• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

গারো পাহাড়ে সুইস গেট নির্মাণের পরিকল্পনা ধ্বংসের আশঙ্কা বনভূমি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:০৯ পিএম
গারো পাহাড়ে সুইস গেট নির্মাণ
সুইস গেট নির্মাণে বনভূমি ধ্বংসের আশঙ্কা

মো. জাহিদুল হক মনির, শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরের ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা কালাঘোঁষা নদীতে সুইস গেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি। জাইকার অর্থায়নে বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীতে সুইস গেট নির্মাণ হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়বে শাল গজারির এই বন, চিরতরে সৌন্দর্য হারাবে গারো পাহাড়। 

ইতোমধ্যে এই প্রকল্প বন্ধ করতে এলজিইডিকে চিঠি দিয়েছে বনবিভাগ, আর জনজীবন রক্ষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন সীমান্তের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। বরং এ নদীর ওপর সুইস গেট নির্মাণ না করে, এ নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালাঘোঁষা নদীর দুই পাড়েই রয়েছে আদিবাসী জনপদ। পুরো অংশ জুড়ে রয়েছে শাল গজারীর বনভূমি। রয়েছে বনবিভাগের সামাজিক বনায়ন ও সুফল বাগান প্রকল্প। বন বিভাগের বৃহৎ অংশের পাশাপাশি এখানে রয়েছে মালিকানাধীন রেকর্ড সম্পদও। যেখানে বেশিরভাগই আবাদী জমি। বন্যহাতির আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে নিজেদের তাগিদেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এখানকার মানুষ।

নদীতে গ্রামের এই অংশে কোন সেতু না থাকায় পায়ে হেঁটেই নদী পাড় হতে হয় হালচাটি গ্রামের কোচ পাড়ার মানুষদের। পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র একটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও, বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের যেতে হয় হাঁটু পানি পেরিয়ে। বর্ষায় পানি বেড়ে গেলে দুর্ভোগ বাড়ে স্থানীয়দের। এলজিইডির তথ্যমতে, এখানকার কাঁচা সড়কটি গেজেটভুক্ত না হওয়ায় সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই নদীতে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীর।

জানা গেছে, সম্প্রতি কালঘোঁষা নদীর ভাটি এলাকায় গান্ধিগাঁও অংশে জাইকার অর্থায়নে সুইস গেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে এখন অপক্ষো প্রকল্প শুরুর। কিন্তু এই সুইস গেট নির্মাণ হলে উজানের হালচাটি অংশে সারাবছর পানি জমে থাকলে যাতায়াত বন্ধসহ দুর্ভোগে পড়বে স্থানীয়রা। গান্ধিগাঁও অংশের যে স্থানে সুইস গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার পার্শ্ববর্তী সব জমিই বন বিভাগের। দীর্ঘদিন ধরে আবাদের অজুহাতে জমি ছাড়ছে না দখলদাররা। তাদের উচ্ছেদে বনবিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম থাকলেও সেই জমিগুলোতে চাষের জন্য পানি সরবরাহের অযুহাতে এই সুইস গেট দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হবে বনবিভাগের।

এ ছাড়া সুইস গেট নির্মাণ হলে ক্ষতির মুখে পড়বে বনভূমি, মারা যাবে শাল গজারি গাছ। আটকে রাখা গভীর জলে যাতায়াত বন্ধ হবে দুই পাড়ের আদিবাসী মানুষের। ক্ষতিগ্রস্থ হবে উজানের আবাদি জমির। সম্প্রতি এই প্রকল্প বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ ও মানব বন্ধন করেছে সীমান্তের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ।

হালচাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রশীদ বলেন, নদীর দুই পাড়েই বন। সুইস গেট বসালে পানি আটকে থাকলে বন এমনিই মারা যাবে। তখন আর বন টিকায়া রাখা যাবে না। 
কোচপাড়ার শ্রীমতি কোচ বলেন, আমাদের কোন সেতু নাই। এই পানি পার হয়ে আমাদের এলাকায় যেতে হয়। বন্যহাতি আসলে এই পাড়ের মানুষ আমাদের সাহায্য করে আবার এই পাড়ে হাতি নামলে আমরা তাদের সাহায্য করি। এখানে সুইস গেট হইলে দুইপাড়ের মানুষই বিপদে পড়বে। 

শিক্ষার্থী মেধা বলেন, আমাদের এই নদী পাড় হয়েই বিদ্যালয়ে যেতে হয়। সুইস গেট থাকলে পানি বেশি থাকবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারবে না। আমাদেরও অনেক সমস্যা হবে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মেরাজ উদ্দিন বলেন, এই গারো পাহাড় শেরপুরের ঐতিহ্য। গুটিকয়েক কৃষকের আবাদের সুবিধার জন্য এই সুইস গেট নির্মাণ হলে পুরো বনটাই ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। আমরা এই প্রকল্পের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সবুজ বন নষ্ট করে এখানে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে সবুজ আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image