রূপম ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন এবং সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মীরসরাই থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি থাকায় যানবাহন এবং ট্রেন চলাচল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও বেসরকারি ডিপোগুলোতে কনটেইনারের ব্যাপক জট সৃষ্টি হয়েছে। জেলার আড়তগুলোতে পণ্য আসতে না পারায় বাজারে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মনির আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ রয়েছে। ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর পানি থাকায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। কখন সড়ক থেকে পানি নামবে আমরা সে দিকে থাকিয়ে আছি। পানি কমলে আমরা আবারও গাড়ি চলাচল শুরু করবো।’ শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোনও আমদানি পণ্য দেশের কোথাও নিয়ে যেতে পারিনি উল্লেখ করে মনির আহমেদ বলেন, ‘একইভাবে রফতানি পণ্যও চট্টগ্রাম বন্দরে আনা যায়নি। সড়ক এবং ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের পণ্যের সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে গেছে।’
আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কপিল উদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে আজও কোনও যাত্রীবাহী বাস ছাড়েনি। চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকা কিংবা অন্য কোনও জেলা থেকেও যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে আসেনি। মীরসরাই থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত সড়কে এখনও হাঁটুপানি। চৌদ্দগ্রামে একটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। কারণে ডাবল লাইনে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। পানি কমলে আবারও বাস চলাচল সচল হবে।’
তবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক আছে বলে জানালেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘ট্রেন এবং সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পণ্যের সাপ্লাই চেইন। ব্যাহত হচ্ছে সরবরাহ।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পর থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার রেললাইনে কোথায় কোনও সমস্যা আছে কিনা, তা দেখার জন্য একটি রেকার যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্দেশনা পেলে আমরা ট্রেন চালানো শুরু করবো।’
এদিকে, ট্রেন ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে সংকট সবচেয়ে বেশি সৃষ্টি হয়েছে। দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির।
এ ব্যাপারে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ। এ কারণে পণ্যবাহী গাড়ি চট্টগ্রামের আড়তে আসেনি। চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে দেশের অন্য কোথাও যেতে পারেনি। পণ্যের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ায় চাকতাই-খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে।’
বুধবার খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৯৫ টাকায়, শুক্রবার একই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকায় উল্লেখ করে আবুল কাসেম আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৭৩ থেকে বেড়ে ৯০ টাকা এবং মিশরের পেঁয়াজ ৭০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকায়।’
চট্টগ্রামে শুক্রবার সব সবজির দাম বেড়েছে। বিকালে পাঁচলাইশ আতুরার ডিপো বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকায় বিক্রি হতো। একই মরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া কাঁকরোল ৮০, বরবটি ১২০, পেঁপে ৫০, ঢ্যাঁড়স ৫০, চিচিঙ্গা, ধুন্দল আর ঝিঙা ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, পটল ৫০, লাউ প্রতি কেজি ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে সব ধরনের মাছ ও শাকেরও।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: