নিউজ ডেস্ক: শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী তিথিতে রোববার সকালে চট্টগ্রামে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে । পাথরঘাটার একটি মণ্ডপেই ১১ কুমারীর পূজা হয় ।
সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা হরচন্দ্র মুন্সেফ লেনের শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ, শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির, রাজাপুর লেনের পঞ্চমাতা বিগ্রহ বাড়ি ও সেবাশ্রমে কুমারীপূজা শুরু হয় । একই সঙ্গে সীতাকুণ্ডের ভোলানন্দগিরি সেবাশ্রমেও অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারীপূজা ।
পাথরঘাটার শান্তনেশ্বরী মণ্ডপের পুরোহিত শ্যামানন্দ দাস বলেন, দেবী দুর্গার আরেক নাম কুমারী । সনাতন ধর্ম মতে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় সাধিত হচ্ছে সেই ত্রিবিধ শক্তিই কুমারীতে নিহিত আছে । কুমারীরূপেই মা দুর্গা আবির্ভূত হয়েছিলেন । কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক । কুমারীপূজা মানে প্রকৃতির পূজা ।
শাস্ত্র অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন বয়সের কুমারীকে ভিন্ন ভিন্ন নামে পূজা দেওয়া হয় । রাজাপুর লেনের পঞ্চমাতা বিগ্রহ বাড়িতে পাঁচ বছরের রিতিকা সাহাকে ‘ সুভগা ’ নামে পূজা করা হয় । বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের নার্সারির ছাত্রী রিতিকা নন্দনকাননের ব্যবসায়ী রুবেল সাহার মেয়ে । পৌরোহিত্য করেন প্রেমময়ানন্দ ব্রহ্মচারী ।
পাথরঘাটার শান্তনেশ্বরী মণ্ডপে ১১ জন কুমারীকে পূজা করা হয় । তাঁদের মাতৃরূপে পূজা করেন মন্দিরের পুরোহিত শ্যামানন্দ দাস । এই মণ্ডপে ‘ ভৈরবী ’ নামে পূজিত হয় পটিয়ার পূজা দাশ, ‘ রুদ্রাণী ’ নামে পূজিত হয় রাউজানের গুজরার অস্মিতা সেন, ‘ অপরাজিতা ’ নামে পূজিত হয় রাউজানের কৃত্তিকা চৌধুরী, নগরের বাকলিয়া কে বি আমান আলী সড়কের সুভদ্রা বিশ্বাস ও আনলোল বণিক পূজিত হয় ‘ কালসন্দর্ভা ’ নামে । বোয়ালখালীর পৌষালি রায় চৌধুরী এবং সাতকানিয়ার দক্ষিণ রায়পুরের প্রীতি ধর পূজিত হয় ‘ কুজ্বিকা ’ নামে ।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভোলানন্দগিরি সেবাশ্রমে মহাঅষ্টমীর দিন কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে । বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভোলানন্দগিরি সেবাশ্রমে মহাঅষ্টমীর দিন কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে । এ ছাড়া ‘ মালিণী ’ নামে পূজিত হয় সাত বছর বয়সী চার শিশু । তারা হলো নগরের সতীশ বাবু লেনের নিভৃতি দত্ত, সাতকানিয়ার তিথী দাশ, আনোয়ারার অদ্রিতা বিশ্বাস এবং রাউজানের অদ্রিতা চৌধুরী । কুমারীপূজা দেখতে মন্দিরে মন্দিরে ভক্ত সাধারণের ভিড় ছিল । পূজা শেষে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয় ।
সীতাকুণ্ডের ভোলানন্দগিরি সেবাশ্রমেও কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে । এই মন্দিরে এবার ‘ কুমারী মা ’ হয় সায়ন্তিকা বসু রায় চৌধুরী । এবার সায়ন্তিকা অপরাজিতা নামে পূজিত হয়েছে । টুকটুকে লাল শাড়ি, নানা রকমের গয়নায় সুসজ্জিত হয়ে পূজামণ্ডপে আনা হয় কুমারী মাকে । দ্বিতলবিশিষ্ট একটি কারুকাজ খচিত আসনে তাকে বসানো হয় ।
চারদিকে তখন অগণিত মানুষের ভিড় । মন্দির প্রাঙ্গণের নির্দিষ্ট আসন ছাড়িয়ে আশপাশের ফাঁকা জায়গায় মানুষ ভিড় করেন পূজা দেখতে । কুমারী মা আসনে বসার পর পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় । কিছুক্ষণ পর ফল ভোগ দেওয়া হয় । বেলা দেড়টার দিকে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে কুমারীপূজার সমাপ্তি হয় ।
সায়ন্তিকা বসু রায় চৌধুরী ঢাকার বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী । ঢাকার শাঁখারীবাজার এলাকায় কেবল অপারেটর ব্যবসায়ী মন্টি কুমার বসুরায় চৌধুরী ও মা বিথী বসু রায় চৌধুরীর বড় মেয়ে সে ।
ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী উমেশানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, শাস্ত্রমতে কুমারীপূজা শুরু হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে । বানাসুর একসময় স্বর্গ- মর্ত্য দখল করে অত্যাচার শুরু করলে বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন । সেই দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারী রূপে বানাসুরকে বধ করেন । এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারীপূজার প্রচলন শুরু হয় ।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: