• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

গতবছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৯৫১ জন, আহত ১২৩৫৬


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ০২ জানুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৩০ পিএম
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৯৫১ জন, আহত ১২৩৫৬
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি"র আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার, জহিরুল ইসলাম সানি : বিদায়ী ২০২২ সালে ৬৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৯৫১ জন এবং আহত ১২৩৫৬ জন। একই সময়ে রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত, ৩৫৭ জন আহত এবং ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৭৬১৭ টি দুর্ঘটনায় ১০৮৫৮ জন নিহত এবং ১২৮৭৫ জন আহত হয়েছে।

সোমবার (০২ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে "বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি"র আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। 

এতে দেখা গেছে, বিদায় ২০২২ সালের ৬৭৪৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৯৫১ জন নিহত, আহত হয়েছেন ১২৩৫৬ জন। ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯.৮৯ শতাংশ ও প্রাণহানী ২৭.৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ০৮ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজি-বাইক, মোটর-সাইকেল থ্রী- হুইলার সরকারী আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলের কারণে বিগত ০৮ বছরের বিদায়ী ২০২২ সালের সড়কে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৩০৯০ জন চালক, ১৫০৩ জন পথচারী, ৭৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১৩২ জন শিক্ষক, ২৮৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১১৫০ জন নারী, ৭৯৪ জন শিশু, ৪৪ জন সাংবাদিক, ৩১ জন চিকিৎসক, ১৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০৫ জন শিল্পী, ০৯ জন আইনজীবী ও ২৯ জন প্রকৌশলী এবং ১৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছে ১১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ২৭ জন সেনা সদস্য, ৬২ জন পুলিশ সদস্য, ০২ জন র্যাব সদস্য, ০৯ জন বিজিবি সদস্য, ০৫ জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ০৮ জন আনসার সদস্য, ০২ জন ডিজিএফআই সদস্য, ০১ জন বিমান বাহিনীর সদস্য, ০১ জন সিআইডি, ০১ জন এনএসআই সদস্য, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ জন সাংবাদিক, ৭০৩ জন নারী, ৫৮৮ জন শিশু, ৬৬৬ জন শিক্ষার্থী, ১১৭ জন শিক্ষক, ২৩৮৩ জন চালক, ৪২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৭ জন প্রকৌশলী, ০৯ জন আইনজীবী, ১৩৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩১ জন চিকিৎসক।

এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৯৬১৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, তার ১৩.৯৫ শতাংশ বাস, ২৪.৫০ শতাংশ  ট্রাক-পিকাপ-কাবার্ডভ্যান ও লরি, ৬.৯৫ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৬.২২ শতাংশ সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ২৮.৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১.৪২ শতাংশ ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৮.৩২ শতাংশ নসিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫২.৫৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২১.৬১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮.৬৩ শতাংশ বিবিধার কারণে, ০.৪০ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেচিয়ে এবং ০.৯৯ শতাংশ ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত ২০২১ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২২ সালের ১.৫২ শতাংশ গাড়ি চাপা, ০.৫৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ০.১৩ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেচিয়ে, ০.৩৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা কমেছে এবং ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০.১২ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ শালের তুলনায় ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ৩.১৯ শতাংশ বাস, ৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২.৭৪ শতাংশ ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক, ২.৫১ শতাংশ সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ০.৭৮ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ৫.৯২  শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১.৩২ শতাংশ নসিমন -মাহিন্দ্রা-লেগুনা দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে।

দূর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই বছর মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৭.৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১১.৮৮ শতাংশ ফিগার রোগে সংঘঠিত হয়েছে।

এছাড়া ও সারাদেশ সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.৬৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৭১ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, ০.৯৯ শতাংশ রেল ক্রসিং এ সংঘঠিত হয়েছে।

বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়া ও এসব যানবাহন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে  আঞ্চলিক মহাসড়কে ১২.৭৩ শতাংশ, জাতীয় মহাসড়কে ৩.৮১ শতাংশ, রেলক্রসিং-এ ০.১৬ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ফিডার রোডে ৮.৪৬ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।

এ সময় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয়েছে (১৫ জুলাই), এই দিনে ৩৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও আহত ৯৭ জন।

সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, (০৬ সেপ্টেম্বর), এই দিনে ৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ১২ জন নিহত ও আহত ১৩ জন।

সড়ক দুর্ঘটনা একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে (২৯ জুলাই), এই দিনে ২৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত ও আহত ৮৩ জন।

সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে (১১ জুলাই), এই দিনে ২৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও আহত ১২৪ জন।

সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে, (১১ জুলাই), এই দিনে ২৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও আহত ১২৪ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কানন সমূহ - (১) বেপরোয়া গতি (২) বিপদজনক অভারটেকিং (৩) রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি (৪) ফিটনেস বিহীন যানবাহন অবাধে চলাচল (৫) জাতীয় পথচারীদের অসতর্কতা (৬) চালকের অদক্ষতা (৭) চালকের বেপরোয়া মনোভাব (৮) চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার (৯) মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো (১০)  রেল ক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা (১১) রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা (১২) ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ (১৩) ট্রাফিক আইন অমান্য করা (১৪) ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি (১৫) সড়কে চাঁদাবাজি (১৬) রাস্তার পাশে হাট-বাজার (১৭) ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো (১৮) মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা (১৯) চালকের নিয়োগ ও কর্ম-ঘন্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা (২০) দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিক্সা-মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণ-পরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেপরোয়া ভাবে বাড়ছে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সেভ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট এলায়েন্সের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন প্রমুখ।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image