• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৭ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকান্ড, শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত! 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:০৯ পিএম
শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত! 
শামীম আহমেদ, ছবি: সংগৃহীত 

মোঃ সাইদুর রহমান 

ছাত্র/ছাত্রীরাই জাতির ভবিষৎ। তাঁরাই জাতির শেষ ভরসা। যুগ যুগ ধরে দেশের মানুষ ছাত্রদের প্রত্যয় যুক্ত সম্মান করে আসছে। ৫২ তে বুকের রক্ত দিয়ে ভাষার সম্মান রেখেছে। ৭১ স্বাধীনতার প্রাপ্তির অদম্য নেশায় ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকায় জীবন দিয়েছেল। ৯০ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচার নিপাত যাক আন্দোলনে ছাত্র /ছাত্রীরা বুক পেতে দিয়েছিল রাজপথে। ২৪ কোটা সংস্কার তেজদিপ্ত আন্দোলনে ছাত্র/ছাত্রীরা ছিল মুল চালিকা শক্তি। জীবন দিয়ে, জীবন বাজি রেখে তাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বীরদর্পণে। তাদের একদফা দাবির কাছে মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। 

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতের ভিক্তিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ছাত্রদের প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষের সবসময় স্বার্থহীন সমর্থন থাকে। কোন ছাত্রের শরীর থেকে রক্ত ঝরলে মনে হয়, সমস্ত জাতির রক্তক্ষরণ। শেষান্তরে অভিভাবকরা  তাকিয়ে থাকেন আমার সন্তান কখন পড়াশোনা শেষ করবে। অভিভাবকের কোন কিছু প্রাপ্তির চেয়ে সন্তানের ভবিষৎটা কোন দিকে যাচ্ছে সেটা দেখে মরতে চায়। সন্তানের লেখাপড়া পাশাপাশি মানুষ হিসাবে গড়তে গিয়ে অভিভাবকের ঘাম আর শুকায় না।ঘামে ভেজা শরীর ক্লান্তও হয়না কোনদিন। 

করোনায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস স্তূপে রেখে গেছে। তারপর সরকারের অপকল্পিত শিক্ষানীতি, সকালে এক শিক্ষানীতি বিকালে আরেকটা। শিক্ষার্থীরা অপকল্পিত শিক্ষানীতির যাঁতাকলে বিরামহীনভাবে পিষ্ট হতে থাকে। চাপিয়ে দেওযা শিক্ষানীতিকে শিক্ষার্থীরা বুঝা মনে করতো। করোনার পরবর্তীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভঙ্গুর পরিবেশকে, ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয় আওয়ামী লীগ সরকার। আজকে ছাত্ররা আগামীর ভবিষৎ কর্ণধার। তাঁরাই হবে দেশের রাজনীতিবিদ, দেশ পরিচালনায় অগ্রদূত। একটা জাতির অবকাঠামো ধ্বংস হলে পুষিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হলে পুষিয়ে নেওয়া জন্য আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দাবি আদায় হইছে, সরকার পরিবর্তন হইছে শিক্ষার্থীরা এখনও ক্লাসে ফিরছেন না কেন ? পড়ার টেবিলে একবার মরিচা ধরলে পরিস্কারে ব্যর্থ হবে সমাজ ও রাষ্ট্র। সময়ে ব্যবধানে দেখা যাবে পুরা জাতিতে মরিচা ধরেছে। মেধা শূন্য হবে আগামী,মেরুদণ্ডহীন হবে জাতি। 

৯০'র  স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহন করেছিলাম। এই আন্দোলন চলেছিল দীর্ঘসময় ধরে। বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল ছিল তত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে আর জাতিয় পার্টি ছিল ভিন্নমতে। যাইহোক ঘাতপ্রতিঘাত, রক্তঝরা রাজপথ, অনেক মায়ের বুকফাটা আর্তনাথের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন হলো। তখন ছিল " ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।" ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে নির্দেশনা আসলো ক্লাসে ফিরে যেতে। যেসব শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন তারা যদি কোন কারনে  ক্লাসে না আসে, তাদেরকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

একটা আন্দোলনে পক্ষ বিপক্ষে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেসব শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের বিপক্ষে ছিল তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নিবেন? প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ   না শিক্ষার্থী? আমি মনে করি শিক্ষার্থীরাই তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বরং আমরা সরকার পতনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখেছি শিক্ষক নির্যাতনের এক জঘন্যতম অধ্যয়, দেখেছি শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের বিভৎস দৃশ্যও ! জাবির শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবিতে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা!  এ সব ঘটনা সকল ধরনের অমানবিকতা, নির্মমতাকে পরিহাস করছে। আইনকে হাতে তুলে নেওয়ার অপসংস্কৃতিতে সমাজ ও মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ। 

শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ । আর তাতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। জাতি হবে মেধা শূন্য, রাষ্ট্র হবে পথভ্রষ্ট। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ভয়াবহ  সেশন জটের ভারে নুয়ে পড়বে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে বলতেছে, "হে বিবেকমান মানুষ আমাকে রক্ষা কর "। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যদি এ ভাবে শিক্ষার্থী নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে, তাহলে কোন অভিভাবক তাঁর সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবেননা। তখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলেও সুফলের মুখ দেখবেন না জাতি।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশ সীমা বাড়িয়ে লাভ কি? যদি সেশন জটের জালে আটকা থাকে শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারি চাকরির বয়স পড়ালেখার শেষ করার আগেই চলে যাবে। বাবা মা'র আকাশ ছুঁয়া স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আর তাঁদের স্বপ্নেঘেরা আশার প্রদীপটা রাষ্ট্র, সমাজের বুঝা হয়ে দাঁড়াবে। এখানেই শেষ নয়, একজন শিক্ষিত বেকার পরিবারের জন্য কতটুকু অসম্মানের ও অদৃশ্য বুঝা তা প্রতিটি সমাজ হাড়ে হাড়ে ব্যঙ্গ ইশারাতে বুঝিয়ে দেয়। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেই যে, শিক্ষার আলো দাউদাউ করে জ্বলবে তা ভাবা সমুচিত নয়। আগে দরকার প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দেশের ৮১% মানুষ দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া পক্ষে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পাহাড় পরিমাণ ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণে পরিশুদ্ধ উদ্যোগ দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি, শিক্ষার্থীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের জন্য সরকার, শিক্ষক,শিক্ষার্থীদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ সহ সকল নির্যাতন, হত্যাকন্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সিলেবাসের পরিবর্তন,পরিমার্জন করে হলেও সেশন জট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ঠিকানা রাজপথ নয়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার অন্তর্মাধুর্য নয় অন্তর্দ্বার পরিস্কার করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এটাকে  চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে হবে । 

লেখক ও কলামিস্ট

ঢাকানিউজ২৪.কম / এইচ

আরো পড়ুন

banner image
banner image