জাকারিয়া মিঞা, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বন্যা পরবর্তী ধরলার অব্যাহত ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম ও পশ্চিম ধনিরাম এবং নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়কমন্ডল গ্রামের বিস্তৃর্ণ এলাকা। অব্যাহত ভাঙ্গনে নদী গিলছে যাতায়াতের রাস্তা, বসতভিটা, ফসলি জমি। নিঃস্ব হচ্ছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। ব্যাপক হারে কমছে চাষাবাদের জমি। ধরলার কড়াল গ্রাসে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামগুলোর মানচিত্র।
সরেজমিনে গিয়ে ভাঙ্গনের এ চিত্র দেখা গেছে। ভাঙ্গন কবলিত পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ও মজিবর রহমান বলেন- ধরলার অব্যাহত ভাঙ্গনে আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমাদের গ্রামের ৬ জনের বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। মোস্তফা সরকার ও আবুল হোসেন বলেন, শত শত একর আবাদি জমি ধরলার পেটে চলে গেছে। আমাদের যাতায়াতের প্রায় ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। আমাদের এখন জমির আইল দিয়ে চরম ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে চর ধনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে গেলে বাচ্চাগুলোর কি হবে, কোথায় পড়বে তারা? ধরলার ভাঙ্গনে বসতবাড়ি হারানো হাফেজা বেগম বলেন, দীর্ঘদিনেও ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরা আজ নিঃস্ব। আমার স্বামীর নিজস্ব কোন জমিজমা নাই। মামা শ্বশুর আমাদের বাড়ি করার জন্য ১০শতাংশ জমি দিয়েছিল তাও নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন সন্তানদের নিয়ে কোথায় থাকবো? নূর মোহাম্মদ (৬৫) বলেন, আমার সাত বিঘা ফসলি জমি ছিল। তাতে চাষাবাদ করে সংসার চালাতাম। ধরলার ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আমার সমস্ত জমি নদীর পেটে চলে গেছে। খাব কি, থাকবো কোথায়? আমার মত এখানে অনেকেই জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
ধরলার তীব্র ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারা জোবেদ আলী, কোরবান আলী, শহর উদ্দিন, দেলোয়ার মিয়া, ফুলবর রহমান, জব্বার আলী অভিযোগের সুরে বলেন- শুনেছি ধরলার ভাঙ্গনরোধে সরকার মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাঙ্গন রোধে কোন কাজ কেউ করেনি। যারা কাজ পেয়েছে তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আর এদিকে আমরা ভিটেমাটি হারাচ্ছি।
ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নিলে আজ আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারাতে হতো না। পূর্ব ধনিরাম গ্রামের রহিমুল্লাহ ও জাইদুল হক বলেন, নদীর ভাঙ্গনের তীব্রতা খুব বেড়েছে। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নদী এখন আমাদের বাড়ির কাছে চলে এসেছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের অনেকের বাড়িভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: