নিউজ ডেস্ক: আজ ৪ জুন, জাতীয় চা দিবস। ‘চা দিবসের সংকল্প, সমৃদ্ধ চা শিল্প’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ বিভিন্ন কর্মসূচিতে পালন করা হবে দিবসটি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বোর্ডে প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে ৪ জুন ১৯৫৭ থেকে ২০ অক্টোবর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের জন্য ৪ জুনকে জাতীয় চা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশের চা শিল্পের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে রামগড় চা বাগানের। লোকসানের ভারে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া অতিরুগ্ন এ চা বাগানটি ২০০৪ সালে মালিকানা বদলের পর অল্প কয়েক বছরের মধ্যে পুরোপুরি পাল্টে যায়।
২০০৪ সালে মাত্র আড়াই লাখ কেজি চা যেখানে উৎপাদন হতো, এখন প্রায় চারগুণ বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ কেজি। গুণগতমান ও উৎপাদনে বাগানটি স্থান করে নিয়েছে দেশের শীর্ষ বাগানের তালিকায়। জাতীয় গড় উৎপাদনের পরিমাণের চেয়ে প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয় এখানে। তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের গ্রিন টি ও হোয়াইট টি। বাগানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নতি সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশনসহ সার্বিক জীবনযাত্রার মান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এ বাগানটি এখন পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বাগানের আয়তন প্রায় ১৪০০ একর। চা প্লান্টেশন রয়েছে প্রায় ৮০০ একরে। মুখার্জি পরিবার থেকে ২০০৪ সালে বাগানের মালিকানা কিনে নেয় পেড্রোলো গ্রুপ। অব্যবস্থাপনায় বাগানটি অতিরুগ্ন হয়ে পড়ার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকসানের কবলে পড়ে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল বাগানটি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শ্রমিকদের মজুরি-রেশন বকেয়া পড়ে যায়। মারাত্মক লোকসানের কবলে পড়ে বাগানটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে ২০০৪ সালে পেড্রোলো গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেন মূখার্জি পরিবার। মৃতপ্রায় বাগানটি কিনে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ শুরু করে তারা। পুরাতন চা গাছগুলো তুলে রোপণ করা হয় উচ্চ ফলনশীল জাতের উন্নত চায়ের চারা। ধীরে ধীরে পুরো বাগানে ভূ-গর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে স্থাপন করা হয় সেচ ব্যবস্থা।
পরিকল্পনা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও নিরলস পরিচর্যা ও যত্নে নষ্ট বাগানটিতে লাগে প্রাণের ছোঁয়া। নির্মাণ করা হয়েছে বিশালায়তনের অত্যাধুনিক অটোমেটিক মেশিনে চা তৈরির কারখানা। বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খানের চেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমই মৃতপ্রায় বাগানটিকে আজ দেশের সেরা বাগানের তালিকায় নিয়ে গেছে।
সিনিয়র ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘উন্নতমানের চা উৎপাদনের পাশাপাশি চা চাষের অনুপযোগী স্থানে ভিয়েতনামের বিখ্যাত বারোমাসি কাঁঠাল চাষের অভাবনীয় সাফল্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। ভিয়েতনামী নারিকেল চাষ ছাড়াও মৌ চাষেও সফলতা এসেছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করায় বাগানের লেকে সারাবছরই অতিথি পাখি অবস্থান করে। পাখপাখালির নিরাপদ বসবাসের জন্য গাছে গাছে কাঠের বাসা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। লেকে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন জাতের দেশীয় মাছ চাষ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে জনাব নাদের খান অত্যন্ত আন্তরিক। তাদের উন্নত আবাসন ব্যবস্থা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি কল্যাণকর কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: