চাবি আমার কাছে থাকে। আমি যখন কক্ষে বসি তখন হয়তো আমার লোকেরা সেখানে গিয়ে বসে।
সরেজমিনের দেখা দু'তলার চেয়ারম্যানের বিশ্রাম কক্ষে তার ঘনিষ্ঠ লোক শুয়ে সিগারেট খাওয়া এবং মুঠো ফোনে অশ্লীল কথা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, আমি পরিষদ থেকে আসার সময় তখন তিনি আমার সাথে রুমে ছিলেন এর জন্য তাকে রুমে দেখেছেন। কে গাঁজা খায় কি করে এগুলো আমার দেখার বিষয় না। তবে রাত আটটা - নটা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের কাজ চলে কেও কেও রাতে জন্ম নিবন্ধের কাজ করতে আসে তারা কেও হয়তো সিগারেট খেতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে হরিরামপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) রুস্তম আলী জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / সাকিব আহমেদ/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: