
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীতের শুরুতেই পড়েছে পিঠা বিক্রির ধূম। প্রতিদিন শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রায় চার লাখ টাকার পিঠা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন পিঠা বিক্রেতারা।
প্রতিদিন বিকেল ৪টার পর থেকেই জেলার সদর সহ পৌর এলাকার প্রধান সড়ক গুলোতে বিভিন্ন মহল্লার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসে পিঠা বিক্রেতারা। রাত ১০/১১টা পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। অনেকেই এসব স্থান থেকে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এ ছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন জেলার সড়কের ফুটপাতে বাইপাস মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কের পাশে ফুটপাতের প্রায় একশত দোকানে পিঠা বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে ৩৫টি দোকানে বেচা-বিক্রি বেশী হয়। বাকী ৬৫টি দোকানে বেচা-বিক্রি তুলনামূলকভাবে কম।
এসব দোকানে চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, চুয়া পিঠা (চুক্কা পিঠা) ও পোয়া পিঠা (তেলের পিঠা) বিক্রি করা হয়। চিতই পিঠা ও চুক্কা পিঠার সাথে সরিষা ও শুটকির ভর্তা দেয়া হয়। অপরদিকে ধনে পাতা ও মরিচ এবং নারকেল ও গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরী করা হয়। প্রতিটি ভাপা পিঠা, পোয়া পিঠা ও চিতই পিঠা ১০টাকা করে বিক্রি করা হয়।
শহরের আধুনিক সুপার মার্কেটের সামনে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সামনে ও পৌর সুপার মার্কেটের কোনায় থাকা পিঠার দোকানগুলোতে থাকে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড়। প্রতিদিন বিকেলের পর থেকেই এসব দোকানের সামনে থাকে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের ভীড়। অনেকেই এসব দোকান থেকে ৮/১০টি করে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায় , শহরের কুমারশীল মোড়, সড়ক বাজার, পৌর সুপার মার্কেটের সামনে, সিটি সেন্টারের সামনে, কান্দিপাড়ার মোড়, কালীবাড়ি মোড়, পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের সামনে, টান বাজার, মৌলভীপাড়া, কাজীপাড়া ঈদগাহ মাঠের সামনে, মধ্যপাড়া বর্ডার বাজার, গোকর্ণঘাট বাজার, ভাদুঘর বাজার, মেড্ডা বাসষ্ট্যান্ড, ঘাটুরা বাইপাস সড়কের মোড়, সড়ক বাজারের গোলচত্বর সহ বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড, র্মিজাপুর মোড়ে,সরাইল বি্শ্বরোড সড়কের, আখাউড়া সড়ক বাজার, বড়বাজার স্টেশন রোড, কসবা টেম্পু স্ট্যান্ড, নতুন বাজার, পুরান বাজার বাঞ্ছারামপুর মরিচাকান্দি, দরিয়া দৌলত, নবীনগর থানার সামনে, নাসিরনগর ফুটবল খেলার মাঠের সামনে, টেম্পুস্ট্যান্ড ফুটপাত সহ প্রায় একশত দোকানে প্রতিদিন পিঠা বিক্রি হয়।
শহরের পৌর শহরের সাবেরা সোবান স্কুলের পাশে গেটের সামনে ও ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফিক মিয়া। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিন ২০ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বিক্রি করতে পারেন তার দোকানে ভাপা পিঠাই বিক্রি হয়। তবে ভাপা পিঠার চাহিদা একটু বেশী। তিনি প্রতিটা পিঠা ১০টাকা থেকে২০টাকা ধনিয়া পাতা কাঁচা মরিচ ও মিষ্টি পিঠা বিক্রি করেন।
পৌর মার্কেটের সাথে পিঠা ক্রয় করেন জুমন কাদের তিনি বলেন, আগে আমি বিকেলে হোটেল থেকে পুরি, সিঙ্গারা ও পিয়াজু কিনে খেতাম। শীত আসার পর থেকে পিঠা কিনে খাই।
এ ব্যাপারে স্কুল শিক্ষিকা হোসনা আক্তার বলেন, সারাদিন পরিশ্রমের পর বাড়িতে আর পিঠা বানাতে ইচ্ছে করেনা। মাঝে মাঝে ছেলে-মেয়েদের জন্য কোর্ট রোড এলাকার ফুটপাত থেকে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহবায়ক আবদুন নূর
মানবাধিকারকর্মী মনিরুজ্জামান মনিরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পিঠা আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য, বর্তমান সময়ে এই ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। শীতের পিঠা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের ধারনা খুবই কম। তিনি বলেন মানুষ এখন শহরমুখী। জীবন-জীবিকা নিয়ে মানুষ এখন ব্যস্ত। তাই সন্তানদেরকে পিঠা তৈরী করে খাওয়ানোর মতো সময় তাদের খুবই কম । তিনি বলেন, রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে মূলত ভাপা পিঠা ও চিতল পিঠা বিক্রি করা হয়। অন্য পিঠাগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / মনিরুজ্জামান মনির/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: