
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ৫৩টি ফেরির মধ্যে ৫০টির কোনো ফিটনেস সনদ নেই। এছাড়া ২৯টি ফেরিতে নেই কোনো রাডারব্যবস্থা, চারটিতে রাডার থাকলেও সেগুলো নষ্ট।
ফেরিগুলোর পানির গভীরতা পরিমাপ করার যন্ত্র ‘ইকো-সাউন্ডার’ আছে ১২টিতে। সাতটির এই ব্যবস্থা আবার নষ্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন নদীবন্দরে ঘটে যাওয়া পাঁচটি ফেরি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিআইডব্লিউটিসির ফেরি সার্ভিসের বেহাল দশার চিত্র উঠে আসে। সাত সদস্যের এই তদন্ত কমিটি ১৬ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির মেরিন বিভাগের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমানত শাহসহ ১০টি ফেরি পরিদর্শন করেছেন। কিছু ফেরির বিভিন্ন পাম্পের লিকেজ ও ইঞ্জিন রুমের তলায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। কোনোটার মূল ইঞ্জিনের এগজস্ট পাইপ উন্মুক্ত। এসব পাইপ এসবেস্টস ক্লথ বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল অথবা অন্য কোনো তাপনিরোধক দিয়ে ঢেকে রাখার কথা। এভাবে উন্মুক্ত থাকলে এগজস্ট পাইপে আগুন লাগাতে পারে। লুব ওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হলেও ইঞ্জিনে তা নিয়মিত পরিবর্তন করা হয় না।
চলতি বছরের জুলাই মাসে মেরামত করা হলেও আমানত শাহ ফেরির তলদেশের কোনো কাজ হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ওই ফেরিটি যেদিকে কাত হয়ে নিমজ্জিত হয়েছে (বাঁ পাশ), সেই পাশে ফেরির তলদেশে বালাস্ট ট্যাংকে (নৌযানের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পানি নেওয়ার স্থান) ছিদ্র ছিল। এই ছিদ্র পুরোনো বলে মনে হয়েছে। ফেরির ওপরের দিকেও বেশ কিছু ছিদ্র পাওয়া যায়। এ ছাড়া বালাস্ট ট্যাংকের প্রবেশমুখ (ম্যানহোল) কখনোই ঠিকভাবে বন্ধ করা হয়নি। তাই ছিদ্র দিয়ে দ্রুতগতিতে পানি প্রবেশ করেছে এবং ম্যানহোল সঠিকভাবে বন্ধ না থাকায় ফেরি অল্প সময়েই কাত হয়ে যায়।
ফেরি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিআইডব্লিউটিসির মেরিন, প্রকৌশল ও বাণিজ্যিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় না থাকা, আগের তদন্ত কমিটির সুপারিশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করা ও ফেরির মাস্টারের মতামত গুরুত্ব না দেওয়াসহ বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি।
সুপারিশ: ফেরি সার্ভিসের মানোন্নয়নে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করেছে।
সুপারিশগুলো হল- ফেরির পূর্ণ ডকিং করে মেরামত নিশ্চিত করা; ফেরির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা; মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি প্রত্যাহার; প্রয়োজনীয়সংখ্যক ফেরি বা জলযান কেনার উদ্যোগ গ্রহণ; ড্রাইভার ও মাস্টারদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা; নিরাপত্তা ও দ্রুত যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি যেমন: ওয়াকিটকি, জিপিএস, ভিএইচএফ, রাডার, ইকো-সাউন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আবশ্যিকভাবে ফেরিতে রাখা; ফেরি ও জেটির মাঝে পর্যাপ্ত টায়ার ফেন্ডারের ব্যবস্থা করা
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: