বিজয়কররতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের হাওরের মিঠাপানির মাছের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। কিশোরগঞ্জসহ নেত্রকোনা আর সুনামগঞ্জ হাওরের কিছু অংশের মাছ বেচাকেনা হয় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা মাছ বাজারে। এরপর এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয় বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
তবে দুইশো বছরের ঐতিহ্য এ বালিখলা মাছ বাজার থেকে সরকারি রাজস্ব আদায় করা হয় না । এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। সরজমিনে ৭ই নভেম্বর সোমবার ভোরে বালিখলা গেলে এদূশ্য চোখে পড়ে। স্থানীয় মাছ ব্যাসায়ীরা জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা মাছ বাজারের ঐতিহ্য রয়েছে প্রায় দুইশো বছরের। ভোর থেকে জেলেরা বোয়াল, আইড়, চিতল, রুই, কাতলা, বাইন, কালবাউশ, পাবদা, কই, মাগুর, শিং, চিংড়ি, রিটা, গোলশা, শোল, কাচকি, টাকি. পুটিসহ অন্তত অর্ধশত দেশীয় প্রজাতির মাছ এ বাজারে নিয়ে আসেন।
সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে পুরোদমে কেনাবেচা। তারপর আড়ৎদাররা মাছ ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠান। সরেজমিনে বালিখলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চিৎকার করে মাছের দাম হাঁকছেন কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী। একজন এদিকে ডাক হাঁকছেন তো অপরদিকে আরেকজন। চারদিক থেকে তাদের ঘিরে আছে অসংখ্য মানুষ। মাছ ছাড়া যেন অন্য কোনোদিকে নজর দেওয়ার সময় নেই কারও। নৌকা থেকে মৎসজীবীরা বাঁশের ও প্লাস্টিকের কাঁচায় কেও মাথায় আবার দুইজনে মিলে টেনে ওপরে নিয়ে আসছেন মাছ। সেই মাছ অনেকে নৌকায় আবার অনেক নারী-পুরুষ ঘাট পাড়ে ছট বিছিয়ে ছোট বড় মাছ আলাদা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ আবার মাছ বিক্রি করছেন আড়ৎদারদের কাছে। আড়ৎদাররা আবার নিলাম ডেকে নির্দিষ্ট দরে বিক্রি করছেন ক্রেতাদের কাছে। একজনের মাছ বিক্রি শেষ না হতেই আরেকজনের মাছ এসে হাজির। আবার শুরু হয় নতুন হাঁক ডাক। এরকম আট দশজন পাইকার বিরামহীনভাবে ডাক হেঁকে যাচ্ছেন আর স্থানীয় ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ক্রেতারা সুবিধা মতো মাছ কিনছেন।
কয়েকজন আড়ৎদার, ক্রেতা ও সাধারণ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালিখলা মাছের বাজার এখন জমজমাটভাবে চলছে। প্রায় দেড়শত বছরের পুরোনো এ বাজার।
প্রতিদিন ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন, নিকলী ও অষ্টগ্রামসহ পাশের সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার কয়েকটি হাওর থেকে শত শত ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম ঘটে। এসব ক্রেতা বিক্রেতার হাতেই প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ টাকার মাছ। ডাকে এসব মাছ কিনে ড্রাম ভর্তি করে রাতে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায়। স্থানীয়রাও মাছের চাহিদা মিটাচ্ছেন এখান থেকেই। তবে এই দুইশো বছরের ঐতিহ্য বালিখলা মাছ বাজার ২০১৯ সালে ৯৬ শতাংশ জায়গায় স্থায়ীভাবে বেচাকেনা হয়ে আসছে।
এর মধ্যে সরকারের (খাস জায়গা) ৪২ শতাংশ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ৫৪ শতাংশ জায়গায় রয়েছে। এ বাজারের ব্যবসায়ী জামাল মিয়া বলেন, আমি এ বাজারে ৪০-৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি । তিন বছর আগে শুকনো মৌসুমে এখানে ব্যবসা করলেও বর্ষার চার মাস চামড়াঘাটে ব্যবসা করতে হয়েছে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে আমরা এখানে স্থায়ীভাবে মাছ বেচাকেনা করছি। কিন্তু সরকারিভাবে এ বাজার থেকে রাজস্ব নেওয়া হয় না। করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার বসু বলেন, আমি নতুন এসেছি। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। বিস্তারিত পরে বলা যাবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: