
নিউজ ডেস্ক: মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানো চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখায় কৃতজ্ঞতাস্বরূপ টোকিওতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন আকাসাকা প্যালেসে তাদের এ সম্মাননা দেয়া হয়।
যে চারজনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয়, তারা হলেন জাপান রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস তাদাতেরু কোনো, অধ্যাপক গ্যালপ পেমা, রাজনৈতিক নেতা হিদেও তাকানো (মরণোত্তর) ও ফটো সাংবাদিক তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)।
মুক্তিযুদ্ধের সেই দুঃসময়ে সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের পাশে ছিলেন ও আমাদের সহযোগিতা করেছেন, আমি সরকারে আসার পর থেকে তাদের খোঁজ করেছি, খুঁজে বের করেছি এবং আমাদের সাধ্যমতো সবাইকে সম্মান জানানোর চেষ্টা করেছি, সম্মান দিয়েছি। সে সময় যারা আমাদের পাশে ছিলেন, তাদের আমরা কখনো ভুলতে পারি না; তাদের অবদান আমরা ভুলতে পারি না। দুঃসময়ের বন্ধুদের আমরা কখনো ভুলি না।’
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালি, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি অনেক রক্তের বিনিময়ে। এ অর্জনে পাশে থেকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বাংলাদেশ আজকে আরো চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানিয়েছে, যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। নৈতিক ও বস্তুগত সহায়তার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং সহায়তা নিশ্চিত করেছিলেন। তারা নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং আমাদের অসহায় মানুষদের জন্য মানবিক ত্রাণ ও চিকিৎসা সুবিধা পাঠিয়েছিলেন।’
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় এর আগে সম্মাননা পাওয়া আট জাপানি নাগরিকের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ওই সংকটময় মুহূর্তে জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরেছিলেন এবং মানবতার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। এজন্য তারা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু পিছিয়ে যাননি। তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাদের পুনরুজ্জীবিত করেছিল। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুলের বাচ্চাদের অবদান। আমাদের সাহায্য করার জন্য ওরা টিফিনের অর্থ সঞ্চয় করে দান করেছিল।’
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের সম্মান করি না, জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করি। জাপানের সঙ্গে ৫০ বছর ধরে চলে আসা বন্ধুত্ব আগামী প্রজন্ম আরো এগিয়ে নেবে প্রত্যাশা করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী, জাপানের জনগণ অতীতের মতোই আমাদের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি সবসময় আমাদের পাশে থাকবে। ৫০ বছর ধরে বিদ্যমান আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারত্বকে আগামী বছরগুলোতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সত্যিকারের সোনার বাংলা এবং বাংলাদেশকে সম্ভাবনার দেশে পরিণত করার জন্য আমরা নিজেদের উৎসর্গ করেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী, জাপান অতীতের মতোই আমাদের পাশে থাকবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চার জাপানির সম্মানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। সম্মাননাগ্রহীতাদের পক্ষে অনুভূতি প্রকাশ করেন অধ্যাপক গ্যালপ। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী।
এদিকে ঢাকায় জাপান একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করার কথা জানিয়েছে বিশ্বখ্যাত স্থপতি তাদাও আন্দো প্রতিষ্ঠিত তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। টোকিওতে আকাসাকা প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তাদাওর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ কথা জানায়।
সাক্ষাতের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (বিএনএম) এবং তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেন বিএনএম মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান এবং তাদাও আন্দো। জাপানের অনুদানে বাংলাদেশে একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য এমওইউ সই হয়।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: