নিউজ ডেস্ক: প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে সবার জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশের মতো সোমবার বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিনটি উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সচিব ড. ফারহিনা আহমদ।
তথ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রকৃতি সংরক্ষণ, বন সৃজন অন্য কারও জন্য নয়, নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই করা প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বছরে পৃথিবীতে ৪০০ মিলিয়ন টন এবং বাংলাদেশে প্রায় তিন হাজার টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়। বিশ্বব্যাপী ১১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয় সমুদ্রে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক দূষণের এ অবস্থা চললে আগামী ৫০ বছরে সাগরের অনেক জায়গা মৎস্যশূন্য হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজা ও বগুড়ার বাংলাদেশ বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ফেডারেশন সভাপতি ড. এস এম ইকবালকে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবানন্দ রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম মফিজুল ইসলাম, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিকে দেওয়া হয় জাতীয় পরিবেশ পদক।
পাশাপাশি ছয়টি শ্রেণিতে নির্বাচিত ১৮ জনকে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১ এবং সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ লভ্যাংশপ্রাপ্ত পাঁচ নারী ও পাঁচজন পুরুষকে পুরস্কৃত করা হয়। আলোচনা সভা শেষে তথ্যমন্ত্রী কনভেনশন সেন্টার সংলগ্ন শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা উদ্বোধন করেন। পরিবেশ মেলা আগামী ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা প্রথমে ২৬ জুন পর্যন্ত এবং ঈদের পর ১ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে পরিবেশ দূষণ রোধ এবং বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে ‘সবুজ আন্দোলন’। সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে ক্ষমতায় রয়েছেন ঢাকার বর্তমান দুই মেয়র। কিন্তু বাসযোগ্য নগর এখনও অধরা।
একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে পরিবেশ রক্ষা ও দূষণ প্রতিরোধে সবুজীকরণে গুরুত্বারোপের আহ্বান জানিয়েছে আওয়াজ ফাউন্ডেশন। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, গাছপালা কেটে ফেলা, শিল্প-কারখানার ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্য পদার্থ বাতাসের সঙ্গে মিশে পরিবেশকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকল্প পণ্য সহজলভ্য করার আহ্বান জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ। সভায় পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাসান হাফিজ, এডাবের চেয়ারপারসন আব্দুল মতিন, কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী ও এডাবের কর্মসূচি পরিচালক কাউসার আলম কনক বক্তব্য দেন।
পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বলেছে, দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ‘আগে উন্নয়ন, পরে পরিবেশ’– এ ধরনের ভ্রান্ত উন্নয়ন দর্শন থেকে সরে আসতে হবে। সব ক্ষেত্রেই পরিবেশ-প্রতিবেশকে প্রাধান্য দিয়েই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রণয়ন ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। নয় তো পরিবেশ দিবসের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা যাবে না।
পরিবেশ দিবসে ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, সাতমসজিদ সড়কে সড়ক বিভাজক উন্নয়ন ও নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের দোহাই দিয়ে ৬০০ দেশীয় গাছ কাটা হয়েছে। নাগরিক আন্দোলনের কারণে ৩৭টি গাছ এখনও সড়ক বিভাজকে টিকে আছে। উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং কাটা গাছের স্থানে দেশীয় বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বৃক্ষবলয় গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ১০ হাজার গাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। সকালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চত্বরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (কার্যক্রম বিভাগ) সত্যজিত কর্মকার এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব (বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: