• ঢাকা
  • সোমবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

স্বৈরাচার সরকারের দুঃশাসনের বিচার এদেশের মাটিতে হবে: গণফোরাম


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৯ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:২১ পিএম
গণফোরাম এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভা
গণফোরাম

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম এর প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে গণফোরাম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সুদীর্ঘ ৩১ বছর ধরে মানুষের জন্য রাজনীতি করছে গণফোরাম। এখানে যারা পরিক্ষিতরা আছেন ছাত্র জনতার অবিস্মরণীয় গণ অভ্যুত্থানে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি দেশে প্রতিষ্ঠা করার যে সুযোগ এসেছে আমরা তা কাজে লাগাবো। যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে, টাকা দিয়ে ভোট কিনে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলেও পালিয়ে যেতে হয়। জনগণের রাজনীতি যারা করে তাঁদের কখনো পালাতে হয় না। আমরা আছি, আমাদের পালাতে হবে না, এদেশের মাটিতেই আমার কবর হবে। আমরা জনগণের উপর নিপীড়ন নির্যাতনের রাজনীতি করবো না যা করলে পালিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশের জনগণ স্বৈরাচারদের যুগে যুগে এই শিক্ষা দিয়েছে, জনগণের ক্ষমতা জবরদখল করলে তাকে পালিয়ে যেতে হয়।

২৯ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০:৩০ টায় গণফোরাম এর ৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত হয়।

সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জননেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু। সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সময় এসেছে। ৫২ ভাষা আন্দোলনে সালাম-বরকতদের রক্তের বিনিময়ে, ৬৯ আসাদ-মতিউরের রক্তের বিনিময়ে, ৯০ নূর হোসেন-বাবুলদের রক্তের বিনিময়ে এবং সর্বশেষ ২০২৪ রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লবে আবু সাঈদ, পানি লাগবে পানি লাগবে বলতে বলতে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া জনগণের বিজয়কে এদেশের তরুণ রা হাতে হাত এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমুন্নত রেখে শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বে। বিগত ১৫ বছর ধরে দানবীয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনকালে প্রতিটা দুর্নীতি, লাঠির বারী, গুলি, মিথ্যা মামলা, হত্যা, গুম, অত্যাচারের বিচার এদেশের মাটিতে হবে। চুরি করে পাচার করা সব অর্থ ফেরত আনতে হবে, যতদিন অর্থ ফেরত না আনা হবে কারাগারে নিক্ষেপ করে রাখতে হবে যাতে চুরির অর্থ ভোগ করতে না পারে।

আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেণ সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। নিম্নে সুব্রত চৌধুরীর পঠিত বক্তব্য সংযুক্ত করা হলঃ-
“ঐক্যবদ্ধ গণফোরাম”

২৯ আগষ্ট ২০২৪ গণফোরাম এর ৩১তম প্রতিষ্ঠা দিবসে যৌথ ঘোষণা-জাতীয় প্রেসক্লাব।

১৯৯৩ সনের ২৭-২৯ আগস্ট ৩দিনব্যাপী সারা বাংলাদেশের সচেতন, প্রগতিশীল জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংগঠন এবং সমাজের সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে এক রাজনৈতিক জাতীয় কনভেনশন ও কর্মশালার আয়োজন করে। জাতীয় কনভেনশনের সমাপ্তি ২৯শে আগষ্ট ১৯৯৩ অংশগ্রহণকারী সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে গণফোরাম এর আত্মপ্রকাশ হয়। সুদীর্ঘ ৩১ বছর “গণফোরাম” এর অগণিত নেতা-কর্মী মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ে এবং ড. কামাল হোসেন এর আপোষহীন নেতৃত্বের কারণে “গণফোরাম” আজকে দেশের সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থেকে একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক এবং আদর্শিক দল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি জুলাই ২০২৪ অবিস্মরণীয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগষ্ট ২০২৪ ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা, শিশু-কিশোরকে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে ২০ হাজারের অধিক ছাত্র-জনতা। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশ এবং জাতির সামনে এক অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। গণফোরাম সফল গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার এবং সত্যিকার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ দেশের সকল জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৩১ বছরের ধারাবাহিকতায় গণফোরাম এর সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী সংগঠক ও সমর্থকদের পক্ষথেকে আমরা আজকে এই শুভদিনে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্রদ্বেয় ড. কামাল হোসেন এর উপস্থিতিতে গণফোরাম ঐক্যবদ্ধভাবে সকল স্তরে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। আমরা আরো ঘোষণা করছি, দ্রুততম সময়ে ঐক্যবদ্ধ “গণফোরাম” এর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান অতিথির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডা. মিজানুর রহমান নিম্নে পঠিত বক্তব্য সংযুক্ত করা হলঃ-
উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, গণফোরামের নেতা-কর্মীবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত সাংবাদিকবৃন্দ সকলকেই জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

আমি প্রথমেই ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

আজ থেকে ৩১ বছর আগে ১৯৯৩ সালের এই দিনে বাংলাদেশের বিরাজমান রুগ্ন রাজনীতির বিপরীতে সুস্থধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক, আইনজীবি, পেশাজীবি, বুদ্ধিজীবি ও প্রগতিশীল চিন্তা- চেতনার সচেতন নাগরিকদের নিয়ে গণফোরামের জন্ম হয়েছিল। গণফোরাম প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে যারা নিবেদিত ছিলেন তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

গণফোরামের নীতি-আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৩১ বছর আগে হাজার হাজার নেতা-কর্মী এই দলের পতাকাতলে সমবেত হয়ে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশ গড়ার কাজে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলেন। গণফোরামের জন্মলগ্নে বিরাজমান যেসব সমস্যাবলী চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য জাতির সামনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন, তা ৩১ বছর পর আরও তীব্র সংকটরূপে আবির্ভূত হয়েছে। 

এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে গত জুলাই-২০২৪ ছাত্র-জনতার এক অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং জনরোষে সরকার প্রধান দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়। ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিগত ১৫ বছর যাবত ফ্যাসিস্ট সরকারের বন্দিদশা থেকে জনগণ নতুন করে মুক্তিলাভ করে। অভিবাদন সংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে। ছাত্র-জনতা আবারও প্রমাণ করেছে এই দেশ স্বৈরশাসকের নয়, এই দেশ জনগণের।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও অবিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে বিপন্ন করে তুলেছে এবং বিরোধী দলগুলোর উপর বিগত সরকারের সীমাহীন দমন পীড়নের ফলে দেশ আজ চরম সংকটে পতিত হয়েছে। ফলে, বিদেশী রাষ্ট্রগুলি আমাদের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ পেয়েছে। যে কারণে জাতি হিসাবে আমরা লজ্জিত হয়েছি।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এক নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশের জনগণ স্বপ্ন দেখছে এক স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশের। কোনো অশুভ শক্তি বা ষড়যন্ত্র যেন এই রক্তস্নাত বিজয় ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। এই অর্জনকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি আশা করি বতর্মান পরিস্থিতিতে গণফোরামের নেতাকর্মীরা সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করবে। গণফোরামের নেতা-কর্মীরা ছাত্র-জনতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হবে এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে বিগত সময়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানগুলি সংস্কার করতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস-এর নেতৃত্বে যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাদেরকে যথাযথ সময় ও সার্বিক সহযোগীতা করা সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে অভীষ্ট সংস্কার কর্মসূচি সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন।

পরিশেষে, গণফোরামের নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, গণফোরাম ৩১ বছরে তার নীতি- আদর্শের প্রশ্নে কোনো আপোষ করেনি। তাই আসুন দেশ গড়ার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন এস.এম. আলতাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট এ.কে.এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, অ্যাডভোকেট মেসবাহ উদ্দীন, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম। সভা পরিচালনা করেন মোস্তাক আহমেদ ও মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image