জাহিদুল হক মনির, শেরপুর প্রতিনিধি: বিয়ের ছয় মাসে আমার স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমার সব শেষ হয়ে গেল। এই পৃথিবীতে আমি একা হয়ে গেলাম। আমার একটা সন্তান থাকলে তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারতাম।
মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল ১০টায় নিজ গ্রাম শেরপুর সদরের হেরুয়া বালুরঘাট এলাকায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম রনির রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন শেষে সাংবাদিকদের এভাবেই বলেন ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম রনির স্ত্রী রুপা আক্তার।
নিহত রনির স্ত্রী রুপা আক্তার বলেন, ‘বিয়ের মাত্র ছয় মাসেই স্বামীর মৃত্যুতে আমি সর্বশান্ত। আমার ভবিষ্যতের জন্য রনি কিছুই রেখে যেতে পারল না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ভবিষ্যৎ ভিক্ষা চাই।’
বিয়ের মাত্র ছয় মাসেই বিধবা হয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রুপা আক্তার। দেড় বছর আগে চাকরি পেয়ে ছয় মাস আগে বিয়ে করেছেন ফায়ার ফাইটার রনি। তিন মাস আগে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে যোগদান করে স্ত্রী রুপাকে নিয়ে ফায়ার সার্ভিস কোয়ার্টারেই থাকতেন।
ঘটনার দিন রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রনি। রাত দুইটায় ডিউটি থাকলেও রাত ১১টায় স্টেশনের জরুরি সংকেত (ফায়ার বেল বেজে উঠলে) পেয়ে সাদা গেঞ্জি পড়েই বেরিয়ে আসেন তিনি৷ এরপর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ হন।
এদিকে শনিবার (৪ জুন) খোঁজ না পেয়ে রনির স্ত্রী প্রথমে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খোঁজ নিলে রনি আহত হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এসে রনিকে খুঁজে না পেয়ে মেডিকেল চত্বরেই সারারাত অপেক্ষা করেন তার স্ত্রী রুপা আক্তার। পরে রবিবার (৫ জুন) সকালে রনির পড়নের গেঞ্জি দেখে মরদেহ সনাক্ত করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ছয়টায় রনির মরদেহে এসে পৌঁছায় শেরপুরের হেরুয়া বালুঘাটা এলাকায়। মরদেহ পৌঁছার পর থেকেই স্থানীদের ভিড় বাড়ে তার বাড়িতে। এ সময় শেরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তারা তাকে গার্ড অব অনার ও শ্রাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজের দায়িত্বে ছিলেন রনির চাচা মুফতি নজরুল ইসলাম আজাদী। জানাজায় রনির আত্মীয় স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / জাহিদুল হক মনির/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: