
মো.জহিরুল ইসলাম.মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা বাগানে নারী শ্রমিকদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে চা শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রায় দুপক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল এগারোটায় দিকে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের রাধানগরে জেরিন টি গার্ডেনে এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
আহতরা হলেন জেরিন চা বাগানের শ্রমিক মামুন মিয়া (২৪), অঞ্জলী ব্যক্তি (২৫), ছন্দা সবর (৩৫), বিশ্বমনী রিকিয়াশন(২৬), পারুল বেগম(৩০), ভারতী সাওতাল (৪০), অনিতা গোয়ালা (৪০), আলো মনি বাড়ই (২৫), সৃতি সাংমা (৪০), মুসলিম মিয়া (২০), উত্তম গড়াই (২৫), আব্দুল কাদির (২৬), ইন্দ্রজিত দাস (২৫) ও ঢাকা থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতা মো. রাফি (২৯), মো. রাসেল মিয়া (২৭)।
এসময় ছাত্রলীগ নেতাদের ছবি তুলতে নিষেধ করায় জেরিন চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজারকে মারধোর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে চা বাগানের শ্রমিকরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে ও একটি রিসোর্টে ভাংচুর চালায়।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকার গ্রান্ড মোবিন রিসোর্টে ঢাকার ইব্রাহিম হোসেন, আবিদ হোসেন, মামুন মিয়া, মেহেদী হাসান, রাজ্জাক মিয়া, আনোয়ার হোসেনসহ ২০ থেকে ২২ জন অতিথি পাশ্ববর্তী ইস্পাহানি চা কোম্পানীর জেরিন বাগানে প্রবেশ করে চা পাতা চয়নরত নারী শ্রমিকদের ছবি তুলে। এসময় নারী চা শ্রমিকরা বিনা অনুমতিতে কাটা তারের বেড়া পেড়িয়ে চা বাগানে প্রবেশ ও অপ্রস্তুত তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন।
এতে বাধা উপেক্ষা করে পর্যটকরা আবারও ছবি তোলার চেষ্টা করলে নারী শ্রমিকরা বাগানের সাহেব ও বাবুদের খবর দেয়। এই ঘটনায় হামলায় দুই পক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে গ্র্যান্ড মুবিন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম হোসেন ও ঢাকার উত্তর ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের আরো ১৮ নেতাকর্মী গত বুধবার রিসোর্টে উঠেছিলেন। বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টার দিকে তারা রিসোর্টের পার্শে জেরিন চা বাগানের ৯ নং সেকশনের কালাবন এলাকার ছবি তুলছিলেন।
এ সময় ওই এলাকায় কর্মরত মহিলা চা শ্রমিকরা তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করলে শ্রমিকদের সাথে নেতাকর্মীদের কথা কটাকাটি হয়।পরে হামলার ঘটনাটি ঘটে । খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুছ ছালেক, ওসি (অপারেশন) নয়ন কারকুন, ওসি (তদন্ত) হুমায়ন কবিরসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা বলেন, রিসোর্টের পাশের চা বাগানে নারী শ্রমিকরা চা পাতা তুলার কাজ করছিলো। চা বাগানে নারী শ্রমিকরা খুব কম কাপড় পরে কাজ করে। এ সময় ঢাকা থেকে আসা ছাত্রলীগের কর্মীরা চা বাগানে ঢুকে নারীদের ছবি তুলছিলো। চা বাগানের শ্রমিকরা ও আমাদের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আলী তাদেরকে ছবি তুলতে নিষেধ করলে তারা ডেপুটি ম্যানেজারকে গাল মন্দ করে।
তিনি আরোও বলে জানান,বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা আমাদের ডেপুটি ম্যানেজারের গায়ে হাত তুলে। তাকে টেনে রিসোর্টে নিয়ে যেতে চাইলে চা বাগানের শ্রমিকরা বাধা দেয়।
ছাত্রলীগের কর্মীরা নারী শ্রমিক ও ম্যানেজার এর উপর হামলা করে, শ্রমিকরা চা বাগানের পাগলা ঘন্টা বাজালে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে রিসোর্টে যায়।পরে আমরা গিয়ে শ্রমিকদেরকে শান্ত করে বাগানে কাজে ফিরিয়ে এনেছি।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চা বাগানে ছবি তুলা নিয়ে স্থানীয় চা শ্রমিকদের সাথে একটু কথা-কাটাকাটি হয়েছিলো। পরে স্থানীয়রা এসে এটির একটি সমাধান করে দিয়েছেন। তবে তাদের (ছাত্রলীগ নেতাদের) উপর হামলার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ছবি তোলা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির জেরে চা শ্রমিক ও ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে সামান্য বাকবিতন্ডা হয়েছে এবং ছাত্রলীগ কর্মীরা যে রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন সেটি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে বাগান কর্তৃপক্ষ বা ছাত্রলীগ নেতারা কোন পক্ষই থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেন নি।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: