• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

প্রতিবন্ধী বান্ধব সমাজ চাই


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ২২ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:১৪ পিএম
স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম
প্রতিবন্ধী বান্ধব সমাজ চাই

সেলিনা আক্তার

সাধারণত, যে সকল শিশুর দৈহিক, মানসিক ইত্যাদি ত্রুটির কারণে নির্দিষ্ট মাত্রায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অক্ষম, তাদের প্রতিবন্ধী বলে। কিন্তু, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন,  ২০০১ অনুযায়ী 'প্রতিবন্ধী' অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি- জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হইয়া বা দুর্ঘটনায় আহত হইয়া বা অপচিকিৎসায় বা অন্য কোনো কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং উক্তরূপ বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতার ফলে- স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম।

প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী এবং বহু প্রতিবন্ধী।  বিভিন্ন কারণে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। যেমন জন্মের পূর্বকালীন সময়  শিশু জন্মের সময়ের কারণ। শিশু জন্মের পরবর্তী কারণ জন্মের পূর্বকালীন সময় গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে মা যদি হাম, চিকেন পক্স, মাম্পস, যক্ষা, ম্যালেরিয়া, রুবেলা ভাইরাস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হন তবে গর্ভস্থ শিশু শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। 

এছাড়া, মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা প্রভৃতি শারীরিক অবস্থায় গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। গর্ভবতী মা যদি দীর্ঘদিন ধরে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খান, তবে ভ্রুণের গঠনগত বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়, মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। ফলে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।  ঔষধ গ্রহণ: গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া। কারণ, অনেক ঔষধ ভ্রূণের অঙ্গ সৃষ্টিতে বাঁধার সৃষ্টি করে, ফলে শিশু যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।  

গর্ভাবস্থায় বিশেষত প্রথম তিন মাস এক্সরে বা অন্য কোনোভাবে মায়ের দেহে যদি তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রবেশ করে তবে ভ্রুণের নার্ভতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবার ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়। 

এছাড়াও, গর্ভবতী মায়ের বয়স ১৮ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি হলে, গর্ভবতীর ঘন ঘন খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হওয়া, নিকট আত্মীয়র মধ্যে বিবাহ ইত্যাদি কারণে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। শিশুর জন্মের সময়কাল দীর্ঘ হলে শিশুর গলায় নাড়ি প্যাচানোর কারণে বা শিশু জন্মের পরপরই শ্বাস নিতে অক্ষম হলে অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

ফলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।  শিশু জন্মের সময় মস্তিষ্কে কোনো আঘাত-যেমন পড়ে যাওয়া, মাথায় চাপ লাগা ইত্যাদি  প্রতিবন্ধিতার কারণ হতে পারে।   শিশু জন্মের পরবর্তী কারণসমূহ-  নবজাতক যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয় এবং রক্তে যদি বিলিরুবিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, তবে মস্তিষ্কে কোষের ক্ষতি হয় এবং শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়।  

শৈশবে শিশু যদি হঠাৎ করে পড়ে যায়, মস্তিষ্কে আঘাত পায় বা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়, তবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হবার সম্ভাবনা থাকে।  পরিবেশের বিষাক্ত পদার্থ যেমন- পোকামাকড় ধ্বংস করার রাসায়নিক পদার্থ, আর্সেনিক মিশ্রিত পানি ইত্যাদি শিশু শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, ফলে শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

খাদ্যে পুষ্টিকর উপাদানের অভাব হলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়। ফলে, শিশু মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। পূর্বে মানুষ ধারণা করতো  যে,  প্রতিবন্ধীরা হলো পাপের ফল।  এজন্য,  প্রতিবন্ধী শিশু ও তার বাবা-মাকে সমাজে অনেক কটু কথা শুনতে হতো। কিন্তু,  বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ক্রমেই এ ধারণা পাল্টেছে। 

শুধু তাই নয়,  প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও এখন সম্মানের সাথে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। এমনকি জাতীয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করে  সম্মানিত হচ্ছেন এবং বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করছেন । 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশের ভাস্কর ভট্টাচার্যের কথা। ভাস্কর ভট্টাচার্য  একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।  কিন্তু,  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও যে পৃথিবীতে আলোর কান্ডারী হওয়া যায়,  তা তিনি প্রমাণ করেছেন। সকল বাধা  অতিক্রম করে দেশ ও বিদেশে বীরদর্পে কাজ করে যাচ্ছেন। 

প্রতিবন্ধী বলে তিনি নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি।  অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি এটুআই এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ফর  অ্যাকসেসিবিলি  হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা ও প্রতিকূলতা বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিগম্যতা ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।   নীতি নির্ধারণ,  অ্যাডভোকেসি,   প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক এবং সুলভ প্রযুক্তি উদ্ভাবন লক্ষ্যে  তিনি কাজ করছেন।  প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১৮ সালে ভাস্কর ভট্টাচার্য 'ডিজিটাল এমপাওয়ারমেন্ট অফ পার্সনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস'  শীর্ষক ইউনেস্কো পুরস্কার অর্জন করেন।  দেশের প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির  শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকাশিত সকল পাঠ্যবই এবং বাংলাদেশের প্রথম  অ্যাক্সেসিবল  ডিকশনারি  তৈরির জন্য তিনি এ পুরস্কার পান। 

তাছাড়া, তিনি ইতোমধ্যে দুই লক্ষেরও অধিক পৃষ্ঠার পাঠ্য উপকরণকে অভিগম্য আকারে তৈরি করেছেন এবং ৫ শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটি দক্ষতা এবং সহায়ক প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন।  

তিনি কোভিড-১৯ মহামারিতে জাতীয় হেল্পলাইন '৩৩৩' এবং 'মাইগভ' এর সেবা সম্পর্কিত তথ্যগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহজগম্য করতে সরকারের উদ্যোগের সাথে জড়িত ছিলেন। 

 তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক আইন(এডিএ) ঘোষণা উদযাপন লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে ডি- ৩০ ডিজঅ্যাবিলিটি লিস্ট ২০২১ সম্মাননা পান। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যাক্তি। আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত দ্বিতীয় দক্ষিণ এশীয় সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ ও উন্নয়নের তহবিল গঠনের পরামর্শ প্রদান করেন।  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠিত হয়।  এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এখন প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন গণমুখী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।  বাংলাদেশের সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের স্বার্থ সুরক্ষা,  ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ  প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

 প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সরকারের মিশন হল- আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সেবামানের আলোকে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত  UNCRPD এর আলোকে বাংলাদেশের সকল ধরনের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সমমর্যাদা,  অধিকার, পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং একীভূত সমাজ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতাধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধন। সরকার  এ লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে থেরাপিউটিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯ টি উপজেলায় মোট ১০৩ টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করা হয়। এ সকল কেন্দ্রসমূহ হতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সেলিং  ও রেফারেল সেবা এবং সহায়ক উপকরণ  প্রদান করা হচ্ছে। উক্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত নিবন্ধিত সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ৬ লক্ষ ৫৭ হাজার ১০৩  জন ও মোট প্রদত্ত  সেবা সংখ্যা ৮৯,০৯,৮৯৬ টি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীকতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ৪০টি  মোবাইল থেরাপি ভ্যানের  মাধ্যমে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ৪০টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত বিনামূল্যে নিবন্ধিত থেরাপিউটিক সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ৩,৯৬,৭৫৪ জন এবং প্রদত্ত সেবা সংখ্যা ১০,৩০,৩৯০ টি। 

১০৩ টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত ৬০,৩৪২টি সহায়ক উপকরণ (কৃত্রিম অঙ্গ, হুইলচেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ক্র্যাচ,  স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম,  সাদাছড়ি,  এলবো ক্র্যাচ, আয়বর্ধক উপকরণ হিসেবে সেলাই মেশিনসহ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।  Early Screening, Detection, Assessment ও  Early intervention  নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতায় পরিচালিত ১০৩ টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে একটি করে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী (এনডিডি) কর্নার  স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত ১০৩ টি কেন্দ্র হতে অটিজম সমস্যাগ্রস্থ  শিশু ও ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে ফাউন্ডেশনের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২৮ আসন বিশিষ্ট সেরিব্রাস পলসি(সিপি) শিশুর লালন পালন,  শিক্ষা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রতিবন্ধী শিশু নিবাস চলমান আছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঢাকার মিরপুর- ১৪ এ ১৫ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক  জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে যা  সুবর্ণ ভবন নামে নামকরণ করা হয়েছে। উক্ত প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স এ  অটিজমসহ অন্যান্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য  ডরমিটরি,  অডিটোরিয়াম, ফিজিওথেরাপি সেন্টার,  শেল্টারহোম, ডে- কেয়ার সেন্টার,  বিশেষ স্কুল ইত্যাদির সংস্থান রাখা হয়েছে। 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন, বিপণন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে  সুবর্ণ ভবনের নীচতলায় একটি বিপণন ও প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।  অতি শীঘ্রই বিপণন ও প্রদর্শনী কেন্দ্রটি চালু করা হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে অনুদান/ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ফাউন্ডেশনের  কল্যাণ তহবিল থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত বেসরকারি সংস্থার মাঝে প্রায় ১৬ কোটি টাকা অনুদান ও ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।  কোভিড-১৯  কালীন পরিস্থিতিতে জুলাই- ২০২১ মাসে ২৬৯টি বেসরকারি সংস্থার অনুকূলে ১কোটি ৫২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ৪৭৫ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মোট ২৫ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে কর্মরত জনবলকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য পর্যায়ক্রমে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।  উল্লেখ্য,  এ পর্যন্ত ৫২৬১ জনকে অভ্যন্তরীণ ও ২১৫ জনকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। চাকর প্রত্যাশী ও কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে ২০ আসন বিশিষ্ট একটি পুরুষ ও ২০ আসন বিশিষ্ট একটি মহিলা হোস্টেল চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ৪০০ জন। 

অটিজম রিসোর্স সেন্টার দ্বারা এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত অটিজম সমস্যাগ্রস্থ  শিশু ও ব্যক্তিকে বিনামূল্যে ২৬ হাজার ৩২০ টি ম্যানুয়াল ও ইন্সট্রুমেন্টাল থেরাপি সেবা প্রদান করা হয়েছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও  স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন  উইথ অটিজম পরিচালনা করা হচ্ছে।  এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত সনাক্তকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যে ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী প্রতিবন্ধী।  সরকার নারী প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও বিশেষ লক্ষ্য  রাখছে। বর্তমানে ভাতা ও উপবৃত্তিপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধীর মধ্যে ৩৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ নারী। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন- ২০১৩' প্রণয়ন করা  হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। তাদের হাতেও এখন  স্মার্টফোন, ল্যাপটপ। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা কাজ করছেন।  তারা ডিজিটাল নথি ব্যবহার করে কাজ করছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টালও  ব্যবহার করতে পারছেন। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ সকল প্রকার পঠনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বই পড়ার সংকট  দূর করতে আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব  সংস্থার মারাকেশ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। মারাকেশ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষরের  ফলে  বাংলাদেশের ৩ লক্ষ ৪০ হাজারের অধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ডব্লিউআইপিও এর   'অ্যাক্সেসিবল বুক কনসোর্টিয়াম'  এর ৮ লক্ষাধিক বই পড়ার সুযোগ তৈরি হবে।

 ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন,  দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সুযোগসুবিধা নিশ্চিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও এটুআই এর যৌথ উদ্যোগে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য গুণগত শিক্ষা প্রদানে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ও অ্যাক্সেসিবল ডিকশনারি  তৈরি,  বছরের শুরুতে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটুআই বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,  সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মমন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ  বিভাগ,  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ,  বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। মারাকেশ চুক্তিতে অনুসমর্থন করে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষায় সমান সুযোগ প্রদান এবং জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ UNCRPD ও ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা -৪ অর্জনে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গিয়েছে। 

প্রতিবন্ধীরা পরিবার , সমাজ ও দেশের  বোঝা নয়। এ সত্য  সুস্থ ব্যক্তিদের উপলব্ধি করতে হবে।  এ সত্য উপলব্ধি করলেই হবে না এর জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে । পরিবারকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে হবে। পরিবারকে  প্রতিবন্ধীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই  প্রতিবন্ধীবান্ধব সমাজ তথা দেশ  গড়ে তোলা  সম্ভব।  এজন্য ব্যক্তি, সমাজ,  সরকার ও রাষ্ট্র  সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

লেখিকা: সহকারী তথ্য অফিসার পিআইডি

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image