নিজস্ব প্রতিবেদক : কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দুই যাত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে ঞ-৪-৫ (এসি) বগিতে এই ঘটনা ঘটে।
বুধবার (২৫সেপ্টেম্বর) রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক ও রেলওয়ে সচিব বরাবারে অভিযোগ করেছেন ফারজানা মৃদুলা ও আমজাদ হোসাইন নামে দুই সংবাদকর্মী।
অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ্য করেন-গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে দুপুর ২ টা ৫৫ মিনিটের কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের ঞ-৪-৫ (এসি) বগিতে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ট্রেন ছাড়ার প্রায় ৩০মিনিট আগে এসি চালু করা হলেও ১% ঠান্ডা হয়নি। বগিতে থাকা অসুস্থ যাত্রীদের অনেক কষ্ট হচ্ছিলো, এমনকি বেশিরভাগ যাত্রীর অস্বস্তিতে থাকলে আমরা দুজনসহ অনেকেই এটেন্ডেন্টকে জিগ্যেস করেছি এসিতে আগে থেকে কোনো সমস্যা ছিলো কি না? জবাবে এটেন্ডেন্ট না বলে বার বার চেক করেছেন এসির বাতাস আসছে কি না। অবশেষে এই গরমে জানালা বন্ধ অবস্থায় প্রায় ১ঘন্টা পর সবাই মিলে এসি টেকনিশিয়ানকে বলতে গেলে তিনি এসির কন্ট্রোল রুমে কি জানি চেক করে বলেছে এটা সমাধান করা সম্ভব নয়। সিলেট থেকে এক্সপার্ট ঠিক করতে পারবেন।
প্রশ্ন করলাম তাহলে আপনি কি আগে থেকে জানতেন এই বগিতে সমস্যা সমাধান করা যাবে না? আর আপনি সমাধান করতে পারেন না? সে বলে না আগে কোনো সমস্যা ছিলো না। মূহুর্তেই ট্রেনের এক ঠান্ডা পানি বিক্রেতা এসে বলে বেশ আগে থেকেই এই বগিতে এসি গরম আজ আসার সময়ও সমস্যা হয়েছে! পরে এসি টেকনিশিয়ান পরিচয় দেওয়া লোকের পরিচিতি কার্ড দেখানোর কথা বলাতে রেগে যায় এবং বহু যাত্রী একসাথে দেখতে চাইলে বলে কার্ড নষ্ট হয়ে গেছে।
বিষয়টি অবগত করতে গার্ডকে ডাকা হয়েছে। গার্ডকে সমস্যা অবগত করলে সজিব নামের গার্ড বলেন উনাকে আগের গার্ড বিষটি সকালেই অবগত করেছেন বগিতে এসির সমস্যা রয়েছে কিন্তু কাজের চাপে তিনি কিছু করতে পারেনি। অতিগরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাত্রীরা গার্ডের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তিনিও দেখাতে পারেনি এবং আমাদের বিশেষ করে হুমকি দেয় এভাবে কোন সাহসে উনাকে প্রশ্ন করেছি দেখে নিবে বলে।
তবুও পরে আমরা গার্ডের কাছে একটা সমাধান চাইলাম। যেহেতু অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমরা এসি টিকিট কেটেছি হয়তো এসি ঠিক করে দেন না হয় আমাদের নন এসির ভাড়া রেখে বাকি টাকা রিফান্ড করার ব্যবস্থা করে দেন।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করে বলেন- গার্ড প্রথম রেগে গেলেও পরে বলেন পরবর্তী স্টেশনে এসি ঠিক করে দেওয়া হবে। আবারও এসি ঠিক করতে অপারগ হয়ে কয়েকজন যাত্রীকে দিয়ে আমাদের রিকোয়েস্ট করে টাকা রিফান্ড করার কথা দিয়ে ট্রেন ছেড়ে আসে ভৈরব স্টেশন থেকে। এরমধ্যে গার্ডসহ ট্রেনের স্টাফরা মিটিং করে আজমপুর স্টেশনে এসে আমাদের বাচ্চা ও আমাদের ২জনকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে এবং হত্যা করার প্ল্যান করে, বিষয়টি একজন যাত্রী শুনে আমাদের অবগত করলেও আমরা বিশ্বাস করিনি। পরে আমরা খাবার খেয়ে আমি প্লেট পরিষ্কার করেতে ওয়াশ রুমের দরজা খোলেই পরিষ্কার করা শুরু করামাত্র এসি টেকনিশিয়ান আমাকে ভিতরে দেখে চলন্ত ট্রেনে বেশ জোরে দরজা বন্ধ করে বাহির থেকে লক করে দেয়। আমি ভয়ে দরজায় বারবার লাথি দেওয়াতে লক খোলে সে অন্যত্র চলে যায়। বের হয়ে আমি ভিতরে আসার সাথে সাথে আজিমপুর স্টেশনে রেল থামলেই প্রায় ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ আমাদের বগিতে এসে অসত্য ভাষায় আমাদের গালি দিয়ে সবাইকে চেক করে কে বা কারা এখানে সাংবাদিক তাদের শেষ করে দিবো এছাড়া যতরকম খারাপ ভাষা আছে।
তখন পিছনের সিটের হিন্দু ধর্মের এক মহিলা আমাদের বাবুকে উনার বাচ্চা বলে নিজের কাছে নিয়ে যায় এবং অন্যযাত্রীরা আমাদের বাচ্চাকেও আমাদের রক্ষা করে। আমাদের না পেয়ে সন্ত্রাসীরা বগি থেকে বের হওয়ার পর স্টাফরা বাহির থেকে আমাদের দেখিয়ে দেয়, একদিকে গার্ড সজিব ভিতরে এসে বলে দেখলেন খেলা বেঁচে গেলেন আপাতত আর অন্যদিকে বাহির থেকে আমাদের অস্ত্র দিয়ে হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
আমরা নিরুপায় হয়ে সিলেটের বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীকে অবগত করি এবং সিলেটের সেনাবাহিনীর নাম্বারে কল দিয়ে সাহায্য চাইলে সেনাবাহিনী পুলিশকে দায়িত্ব দেয় আর শাহজালাল নামের সেই পুলিশ আমাদের কিছু জিগ্যেস না করেই কোনো রকম সাহায্য না করে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের কাছে তথ্য দেয় কিছুই হয়নি এতে কন্ট্রোল রুমও আমাদের নিরুপায় করে দেয়। এই অবস্থায় কয়েকজন যাত্রী পুলিশকে প্রশ্ন করে আপনি আমাদের কিছু জিগ্যেস না করেই কিভাবে রিপোর্ট দিলেন? এতে পুলিশও আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
এসির সমস্যা আর সমাধান হয়নি, সন্ত্রাসী ও সিন্ডিকেটদের ভয়ে যাত্রীরা চুপ হয়ে যায় আর বাকি রাস্তা গার্ড, টেকনেশিয়ান ও তার বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের রক্তচক্ষু দেখে দেখে সিলেট স্টেশনে এসে তাদের না পেয়ে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে আমরা সিলেট স্টেশন থেকে গভীর রাতে বাসায় ফিরে আসি।এবং ২৩ সেপ্টেম্বর একই বগিতে করে ঢাকা আসলে আবারও এসি সমস্যাসহ বেশকিছু সমস্যা পাওয়া যায়।
অভিযোগপত্রে তারা ট্রেনের আরও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: