• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৬:৪০ এএম
ক্ষমতায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার

নিউজ ডেস্ক: আমরা তথ্য-প্রযুক্তি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর ক্ষমতায়নের, সম-অধিকারের, সমতা এবং ন্যায্যতার, অন্ততঃ তাত্বিক এবং দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে। বাস্তবে পরিস্থিতিটা একটু অন্যরকমই বটে। যখন নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গটি আসে, তখন দেখি বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, নারীরা প্রায়শই সুবিধাবঞ্চিত হয়, এমনকি সক্রিয়ভাবে বৈষম্যের শিকার হয়।

ক্ষমতায়ন একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী তাদের স্ব-কার্যকারিতা বাড়াতে, জীবন-বর্ধক সিদ্ধান্ত নিতে এবং সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে সক্ষম হয়। উপরন্তু, ক্ষমতায়ন বহুমাত্রিক। একজন নারী হয়তো আর্থিক ক্ষেত্রে ক্ষমতায়িত হতে পারে কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে নয় যেমন পারিবারিক এবং প্রজনন সিদ্ধান্ত গ্রহণে।

বেশিরভাগ দেশই এখন মেয়েদের এবং নারীদের অধিক ক্ষমতায়নের গুরুত্ব স্বীকার করে, এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অব-কাঠামোতে নারী-পুরুষের সম অধিকারকে নিশ্চিত করে তাত্বিক, নীতিগত এবং প্রায়োগিক ভাবে। একটি জাতি যখন তার সমস্ত নাগরিককে মূল্য দেয় যথাযথভাবে সে জাতি প্রকৃতপক্ষে সমৃদ্ধ এবং সম্মানিত। তাই জাতি হিসেবে আমাদের সকলের লক্ষ্য থাকা উচিত যে সকলের জন্য সুযোগের নিশ্চিত করা।

স্বপ্ন জীবনকে নান্দনিক সৌন্দর্য আর পরম আনন্দে ভরিয়ে দেয়। প্রতিটি মানুষই স্বপ্নকে লালন করে বেঁচে থাকে। স্বপ্ন দেখায় সুখ আছে, আত্মতৃপ্তি আর সামনে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয়ী মনোভাব থাকে। তবে সব স্বপ্নই সফলতার আলো দেখতে পায় না, কিছু স্বপ্ন ব্যাক্তিকে টেনে নিয়ে যায় সামনের দিকে, সম্ভাবনার আবর্তে আলোক বর্তিকার মতো পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় সাফল্যের দোঁড়গোড়ায়।

উন্নত বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এখন আর কোনো তর্ক-বিতর্ক নয়। বরং এটা এখন একটি প্রাগ্রসর নৈতিক সামাজিক দর্শন এবং জাতীয় প্রগতির অপরিহার্য অংশ। বাংলাদেশে এই নারীর ক্ষমতায়নকে মজবুত এবং সামাজিক উন্নয়ন কাঠামোতে সংপৃক্ত করার জন্য জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান নারীর সম অধিকার ও ক্ষমতায়নকে সুসংহত করতে বাংলাদেশের ৭২এর সংবিধানে আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সর্বস্তরে সমান অধিকারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেন।

রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছদে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষীত আসনের বিধান রয়েছে। তাছাড়া নারীরাও সরাসরি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।

নারীর ক্ষমতায়নের বিরল দৃষ্টান্ত এই সরকারের শাসনামলে আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি। বর্তমান বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীসহ সংসদের স্পীকার এবং মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অনেক নারী। তাছাড়া বর্তমানে উচ্চ আদালতে মহিলা বিচারক রয়েছেন। বাংলাদেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রনী অবস্থান এবং দৃঢ় সংপৃক্ততার জন্য বাংলাদেশ আজ নারী নেতৃত্বে একটি উজ্জ্বল বৈশ্বিক মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়।

স্বাধীনতা উত্তর নানা প্রতিকুলতার মধ্যে থেকেও মাত্র দুই দশকের গণতান্ত্রীক চর্চার এই সাফল্য বিরলই বটে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে (২০২১ সালে), যেখানে ইন্ডিয়ার অবস্থান-একই সলে ৫১, পাকিস্তান ৯৮, শ্রীলংকা ৯০। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২০ র‌্যাঙ্কিং-এ বাংলাদেশের অবস্থান ৫০, অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরষ্ট্রের অবস্থান ৫৩, ইতালী ৭৬, ইন্ডিয়া ১১২, আর প্রথম অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড।

গত কয়েক বছরে সরকারের দ্বারা গৃহীত নারী ক্ষমতায়নের বহুমূখী সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই প্রশংশিত হয়নি বরং বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য সত্যিই উন্নয়নের পথিকৃৎ।

ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে সূচনা, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং পরিচালনা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান অনস্বীকার্য। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিক সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।

তবে বাস্তবিক চিত্রটা বিশেষ করে সাধারণ নারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এতোটা ইতিবাচক নয়। নানাবিধ সমস্যার কারনে আমাদের দেশের ব্যাপক নারী জনগোষ্ঠী অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতায়নের নাগালে যেতে পারছে না। কারণ, রক্ষনশীলতা, কুশিক্ষা এবং অশিক্ষা, কুসংস্কার সবই নারী ক্ষমতায়নের অন্তরায়। সুতরাং, আমরা নারীর ক্ষমতায়নকে আরো সুদৃঢ় এবং বেগবান করার জন্য সমবেতভাবে কাজ করতে হবে। সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীরা বিভিন্ন উপায়ে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানা ক্ষেত্রে গভীর অবদান রাখতে পারে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি নারীদের অধিকতর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন দেয়ার মাধ্যমে তাদের পরিবার, সম্প্রদায় এবং শেষ পর্যন্ত একট জাতী উপকৃত হতে পারে। নারীদের বৃহত্তর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রদানের অর্থ হল নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অধিকার বৃদ্ধি করা এবং অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্তের উপর তাদের সংপৃক্ততা বাড়ানো যাতে নিজেদের, পরিবারের এবং সমাজের উপকার হয়। মধ্যে রয়েছে তাদের নিজস্ব সময় নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার, তাদের আয় এবং বিদ্যমান বাজারে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ।

লিঙ্গ বৈষম্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অপচয়, কারণ এটি উৎপাদনশীলতা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে, নারী ও পুরুষের মধ্যে উপার্জনের পার্থক্যের কারণে দেশগুলি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ হারাচ্ছে। লিঙ্গ বৈষম্য কমানো তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাছাড়া দারিদ্র্য হ্রাস পায় যখন বেশি নারী ও মেয়েরা শিক্ষিত হয়।

বিভিন্ন গবেষনায় দেখা যায় নারী শিক্ষায় এক শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি জাতীয় আয়ে ০.৩৭ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মানব উন্নয়ন সূচকে নারীদের স্থান পুরুষের চেয়ে অনেক কম। এই বিশ্বায়নের এবং অধিকতর উদারনীতির যুগেও বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে এবং পরিস্থিতি কেবল কম নয় বরং আরও খারাপের দিকে এগুচ্ছে দিন দিন। এই চিত্র আমাদের দেশেও উদ্বেগজনক যদিও গত দুই দশক ধরে পরিস্থিতিটা বেশ ইতিবাচক। আমাদের দেশের নারীরা পরিবারের সদস্যেদের খাওয়ানোর জন্য মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার পরিবরের সব ধরনের কাজের দায়িত্বেও নিয়োজিত অথচ এই নারীরাই সহিংসতা এবং কর্মক্ষেত্রে হয়রানির সম্মুখীন হন প্রতিনিয়ত।

নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। পাশাপাশি সামাজিক ভাবে ক্ষমতায়নের ব্যাপারটিকে গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা একজনের শৈশবের অপরিহার্য অংশ, কারণ এটি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে পরবর্তী বছরগুলিতে দারিদ্র্য কমানো সহ বিলম্বিত বিবাহ এবং শ্রমবাজারে প্রবেশে সুযোগ বৃদ্ধি করে। কিন্তু বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার এবং গৃহস্থালির কাজসহ বৈষম্যমূলক সামাজিক মূল্যবোধের ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান লিঙ্গ অসমতা দেখা যায়।

যেসব পরিবারে শিক্ষাগত মূল্যবোধ কম, সেখানে মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দেয়া হয়। অন্যান্য দেশের মতো, বাংলাদেশের শ্রম বাজারে লিঙ্গ ভূমিকার একটি দৃশ্যমান বিভাজন রয়েছে যেখানে নারীরা সবচেয়ে বেশি ঘরের কাজ করে এবং নারীদের পরিবারের অর্থনৈতিক উপার্জনের জন্য উৎসাহিত করা হয় না।

তাই অনেক পরিবারেই মেয়েদেকে সুশিক্ষা লাভ থেকে দূরে রাখা হয়। মেয়েরা অনেক পরিবারের জন্যই যেন একটা অপচয়। তাই ছেলে সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ। পরিবারে ছেলে থাকা যেন একটি সম্মানের বিষয় এবং কন্যাকে অর্থনৈতিক দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সমাজের প্রতিটি স্তরেই এটি যেন একটি দৃঢ় সমাজিক দর্শন, যে মেয়েরা একদিন বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে চলে যেতে হবে, তার শিক্ষায় বিনিয়োগ করা পরিবারের মূল উদ্বেগের বিষয় নয় বরং অর্থনৈতিক ক্ষতি হিসেবেই বিবেচিত হয়। এই যেন এক অসুস্থ সামাজিক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং সমগ্র নারী জাতীর অবমাননা।

বৈষম্যহীন সমাজ এমন একটি, যেখানে কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে তাদের বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, আয়, ধর্ম, ভাষা বা স্বাস্থ্যের ভিত্তিতে শোষণ বা অন্যায়ভাবে বিচার করা হয় না। সামাজিক প্রগতির ধারায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক এ হোক আমাদের সকলের সামাজিক প্রতিশ্রুতি।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image