• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সংখ্যালঘু ছাত্র-শিক্ষকের গল্পগুলো একই


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৪৯ পিএম
কুশল
শিক্ষক অপমানের প্রতীকী ছবি

মুখে হয়ত অসাম্প্রদায়িকতার পরমতসহিষ্ণুতার অনেক বড় বড় লেকচার দিলেও, আমরা অনেকেই দেখি বা জানি দেশ কোন দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি দেশের এক বড় অংশের মানসিকতা দেখতে চান, আপনাকে বেশিদূর যেতে হবে না, শুধু যেকোনো হিন্দু এবং ভারতের সাথে সংস্পর্শ আছে এমন কোন নিউজের নিচে শুধু কমেন্টগুলির দিকে দৃষ্টি দিবেন। তবে কাউকে আর বোঝাতে হবে না, নিজেই বুঝে যাবেন দেশ কোন অজানা তেঁতুল তলার পথে দিকে যাচ্ছে। শুধু হিন্দু না, সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মুক্তবুদ্ধির চর্চা যারা করেছেন, যারা জাতির বিবেক বলে খ্যাত, সেই অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার, শ্রদ্ধেয় কামাল লোহানি দেশের এ কৃতি সন্তানদের মৃত্যুর নিউজে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ ফিডের নিচে কমেন্ট দেখে আমাদের আঁতকে উঠতে হয়।অজানা একটা ভয় কাজ করে। চারিপাশকে অপরিচিত মনে হয়।খ্যাতিমান শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার করোনা আক্রান্তের নিউজের নিচে, কিছু মানুষ নামধারী দু'পেয়ে জন্তুর বিকৃত আনন্দ উল্লাসে আমাদের ভাষা হারিয়ে যায়। বন্যা ম্যাডামের অপরাধ, সে কেন সংস্কৃতি চর্চা করে? রবীন্দ্র সংগীত চর্চা করে? এবং কপালে কেন লাল টিপ দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

 ২০২০ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET)-এর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার। উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পাবার আগে তিনি ছিলেন ইইই বিভাগীয় প্রধান, ইইই অনুষদের ডিন, একাধিক হলের প্রভোষ্ট এবং বুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক। এছাড়াও তিনি সার্ক ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স-এর টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন পরামর্শদাতা হিসাবে এবং ডিপিডিসি এবং বিটিসিএল-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য । অধ্যাপক সত্য প্রসাদ ১০০ টিরও বেশি এম. এসসি ইঞ্জিনিয়ারিং থিসিস এবং ৬টি পিএইচ. ডি গবেষণাগার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০ টিরও অধিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ, রেফার্ড জার্নালস এবং কনফারেন্স প্রসিডিংস প্রকাশ করেছেন। ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারের একাডেমিক ক্যারিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান স্যার; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ স্যার; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান স্যার সহ দেশের প্রায় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের থেকেই সম্ভবত বেশী। কিন্তু এরপরেও বিধি বাম, কারণ তিনি এদেশে সংখ্যালঘু। যোগ্যতা থাকার পরেও নিউজ ফিডে নিকৃষ্টতম কমেন্ট করা ব্যক্তিদের মতে, তার অপরাধ সে হিন্দু, সে মালাউন, সে কাফের, সে ভারতের দালাল, সে জঙ্গি ইসকনের সদস্য ইত্যাদি ইত্যাদি বহু কিছুই। ভয় ডয়ের কিছুই নেই, চামড়ার মুখ দিয়ে শুধু সংখ্যালঘু হিন্দুদের নামে যা কিছুই বলেন না কেন; এতে শুধু হিন্দুরা ছাড়া কারোই খুব একটা কিছুই যায় আসে না। যদি সত্যি কারো আসতো যেত, তাহলে প্রশাসন চাইলেই তাদের ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারত। বর্তমানে পূর্বের মত ফেক আইডি নেই। অধিকাংশ আইডিই রিয়েল। যারা অশ্লীল কমেন্ট করছে, তাদের অনেকের টাইমলাইনে যেয়ে দেখলাম, তারা তাদের বিভিন্ন পোস্টে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেয়া। উপলব্ধি করলাম, একটি অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে ঢাল হিসেবে সামনে রেখে ব্যক্তিগত সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি চরিতার্থ করছে এরা।

এ তো গেল  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংখ্যালঘু একজন মজুমদার শিক্ষকের গল্প, এখন একজন মজুমদার ছাত্রের গল্প করা যাক। ২০১৬ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ তম সমাবর্তনের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের এবং মীর মোশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র মৃন্ময় মজুমদার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে যাওয়ার পথে ঘটে একটি অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ বিকৃতমস্তিষ্ক ঘটনা। ঘটনাটি খুবই ছোট, কিন্তু এর মাধ্যমে দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের চিনতে এবং বুঝতে আশাকরি আমাদের সহায়তা করবে। মৃন্ময় মজুমদার ২৭.৬.১৬ তারিখ সোমবার রাত্রে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিল। রাত্রি ৩ টার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি তাকে ফলতিতা বটতলা বাসস্টপে নামিয়ে দেয়। এ বাসস্টপ থেকে মৃন্ময় একটি ভ্যানে করে বাড়ির পথে অগ্রসর হয়। এমন সময়ে কলকলিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে তিন অস্ত্রধারী আততায়ী তাকে জোর করে বেঁধে ফেলে এবং টাকা পয়সা,মোবাইল সহ যা কিছুই সাথে ছিল তা সকলই কেড়ে নেয়। গল্পের এতটুকু ঠিক আছে, একজন ছিনতাইকারীরা যা করে বা যেমন হয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি ছিনতাইকারীরা এর পরে যা করেছে, তা একজন ছিনতাইকারীর কাজ না। এর পরে ছিনতাইকারীরা মৃন্ময় মজুমদারের কাছে তার ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায়। মৃন্ময় চুপ থাকে। কিন্তু তারা উত্তেজিত হয়ে বারবার তার ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায়। ওদের বারবার বলাতেও মৃন্ময় তার ধর্মীয় পরিচয় না দেয়ায় ; এ ছিনতাইকারী নামক সাম্প্রদায়িক আততায়ীরা মৃন্ময়কে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের স্টাইলে তার প্যান্ট খুলে তার ধর্মীয় পরিচয় পরীক্ষা করে। যখন বুঝতে পারে মৃন্ময় হিন্দু, তখন মালাউনের বাচ্চা সহ অসংখ্য গালাগালি করে তাকে এলোপাথাড়ি চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। কোপগুলো মৃন্ময়ের গলা, হাত, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানকে প্রচণ্ড আহত করে। সে তখন মৃত্যুর অভিনয় করে, এতে কোনমতে তার জীবন রক্ষা পায়। পরবর্তীতে সে খুলনা মেডিকেল কলেজে দীর্ঘসময় চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হয়। 

ভারতের উত্তর প্রদেশে এক সংখ্যালঘু হত্যাকে কেন্দ্র করে ভারতে রাষ্ট্রযন্ত্রের অসহিষ্ণুতার অভিযোগে ভারতের অসংখ্য সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা তাদের সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কার ফেরত দিয়ে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এত এত সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যায় রাস্তায় নেমে সামান্য প্রতিবাদ বা তাদের পুরস্কার ফেরত দেয়াতো দূরে থাক, তারা সামান্য টুঁ-শব্দটিও না করে মৌনীবাবা হয়ে বসে থাকেন। পাছে তাদের সুযোগ সুবিধা হাতছাড়া হয়। দেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন হলে শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক আবুল বারাকাত, অধ্যাপক রেবায়েত ফেরদৌস স্যারদের মত কয়েকজনকে বাদ দিলে অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী নামধারীদের মুখমণ্ডলেই বিরাজ করে শ্মশানের নীরবতা। এ সময়ে এরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। দেশীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া কথিত জাতির বিবেকদের টকশোতে টকাশ-টকাশ কথা বলা ছাড়া আর খুঁজেও পাওয়া যায় না।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যেমন করে লুঙ্গি, প্যান্ট খুলে ধর্ম নির্ধারণ করা হত, বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর ২০১৬ সালে এসেও যদি সংখ্যালঘু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের একই পদ্ধতিতে ধর্ম নির্ধারণকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়; ২০২০ সালে এসে নিজের যোগ্যতায় উপাচার্য হওয়া একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ার অপরাধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অখাদ্য গালি শুনতে হয়; তবে আর আমাদের কিছুই বলার নেই।সংখ্যাগুরুদের রাষ্ট্রধর্মের দেশে, সংখ্যালঘু হতে হতে শুধু কথিত অসাম্প্রদায়িক ঝর্ণাধারায় স্নান করতে করতে আমরা কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব দেশ থেকে? প্রতি দশকের জনগণনায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ১৯৭১ এর অভিশপ্ত দিনগুলোর মত টুকরো টুকরো ঘটনাবহুল দিন, কেন বারবার ফিরে আসবে সংখ্যালঘুদের জীবনে? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত উপাচার্যকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথার মারপ্যাঁচে যারা অপমানিত করে উলঙ্গ করতে চেষ্টা করেছে এবং তেমনিভাবে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে ধর্মের কারণে দৈহিক উলঙ্গ - এ মজুমদার ছাত্রশিক্ষকের দুটি ঘটনায় একটিই যোগসূত্র আছে ; সে যোগসূত্রটি হল স্বাধীনতাবিরোধী তীব্র সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ।

২০১৬ সালে দেখেছি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুরোহিত, মন্দিরের সেবায়েত, বৌদ্ধ ভিক্ষু, পাদ্রী, ব্যবসায়ী, কলেজ শিক্ষক, কবিরাজের সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অকারণে হিংস্র শ্বাপদের চাপাতির শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। একটু সচেতন ভাবে কান পাতলে, টের পাওয়া যায় পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা দেশে এখনও কতটা সক্রিয়। তাই রাষ্ট্রযন্ত্রকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিক হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, ২০১৬ সালে এসে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ঘটনায় তা চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। ঘটনাগুলি অনেকেই দেখেছি, শুনেছি এবং যথারীতি ভুলেও গিয়েছি।শুনেছি গোল্ডফিশের মেমোরি নাকি এক সেকেন্ড থাকে, আমার মনে হয় বিভিন্ন ঘটনার ঘনঘটায়  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেমোরি এ গোল্ডফিশের মতই হয়ে গেছে।সংখ্যালঘু নির্যাতনে অধিকাংশ ঘটনাতে বিচারহীনতা তাদের আরও ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে।ঘটনা ঘটলে গালভরা অসাম্প্রদায়িকতার বাণী শুনতে শুনতে সংখ্যালঘুরা আজ ক্লান্ত, অনেকটাই দিশেহারা। ২০২২ সালে এসেও সংখ্যালঘু ছাত্র এবং শিক্ষকের ভবিতব্য একই বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। ঘটনাগুলোর স্বরূপ হয়ত আলাদা। কিন্তু মূলভাব একই। 

১৭.০৬.২০২২ শনিবার নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সাম্প্রতিক আলোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে।  

১৭ জুন নড়াইলের ওই কলেজের ছাত্র পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু ছাত্র তাকে সেটি মুছে ফেলতে বলে।  এ পোস্টকে কেন্দ্র করেই ওঠে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ। এর জেরেই গুজব ছড়িয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় পড়ানো হয় জুতার মালা। নূপুর শর্মার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে, তাকে প্রণাম জানিয়ে ছাত্র রাহুল দেব রায় না হয় ধরে নিলাম অপরাধ করেছে।কিন্তু এক্ষেত্রে বেচারা শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের অপরাধ কি? কেন শিক্ষককে প্রহার ও জুতার মালা পরানোর হল? এর আসলে কোন যৌক্তিক কারণ নেই। শিক্ষক নাকি ধর্ম অবমাননা করেছেন। হায়রে ধর্ম অবমাননা! এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষক ছাত্রদের নড়াচড়া করলেও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আসে। বিষয়টি অত্যন্ত সাংঘাতিক এবং গুরুতর।

১৮ জুন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির সাথে সাথেই শিক্ষক   স্বপন কুমার বিশ্বাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় থানায় ফোন করেন। থানায় এ ফোন করাই নাকি তার অপরাধ হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ধর্মের অবমাননা হয়েছে। থানায় পুলিশের কাছে ফোন দিয়ে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস নাকি ঐ অভিযুক্ত ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন। জানিনা পুলিশেরও তাই ভাষ্য কিনা! পুলিশেরও যদি সেই ভাষ্য নাই হয়, তবে থানায় ফোন করার কারণে স্বপন কুমারকে যখন ছাত্র নামের কুলাঙ্গাররা জুতার মালা পড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তারা এর কোন প্রতিবাদ করেনি কেন?আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমারের মানসম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে এক প্রকার মানসিকভাবে  হত্যাই করে তাকে। এ অপমানকে হত্যা বলাই সঙ্গত, কারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীসহ হাজার হাজার মানুষের সামনে একজন শিক্ষককে বিনা দোষে মারধর ও জুতার মালা পড়িয়ে তা আবার গর্বের সাথে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হত্যা ছাড়া কিছুই নয়। ঘটনাটি শিক্ষক-ছাত্রের স্বাভাবিক  সম্পর্ককেও হত্যা করেছে। শিক্ষকের নির্যাতন প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, "কলেজ ভবন থেকে অভিযুক্তদের বের করে আনার সময় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ হয়তো জুতার মালা পরানোর বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। জুতার মালা পরানোর দু’একটি ছবি দেখেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে"।


কলেজের ক্যাম্পাসে রাখা শিক্ষকদের তিনটি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় কিছু ছাত্র নামক কুলাঙ্গারেরা ।কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ছাড়াও শিক্ষক প্রশান্ত কুমার রায় ও অজিত কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা হয়।ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক স্বপন কুমারের গলায় জুতার মালা পরানোর সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। উল্টো হেনস্তার শিকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে রাতারাতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। চূড়ান্ত হেনস্তার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষক স্বপন কুমার বলেন, "পুলিশ আমাকে কলেজের কক্ষ থেকে বের করে আনে। তখন দুই পাশে শত শত পুলিশ ছিল। এর মধ্যেই স্থানীয়রা আমাকে পুলিশের সামনেই জুতার মালা পরিয়ে দিল"। এভাবে সঙ্ঘবদ্ধতার আশ্রয় নিয়ে শিক্ষকের গলায় জুতার মালাই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কিভাবে পচন ধরে যাচ্ছে। জানিনা সে পচন আমরা কতটা রোধ করতে পারব! ভবিষ্যতই বলে দিবে আমাদের গন্তব্য কোথায়, 'তেঁতুলতলা' নাকি 'সত্যতলা'।


লেখক: কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 
সহকারী অধ্যাপক, 
সংস্কৃত বিভাগ, 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি

আরো পড়ুন

banner image
banner image