
নিউজ ডেস্ক: আগামী ১৯ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে খুলছে সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র। দর্শনার্থীদের পদচারণায় আবার ভাঙবে সুনসান নীরবতা। দীর্ঘদিনের নিস্তব্ধ কেন্দ্রগুলো খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। শেষ মুহূর্তে ধোয়ামোছা, রং করা, রাইডের যন্ত্রাংশগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কাজগুলো সেরে নিচ্ছেন সংশ্নিষ্টরা।
ব্যবসায়ীদের আশা, দীর্ঘদিন ঘরে থাকা মানুষের পদচারণায় আবার জেগে উঠবে পর্যটন কেন্দ্র। দফায় দফায় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবেন তারা।
এ বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে গত এপ্রিল থেকে আবার বন্ধ হয়ে যায় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন ব্যবসায় জড়িত নানা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব, শুধু গত ঈদুল আজহায় ২৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে এ খাতে। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বারবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে এ খাতের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্র খোলার খবরে এ খাতে প্রাণ ফিরেছে। ইতোমধ্যে হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে শুরু হয়েছে আকর্ষণীয় অফারের বিজ্ঞাপন। ট্যুর অপারেটরগুলো ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভ্রমণের অফার দিচ্ছে। দীর্ঘদিন বেকার থাকা কর্মীরা ফিরতে শুরু করেছেন কর্মস্থলে।
কমিউনিটি সেন্টারগুলোতেও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে। করোনায় বন্ধ থাকা কমিউনিটি সেন্টারগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার কনভেনশন হল অ্যান্ড ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিসিএ) সভাপতি শাহ জাকির হোসেন বলেন, করোনায় চার হাজার কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হল বন্ধ থাকায় প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। দীর্ঘদিন পর কমিউনিটি সেন্টার খুলে দেওয়ায় তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খোলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মাঠ প্রশাসন।
সাগরকন্যা কুয়াকাটার হোটেল রিসোর্টগুলোতে চলছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম মোতালেব শরিফ জানান, ১৯ আগস্ট থেকে শর্তসাপেক্ষ হোটেল-মোটেল খোলার আদেশের একটি চিঠি পেয়েছি।
সে অনুযায়ী হোটেল-মোটেল খোলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে, তাদের যথাসময়ে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে। হোটেল-মোটেলে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানা হবে বলেও জানান তিনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কুয়াকাটায় পর্যটন খাতে শতকোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ইমতিয়াজ সিদ্দিক (আসাদ) জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাঙামাটিতে সবমিলিয়ে হোটেল-মোটেলে ক্ষতি প্রায় পাঁচ কোটি টাকার। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার পাশাপাশি এ খাত টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রণোদনা দেওয়া দরকার।
এদিকে, দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হলেও সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্র আগামী ১৯ আগস্ট খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। ফলে সুন্দরবনে প্রবেশে পর্যটকদের অপেক্ষা বাড়তে পারে। এ বিষয়ে আগামী সোমবার বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন আলোচনা করবে বলে জানান ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আযম ডেভিড।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরনের মৎস্য ও কাঁকড়া শিকার বন্ধ রাখার ঘোষণা রয়েছে আগে থেকেই। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রও পড়েছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: