নিউজ ডেস্ক : ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছিলেন বিএনপি নেত্রী। তার জামিনের আবেদন বারবার নাকচ হওয়ার মধ্যে তার স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুক্তির আবেদন নিয়ে যান।
আর সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে ওই বছরের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি নেত্রী। এরপর আরও পাঁচ দফা ছয় মাস করে বাড়ল মুক্তির মেয়াদ।
দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা ষষ্ঠ বারের মতো স্থগিত করতে আইন মন্ত্রণালয় মত দেয়ার পর সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
রোববার বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি জানান, সোমবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
মন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে আবেদন সেই আবেদনটিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। তাই তার (মুক্তির) মেয়াদ ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি হয়ে যাবে। আমরা জিও (প্রজ্ঞাপন) জারি করে দেব।
আগের নির্ধারিত যে শর্ত ছিল, সেই শর্তানুযায়ী তার ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আজকে আমরা খবর পেয়েছি, কালকে (সোমবার) প্রজ্ঞাপন হবে।’
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বিএনপি নেত্রীর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে তারা মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ ৬ মাস বাড়াতে মতামত দিয়েছি, তবে খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। এখন সরকার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ায় আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চললেও তাকে আর কারাগারে ফিরে যেতে হচ্ছে না। ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি দেশের ভেতরে তার মতো করে থাকতে পারবেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান বেগম খালেদা জিয়া। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে ওই বছরের অক্টোবরে সাজা বেড়ে দ্বিগুণ হয় বিএনপি নেত্রীর। একই মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আরও ৭ বছরের সাজা হয় তার।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছিলেন বিএনপি নেত্রী। তার জামিনের আবেদন বারবার নাকচ হওয়ার মধ্যে তার স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুক্তির আবেদন নিয়ে যান। আর সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে ওই বছরের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি নেত্রী।
আরও ছয় মাস জেলের বাইরে খালেদা জিয়া
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথা জানান সে সময় সরকার এবং বিএনপির পক্ষ থেকে দুটি শর্তের কথা বলা হয়। প্রথমত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে যাবেন না, দ্বিতীয়ত. তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন।
তবে ২০২১ সালে বিএনপি নেত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার শর্ত আর থাকেনি। এরপর খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়।
দেশে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা নেই এবং তিনি জীবন সায়াহ্নে দাবি করে এই দাবিতে বিএনপি দেশজুড়ে নানা কর্মসূচিও পালন করে দলটি। তবে সরকার দেশের বাইরে যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
এর মধ্যে বিএনপি নেত্রীর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ চতুর্থবারের মতো বাড়ানো হয় গত ২৬ মার্চ। সেটি শেষ হতে যাচ্ছিল আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর।
এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বজনরা আবেদন করলেই সাজা স্থগিতের মেয়াদ আবার বাড়ানো হবে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে বিএনপি নেত্রীর পরিবার।
রাজনীতি থেকে দূরে
দুই বছর আগে বিএনপি নেত্রী কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর রাজনীতি থেকে পুরোপুরি দূরে রয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি দেননি, দলীয় কোনো বৈঠকে অংশ নেননি, এমনকি জাতীয় দিবস বা ঈদ-পূজার মতো উৎসবেও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাননি।
তার রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কোনো কারণ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়নি। আবার তিনি কারাগারের বাইরে থাকা অবস্থাতেও দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনিও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টসহ মোট চারটি মামলায় দণ্ডিত। বর্তমানে অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: