
জহিরুল ইসলাম সানি :
প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিদের খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার অযৌক্তিক দাম বাড়িয়ে খামার বন্ধ করতে বাধ্য করে, ডিম ও মুরগির বাজার সংকট সৃষ্টিকারী পুঁজিবাদী কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নজরুল হামিদ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন 'বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন'।
এ সময় 'বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন' এর সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, কোভিড মহামারির ধকল যখন কিছুটা সহনীয় হতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই কিছু অসাধু পুঁজিবাদী কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাজারে সংকট দেখিয়ে পোল্ট্রি খামারিদের খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার অযুক্তির দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে করে প্রান্তিক অনেক পোল্ট্রি খামারিদের খামার বন্ধ করতে হয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশ খুদা হবে নিরুদ্দেশ। ভাগ্য পণ্য উৎপাদন করে সহযোগিতা করে উৎপাদন বাড়ানো। ১৬ কোটি মানুষের প্রোটিনের যোগানদাতা পোল্ট্রি খামারিরা আজ কেন খামার বন্ধ করে দিচ্ছে, জানতে চাই প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কাছে। দেশের উন্নয়ন হয়েছে কর্পোরেটদের ভাগ্য বদল হয়েছে। নিঃস্ব হয়েছে ডিম- মুরগি উৎপাদনকারী প্রান্তিক বেকার যুবক ও নারী উদ্যোক্তাগণ। কর্পোরেটদের সরকার সকল সুযোগ সুবিধা দিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীগণ অবহেলিত কেন? প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনকে ধরে রাখতে হবে তা না হলে কর্পোরেদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে ভোক্তা ও খামারিগণ। এই শিল্পে জড়িত আছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ৫০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান। এই শিল্প যদি ধ্বংস হয়ে যায় বেকারত্ব বেড়ে যাবে এবং ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিবে। তাই এদের যেভাবেই হোক টিকিয়ে রাখতে হবে। জিম্মি হয়ে আছে গুটি কয়েক কর্পোরেট কোম্পানির কাছে পোল্ট্রি ফিড মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির বাজার।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প পোল্ট্রি শিল্প কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্ব অবহেলায় আজ প্রান্তিক পর্যায়ে খামারীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
সুমন হাওলাদার বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো আরও বড় হচ্ছে, আর প্রান্তিক খামারি দিন দিন ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লস করে খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পোল্ট্রি স্টক হোল্ডারদের নিয়ে ২০১০ সালে একটি জাতীয় কমিটি করা হয়। পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির কৌশলপত্র তৈরি করা ২০২২ সাল পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, বিপিএর পক্ষ থেকে নভেম্বর ২০২২ এ সরকারের সকল মহলে যোগাযোগ করা হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে কৌশল পত্রটি ৩০ দিনের সময় দিয়ে বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও এবং তারা একটি মিটিং করেন ৫ই ডিসেম্বর। মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয় ৩০ দিনের মধ্যে সমাধান করা হবে। অদ্যবদী কোন অজানা কারণে এখন পর্যন্ত তারা কৌশলপত্র তৈরি করতে পারেনি। বাংলাদেশ পোল্ট্রি সেক্টর অবহেলিত কেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে জবাব চাই। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ১০% ডিম ও মুরগি এবং পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চা ১০০% উৎপাদন করে। তাই কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছে দেশের বৃহত্তর পোল্ট্রি শিল্প জিম্মি হয়ে পড়েছে।
প্রান্তিক খামারিগণ ডিম ও মুরগি ৯০% উৎপাদন করেন। ১০% উৎপাদন করে কৌশলে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং পানিসম্পদ অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি থাকলেও তারা কোন কোম্পানিকে তদারকি বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন না। তাই দিন দিন পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে কন্ট্রাক্ট খামারে নেওয়ার জন্য বাধ্য করেন প্রান্তিক খামারিদের। তাই সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদনকে ধরে রাখতে। তা না হলে বাংলাদেশের আমিষের ঘাটতি দেখা দিবে এবং কর্পোরেট কোম্পানিদের উপর নির্ভর করতে হবে।
সকল কর্পোরেট কোম্পানিগুলো স্বেচ্ছাচারিতায় কখনও ডিম ও মুরগির উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে খামারিদের লসে ফেলে দেয়। কখনও ডিম ও মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে এবং কখনও ভুট্টা ও সয়াবিন মজুদ করে, কৌশলের পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে মুরগির বাচ্চার দাম ছিলো ৯ টাকা থেকে ১০ টাকা। আর এখন মাসের ৬ তারিখ। আজকের বাচ্চার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তার মানে খামারী তখন বাচ্চা খামারে নিবে তখন বাচ্চার দাম বেড়ে যায় এবং পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়।
কাজী ফার্ম, প্যারাগন ও নারী চক্র সহ ১২টি কর্পোরেট ফার্মের বিরুদ্ধে অভিযোগে এনে সুমন হাওলাদার বলেন, এই কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কারণে বাজারে ডিম, মুরগি ও ফিডের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যা নিরসনে কর্পোরেট কোম্পানিদের উপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন' এর সাধারণ-সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক-সম্পাদক ইকবাল হোসাইন, সমাজকল্যাণ-সম্পাদক মনসুর রহমান ও আলমগীর হোসাইন-সহ সকল জেলা থেকে আগত নেতৃবৃন্দ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: