• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

৪০ বিঘার ফসলে ট্রাক্টরের চাষে নিমিষেই বিবর্ণ কৃষকের স্বপ্ন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০১:০০ পিএম
৪০ বিঘার ফসলে ট্রাক্টরের চাষে নিমিষেই
বিবর্ণ কৃষকের স্বপ্ন

নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ে ৪০ বিঘা ফসলি জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে নষ্ট করা হয়েছে খেতের ফসল। ধার দেনা আর ঋণ করে ফসল আবাদ করলেও শেষ পর্যন্ত ফসল ঘরে তোলা হয়নি জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মালচন্ডি বগড়ডাঙ্গা এলাকার প্রায় ৪০ জন কৃষকের। ঋণের কিস্তি পরিশোধের চিন্তা আর ফসলের খেত নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

এই ঘটনায় সোমবার (২৮ নভেম্বর) আব্দুল হাই নামে এক ব্যক্তি ২৮ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো ২১০ জনের কথা উল্লেখ করে দেবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিস্তীর্ণ চরে নারীরা খেতে কাজ করতে গেলে পার্শ্ববর্তী সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নে আকন্দপাড়া এলাকার নজর আলীর ছেলে আব্দুর রশিদ ও কুমারগাড়ি এলাকার বছির মন্ডলের ছেলে আব্দুল আজিজের নির্দেশে প্রায়  দুইশত ভাড়াটে লোকের উপস্থিতিতে দুইটি ট্রাক্টর দিয়ে মুহূর্তেই করতোয়া নদীর পাড়ে প্রায় ৪০ বিঘা আবাদি জমিতে চাষ দিয়ে খেতের আলু, পিঁয়াজ, ভুট্টা নষ্ট করা হয়। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে এই ফসলগুলো বিক্রয় উপযোগী হতো। এতে প্রায় ১৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।

মামলার নথি ও ভুক্তোভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৭ সালের জানুয়ারির ১ তারিখে পত্তনী মালিক ওয়ারেজ আলী, কিনু মোহাম্মদ, হিরু শেখ ও ইমান হোসেনের নিকট থেকে ৬৫৫ নং দলিলে তিন একর, একই বছর ২৪ জানুয়ারি ৬৫৪ নং দলিলে তিন একর ও ৬৫৬ নং দলিলে তিন একর ও ২৮ জানুয়ারি ৬৫৭ নং দলিলে তিন একরসহ আরাজী সুন্দরদিঘী মৌজায় মোট ১২ একর জমির দলিল রেজিস্ট্রী করা হয়। প্রায় ৪৫ বছর ধরে এখানে ভুক্তভোগীরা চাষাবাদ করে আসছেন।

এরই মধ্যে আব্দুর রশিদ এই জমি নিজেদের বলে দাবি করেন এবং ভোগদখলকারীদের বিরুদ্ধে উক্ত জমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে গত ২৫ অক্টোবর  মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে। ভূমি কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন ও আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে ১৬ নভেম্বর আব্দুর রশিদ গং দুইটি ট্রাক্টর দিয়ে ফসলে খেতে চাষ দেন। যদিও আদালত খেতে চাষের বিষয়ে কোন আদেশ দেননি। 

ভুক্তভোগীদের দাবি আদালতে মামলা দায়ের হলেও তারা আদালত থেকে কোন প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাননি। এইদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল জলিলকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি উল্লেখিত জমিতে সরেজমিন তদন্ত না করেই অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে আব্দুর রশিদের পক্ষে মনগড়া প্রতিবেদন জমা দেন বলে অভিযোগ ভুক্তভগীদের।

এইদিকে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত বুধবার (২৯ নভেম্বর) আপিল করে সুরমান গং।

সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল জলিল অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন, সুরমান গং আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পূর্বে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেছিলাম। সেসময় উভয়পক্ষ উপস্থিত ছিলেন। এই সময় আব্দুল জলিল প্রতিবেদককে একহাজার টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে আছি। ইতিমধ্যে বিঘা প্রতি আড়াই কেজি ভূট্টার বীজ, টিএসপি, এমওপি সার দেওয়ার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে এসি ল্যাণ্ডকে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবীগঞ্জে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল হোসেন বলেন, আসামী গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
এই বিষয়ে আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image