• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নানা অনিয়মের আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতাল


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:০৭ পিএম
নানা অনিয়মের আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতাল

মনিরুজ্জামান মনির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন হয় লিজা নামের এক গর্ভবতী নারীর। একাধিক আল্ট্রসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী তার গর্ভে ছিল যমজ শিশু। শুক্রবার প্রসব ব্যাথা হলে দুপুরে সিজার হয় তার। এর পরই ঘটে বিপত্তি। 

সিজারের পর চিকিৎসক জানায় তার গর্ভে যমজ নয়, বরং ছিল একটি শিশু। এরপরই শুরু হয় তুমোল হট্টগোল। ওই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে এক নবজাতক গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে। 

শুক্রবার দুপুরে জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। লিজা জেলার নবীনগর উপজেলার আলেয়াবাদ গ্রামের ফরহাদ আহমেদের স্ত্রী। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে হাসপাতালটি আবারো নতুন করে এক বিতর্কের সৃষ্টি করল। 

লিজার স্বামী ফরহাদ আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রী প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হলে উপজেলার স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মেহেরুন্নেছার তত্ত্বাবধানে  চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে সময় আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে আমার স্ত্রীর গর্ভে ২টি সন্তান দেখা যায় বলে জানান চিকিৎসকরা। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল করা আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে গর্ভে দুটি সন্তান আছে। শুক্রবার আমার স্ত্রী লিজার প্রসব ব্যাথা উঠে। যমজ শিশু গর্ভে থাকায় স্থানীয় চিকিৎসকরা ঝুঁকি না নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হাসপাতালে এনে সিজারিয়ান করতে পরামর্শ দেন। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তাকে শহরের খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে ডাক্তার নওরিন পারভেজ আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেন। উনার রিপোর্টেও দুটি সন্তান দেখা যায়। 

পরে তিনি নিজেই লিজাকে অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান করেন। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের লোকজন এসে জানান, আমার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। আর কোন সন্তানের কথা তারা জানাতে পারেনি। তারা জানায় আমার স্ত্রীর গর্ভে একটি সন্তান ছিল। কিন্তু আমার প্রশ্ন নবীনগরে আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে দুটি সন্তানের কথা জানিয়েছে, এখানে তাদের চিকিৎসকও দুটি সন্তানের কথা জানান। তাহলে আমার আরেক সন্তান গেল কোথায়?

এই বিষয়ে খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও সিজারিয়ান করা চিকিৎসক নওরিন পারভেজ বলেন, আমি দুই জায়গায় হার্টবিট পেয়েছি। অনেক সময় আমাদের দেখা এবং অনুমানে ভুল হতে পারে। সেই অনুযায়ী আমি রিপোর্ট দিয়েছি। তবে সিজারিয়ানে গর্ভে একটি সন্তান পাওয়া গেছে।

খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মার্শাল চৌধুরী বলেন, আমরা রোগীর অভিভাবকদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি এটা মেডিকেলের বিষয়, কিন্তু তারা চেঁচামেচি করে গরম করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে প্রশাসনকে ডেকেছি।

খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী বলেন, আমি ৪ দিনের জন্য জেলার বাইরে অবস্থান করছি। হাসপাতালে কি ঘটেছে তা আমার জানানেই। ঘটনার পর সেখানে পুলিশ গিয়েছিল। তারাই বিষয়টি ভাল বলতে পারবে। 

এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১নং শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শেহাবুর রহমান জানান, শিশুর বাবা অভিযোগ করেছেন আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে দুই শিশু ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসকও আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে দুই শিশু দেখেছেন। তাদের সকল রিপোর্টেই দুই শিশুর কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে সিজারে এক শিশু পাওয়া গেছে বলে জানানো হচ্ছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। 

এর আগেও হাসপাতালটির বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুসহ ভুল চিকিৎসার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।  

২০১৯ সালের অক্টোবরের ৩০ তারিখ জেলা রেডক্রিসেন্ট এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম তৈমুরের পুত্রবধূ স্কুল শিক্ষিকা নওশীন আহমেদ দিয়ার সিজারিয়ান সম্পন্ন করা হয়। এর পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে ৪ নভেম্বরে তিনি মারা যান। এরপর চিকিৎসায় গাফিলতি, ভুল চিকিৎসা ও ওষুধ প্রয়োাগের অভিযোগ এনে নিহতের স্বামী বাদী হয়ে মামলা করে। এ ঘটনায় আদালত হাসপাতালটির পরিচালক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী, চিকিৎসক অরুণেশ্বর পাল অভি ও মোঃ শাহাদাত হোসেন রাসেলকে কারাগারে পাঠায়। তবে বর্তমানে তারা সকলেই জামিনে রয়েছেন। 

এছাড়াও ২০১৯ সালের মার্চে পাপিয়া নামের এক অন্তঃসত্তা নারীর কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডি অ্যান্ডসি করার অভিযোগ উঠেছিল হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলাও হয় যাতে উল্লেখ করা হয়, ডি অ্যান্ডসি করার সময় পাপিয়ার রক্তনালী কেটে ফেলা হয়। বাসায় নেওয়ার পর পরই প্রচন্ড-ব্যথা ও রক্তপাত শুরু হলে পুণরায় ওই হাসপাতালে নিয়ে এলে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। 

পরে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির পর পাপিয়ার জটিল অপারেশন করা হয়। ১২ ব্যাগ রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচলেও স্বাভাবিক চলাফেরা করার সক্ষমতা হারিয়েছে তিনি।

এদিকে একই বছরের ১ জুন ভুল চিকিৎসায় পারভীন বেগম (২৮) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image