দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্ত্বাবধায়ক বেগম রোকেয়া সিদ্দিকার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজারসহ ২৭৮ জন নার্সিং কর্মকর্তার (সিনিয়র স্টাফ নার্স) স্বাক্ষর সম্বলিত এক অভিযোগপত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দাখিল করা হয়েছে। পত্রের অনুলিপি
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বৈষস্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সংশ্রিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তারা জানান ভারপ্রাপ্ত - সেবা তত্ত্বাবধায়ক বেগম রোকেয়া সিদ্দিকার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মানসিক নির্যাতন এবং হুমকির শিকার হয়েছেন নার্সিং কর্মকর্তারা। ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্ত্বাবধায়ক ও তার সহযোগিদের ঘুষ, দূর্নীতি ও অপকর্মসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলেত গেলে তিনি আওয়ামীলীগ ও তার ছেলের আওয়ামীলীগের রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা থাকায় আমাদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখাতেন এবং অন্য হাসপাতালে বদলির হুমকি দিতেন।
তার ঘুষ, দূর্নীতি ও অপকর্মের বিষয়ে অত্র হাসপাতালের পরিচালক এটিএম নুরুজ্জামানকে অবহিত করলেও তিনি কোন পদক্ষেপও নেননি। বরং আমাদের অভিযোগগুলো সরাসরি নার্সিং অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অধিদপ্তরে পাঠানোর পরামর্শ দেন। আজ যখন দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ বৈষম্য, ঘুষ, দূর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, সে সময়ে আমরা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপারভাইজার ও সাধারণ নার্সরা আমাদের হাসপাতাল রক্ষার্থে ও নির্ভয়ে রোগির সেবা ও সেবারমান নিশ্চিত করতে দুর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়াতে সম্মত হয়েছি।
তার দূর্নীতি ও অপকর্মসমুহ নিম্নরূপঃ সুপারভাইজার এবং সিনিয়র স্টাফ নার্সদের সাথে অসদাচরন ও অশালিন ভাষায় কথা বলা, এসিআর বাবদ সকল সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিকট থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা, প্রতি মাসে বেতন বিল বাবদ চাঁদা উত্তোলন করা, অর্জিত ছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটি বাবদ মোটা অংকের টাকা ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে অত্র হাসপাতালে নার্সিং অধিদপ্তর থেকে অর্ডার নিয়ে আসা সেবা তত্ত্বাবধায়ক সবিতা মারিয়া রিবেরুকে অত্র হাসপাতালে যোগদান করতে না দেওয়া, ৩-৬ মাসের অধিক সময় ডিউটিতে অনুপস্থিত থাকা স্বত্বেও মাস্তুরা কাওসার তিথি, রানু বেগম, মমতাজ বেগমকে টাকার বিনিময়ে হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখিয়ে হাজিরা খাতা এবং রোস্টার ম্যানেজ করা, টাকা ও বিভিন্ন উপহারের বিনিময়ে রশিদুল ইসলাম, সুমন বিশ্বাস, হামিদা পারভীন, মোহসেনা খাতুন, রওশন আরা, সাহেবুন, মাসুদ রানা সবুজসহ আরো অনেক নার্সকে বছরের পর বছর নাইট ডিউটি না দেওয়া, অথচ অন্যান্য নার্সরা প্রতিমাসেই বাধ্যতামূলক নাইট ডিউটি করেন, নার্স সাহেবুন নাহার প্রতিদিন অফিসে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কোন দায়িত্ব পালন না করেই অফিস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন না করার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া, নিজের পছন্দমত ওয়ার্ড ইনচার্জ বানিয়ে টাকার বিনিময়ে তাদের দুই বছরেরও অধিক সময় ইনচার্জ হিসেবে রাখা ও কিছু ইনচার্জকে ব্যবহার করে সাধারণ নার্সদের কাছ থেকে টাকা ও বিভিন্ন উপহার গ্রহণ করা, যা নার্সিং অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপন বহির্ভূত কাজ, তার অবৈধ কাজ সম্পাদন করতে ৩ জন জুনিয়র নার্সকে স্থানীয় আদেশে সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া, বিভিন্ন ট্রেনিং এ নিজের পছন্দমত নার্স প্রেরণ করে তাদের নিকট টাকা নেওয়া এবং একই ব্যক্তিকে একাধিক বার ট্রেনিং এ পাঠানো, বদলির ফরোয়ার্ডিং ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যেতে টাকা নেন তিনি।
এছাড়াও সকল নার্সের ডিউটি ইউনিফর্ম বানিয়ে দেয়ার নাম করে জোরপূর্বক টাকা উত্তোলন করে অত্যন্ত নিম্নমানের কাপড় দিয়ে ইউনিফর্ম বানিয়ে দেয়া যা পরিধান যোগ্য নয় এবং যা তার এখতিয়ার বর্হিভূত কাজ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন নার্সেস দিবস, পরিচালক অথবা যে কোন নার্সিং কর্মকর্তার বিদায় অনুষ্ঠান বাবদ মোটা অঙ্কের চাঁদা উত্তোলন করে কোন কমিটি গঠন ছাড়াই স্বল্প পরিমান টাকা খরচ করে বাকী টাকার হিসাব দেন না। এবং অন্যত্র বদলির হুমকি দেখানো ও বিএসসি, এমএসসি উচ্চ শিক্ষায় অনুমতি প্রদান বাবদ মোটা অংকের টাকা গ্রহণ। এমনকি ইন্টার্ণ নার্সদের নিকট সার্টিফিকেট প্রদানের সময় টাকা আদায় করেন তিনি। তার এসব কাজে সহযোগিতা করে ও টাকা কালেকশন করে ১৯৯৯ সালে যোগদান করা আরজুমান লাকী ও ২০১৩ সালে যোগদান করা জান্নাতুল ফেরদৌসি নামে স্থানীয় আদেশে নিয়োগ পাওয়া হাসপাতালের দুইজন সুপারভাইজার। অভিযোগে তারা প্রদত্ত তথ্যসমূহ সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্ত্বাবধায়ক) বেগম রোকেয়া সিদ্দিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুপারভাইজারসহ সাধারণ নার্সকে পরাধিনতার শৃংখল থেকেসাস মুক্তির লক্ষ্যে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: