• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী ছেড়ে যেভাবে পালাচ্ছেন সেনারা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০১ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৩৬ পিএম
মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী
সশস্ত্র বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফোন পাশে রেখে বসে আছেন আগনি লে (ছদ্মনাম)। ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করছেন। মিনিট পাঁচেক পর তার কাছে একটি বার্তা আসে। মরিয়া হয়ে তার সহায়তা চাচ্ছেন এক সেনা। তিনি সশস্ত্র বাহিনী ছাড়তে চাচ্ছেন। কিন্তু ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় আছে তার। আগনি লে-কে তার পাশে দাঁড়াতেই হবে।

মিয়ানমার ক্রমে গৃহযুদ্ধে ছেয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে দেশটির তাতমাদো নামের সশস্ত্র বাহিনী গেল বছর ক্ষমতা দখলের পর থেকেই এই হানাহানি শুরু হয়েছে। আর এখন একটি গোপন নেটওয়ার্কের সহায়তায় সামরিক বাহিনী ছেড়ে দলে দলে চলে যাচ্ছেন সেনারা।-খবর বিবিসির

ফেসবুক ও টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে নেটওয়ার্কটি। তাদের কাছে রোজই সহায়তা চেয়ে বার্তা আসে। কেবল ৪৪ বছর বয়সী আগনি লে-ই না, আরও শত শত স্বেচ্ছাসেবী ‘পিপলস এমব্রেস’ নামের এই নেটওয়ার্কে কাজ করছেন।

মোহমুক্ত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তায় এগিয়ে আসছেন তারা। আগনি লে বলেন, আমরা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। যারা সশস্ত্র বাহিনী ছাড়তে চায়, টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

মিয়ানমারের ভেতরে একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে অনলাইন লিংকের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়। তাতমাদো থেকে কাউকে বের করে নেটওয়ার্কে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে ব্যাপক সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কারণ এতে যে কোনো সময় তাদের তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। আর ধরা পড়লে প্রাণে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই।

তাদের তৎপরতায় অনেক ঝুঁকি। যদি সাবেক কমরেডদের হাতে আটক হন, তবে পরিণতি কী হতে পারে, তা জানা আছে আগনি লের। তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হবে।

ইতিমধ্যে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির গৃহযুদ্ধ ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে উঠছে। অং সান সুচির পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী।

ভোট জালিয়াতির অভিযোগে অভ্যুত্থানের ন্যায্যতা দিতে চাচ্ছে তাতমাদো। যদিও জালিয়াতির অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি দেশটির নির্বাচন কমিশন।

সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে লোকজন বিক্ষোভ নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে তাদের।

আগনি লে যখন সার্জেন্ট ছিলেন, তখন চারপাশের বিশৃঙ্খলায় তিনি বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। সবকিছুর জবাব খুঁজতে তিনি সামাজিকমাধ্যমে ঢোকেন। তিনি বলেন, সামাজিমাধ্যমে ঢুকে সেনাদের বিচারবহির্ভুত হত্যার ভিডিও দেখতে পাই। বিক্ষোভকারীদের ইচ্ছাকৃতভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। মাথায় গুলি করে তাদের হত্যা করা হচ্ছে।

আগনি লের কিশোর ছেলেকেও তাতমাদোতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই দৃশ্য তার কাছে বিভৎস বলে মনে হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী থেকে তিনি নিজের ছেলেকে রক্ষা করতে পারলেন না। এই ঘটনা তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

ছেলেকে সশস্ত্র বাহিনীতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলে তাকে সাজা দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত নেন, বাহিনীতে আর এক মুহূর্তও থাকবেন না।

অভ্যুত্থানের পরবর্তী পাঁচ মাসে পরিবারকে একত্রিত করে পাহাড়ে চলে যান তিনি। পিপলস এমব্রেস প্রথমে যাদের সহায়তা করেছে, আগনি লে তাদের একজন। এরপর তিনি নিজেও সংগঠনটির অংশ হয়ে যান।

বিদ্রোহীদের একটি মুক্ত এলাকায় দূর থেকে কাজ করেন আগনি লে। অঞ্চলটিতে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরা প্রভাব বিস্তার করছে। সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের জাতীয় ঐক্য সরকারের শাসন চলছে।

বছরের পর বছর ধরে মগজধোলাই থেকে পালিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম। পিপলস এমব্রাসের এক লাখের বেশি ফেসবুক ফলোয়ার রয়েছে। যারা সশস্ত্র বাহিনী ছেড়ে চলে আসতে যোগাযোগ করেন, প্রথমে তাদের তদন্ত করা হয়। নানা যাচাই বাছাই শেষে তাদের দলে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যাদের সফলভাবে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাদের খাবার, আশ্রয়, নিরাপত্তা ও বৃত্তি দেওয়া হয়। আগনি লে বলেন, যদি বন্ধুরা সামরিক বাহিনী ছেড়ে আসতে চান, তবে তারা এই লিংক পরস্পরের কাছে পাঠিয়ে দেন।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image