মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম প্রতিনিধি, কুমিল্লা : কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চল লাকসাম পৌরএলাকা, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, লাইমাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, নাঙ্গলকোট উপজেলার পৌরশহর সহ ১৬টি ইউনিয়ন ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পরিবেশ ও জলাধার আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে ভরাট করা হচ্ছে নদী-খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, দিঘী-নালা, জলাশয়সহ কৃষি জমি। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মারাত্মক আশংকা এবং মানুষের বাড়িঘর ভাংছে।
এছাড়া এ অপকর্মের ফলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার একর আবাদী কৃষি জমিসহ এলাকায় ড্রেজিং ও ভেগু-ট্রাক্টর বানিজ্যে পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশেষ করে ১৫ জানুয়ারি লাকসাম পৌরশহরের ৭নং ওয়ার্ড গাজীমুড়া দক্ষিন পাড়ায় অবৈধ ড্রেইজার দিয়ে বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে সরকারি ভূমি অফিসের ৩ কর্মকর্তাকে বেদম পিটিয়েছে ওই ড্রেইজার ও জমির মালিকের লোকজন।
এ ব্যাপারে লাকসাম থানায় একটি মামলা হলে ১ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও অপরাপর আসামীরা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। তবে অবৈধ ড্রেইজার ও পাইপ এবং ভেগু-ট্রাক্টর জব্দ না করায় স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এলাকার পৌরশহর এলাকা ও উপজেলা ৪টির বিভিন্ন স্থানে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে ড্রেইজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন, ভেগু-ট্রাক্টর দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে ভরাট করায় কমে যাচ্ছে এলাকার খাল-পুকুর,জলাশয়, দিঘি-নালা ও নিচু জমিসহ আবাদী কৃষি জমি। এ অঞ্চলে আগে শুকনো মওসুমে ডাকাতিয়া নদীতে বালু উত্তোলনে ভরাট প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এছাড়া জেলার দক্ষিণাঞ্চলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে এবং ভেগু-ট্রাক্টর দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার সাথে জড়িত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক পেশি শক্তির অনেকের বিরুদ্ধে নানাহ পকেট বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এক শ্রেনীর স্বার্থান্বেষী মহলের এহেন অপতৎপরতা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। লাকসাম-নাঙ্গলকোট পৌরশহরসহ উপজেলা ৪টির বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ ও জলাধার আইন লংঘন করে এক শ্রেণীর দুর্নীতি পরায়ন ব্যাক্তিদের যোগসাজশে যত্রতত্র প্রকাশ্যে চলছে বালু উত্তোলন ও ভেগু-ট্রাক্টরের মাধ্যমে পুকুর-দীঘি-নালা, কৃষি জমি ভরাটের মহোৎসব। আর এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ফলে এলাকার পরিবেশ ক্রমেই বিপন্নের পথে এগুচ্ছে এবং বাড়িঘর ভাংছে মানুষের।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলার দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিনিয়ত ওই উপজেলা গুলোর কোন না কোন স্থানে ডাকাতিয়া নদীসহ খাল-বিল ও পুকুর-ডোবা ভরাটের কাজ চলছে। পুকুর-ডোবা-নালা ও নিচু জমি ভরাট হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন ওই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ। উপজেলা ৪টির সবক’টি ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তোলন, কৃষি জমির মাটি কাটা ও ভরাট প্রকল্প জমে উঠেছে। উপজেলাগুলোতে অবাধে পুকুর-দিঘি-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতাসহ মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হলেও স্থানীয় ভূমি খেকোদের দমাতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। পুকুর-ডোবা-নালা ভরাটের বিষয়ে তারা আইনের আশ্রয়সহ জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্বারোপ করেন।
জেলার দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, পরিবেশ ও জলাদার আইন লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপের কথা শিকার করলেও এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা পরিবেশবাদীদের একাধিক সুত্র বলছেন, পুকুর-দীঘি,কৃষি জমি ভরাট বন্ধে স্থানীয় সরকার কাঠামো অত্যান্ত দূর্বল বিধায় এবং সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে ভুমি দস্যুরা উৎসাহিত হচ্ছে। জেলা দক্ষিণাঞ্চলের ৪টি উপজেলার ও ২টি পৌরশহরের যত্রতত্র পুকুর- দীঘি ও কৃষি জমি ভরাট হতে থাকলে এলাকার পরিবেশ হবে বিপন্ন। এতে অল্প বৃষ্টিতে এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভরাটকৃত পুকুর-দীঘির বিষয়ে একাধিক মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ড্রেইজার, ভেগু-ট্রাক্টর ব্যবসায়ী সেন্ডিকেটের জনৈক সদস্য গণ বলেন, আমরা স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকার বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে এ ব্যবসা চালাচ্ছি। আপনারা সাংবাদিক লেখালেখি করলে আমাদের কিছুই হবে না।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: