নিউজ ডেস্ক : লাভের আশায় চড়া সুদ আর ধারদেনা করে পেঁয়াজ চাষ করলেও ভেজাল বীজের কারণে উৎপাদন না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার রতনদিয়া মাঠে সরেজমিনে দেখা যায়, আট বিঘা জমিতে দুই লাখ টাকা খরচ করে পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেছিলেন কৃষক আমির শিকদার। তিনি চার লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন আশা করেছিলেন। কিন্তু তার সব স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, তা বাজারে বিক্রির অনুপযোগী।
কৃষক আমির শিকদার জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আট বিঘা জমিতে দুই লাখ টাকা খরচ করে পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেছিলাম। যার কাছ থেকে পেঁয়াজ বীজ কিনেছি, সে দেশি বীজ বলে এলসি দিয়েছে। আশা করেছিলাম, চার লাখ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারব। কিন্তু সব স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, তা বাজারে বিক্রির অনুপযোগী। পেঁয়াজ বাজারে নিলে ক্রেতারা স্পর্শ করেও দেখেন না।
আমির শিকদারের দাবি, তিনি স্থানীয় হরজত ও সুজন নামের দুই বীজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে রোপণ করেন। হরজত ও সুজন দেশি পেঁয়াজ বীজের নামে ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ দিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যে কারণে বিঘাপ্রতি ক্ষতি হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বীজ বিক্রেতাদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবি তার।
একই মাঠের কৃষক সুনিতা বিশ্বাস বলেন, ‘স্বামী নেই। চাষাবাদ করে সন্তানদের নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। এবার আট বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়নি। যে কারণে দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে আমার সর্বস্বান্ত অবস্থা।’ তাই সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা দাবি করেন তিনি।
আরেক ভুক্তভোগী সদর উপজেলার মুচিদহ গ্রামের কৃষক মিন্টু খান। তিনি বলেন, ‘বীজ ব্যবসায়ী সুজনের কাছ থেকে পেঁয়াজ বীজ কিনে দুই বিঘা জমিতে রোপণ করি। বীজ বিক্রির সময় সুজন বলেছিলেন যে দেশি বীজ দিয়েছেন। কিন্তু পরে দেখা যায় ভারতের ভেজাল বীজ। এই বীজে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়নি। যে কারণে চরম ক্ষতি হয়েছে।’
এ বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকার কথা জানিয়ে রাজবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল কালাম বলেন, ‘এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩০০ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে৷ কিন্তু ভেজাল বীজের কারণে জেলায় এক হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত যেসব কৃষকের কাছে বীজ কেনার রসিদ ছিল, বীজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সেসব কৃষককে ক্ষতি পূরণ আদায় করে দেয়া হয়েছে। আরও কয়েক কৃষককে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
বীজ কেনার সময় কৃষকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: