নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ রেলওয়ের নতুন বছরে আসছে নতুন সময়সূচি। একমাত্র রাষ্ট্রীয় রেল পরিবহন সংস্থাটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তারা নতুন সময়সূচির কাজ শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সারা দেশের রেলের সময়সূচি বিপর্যয় অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
যাত্রীদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন সূচি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সারা দেশে প্রতিদিন মোট ৩৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। দেখা যায়, যাত্রীদের চাপ বাড়লে রেলে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।
কর্মকর্তারা বলছেন, একই অঞ্চলের দু-তিনটা ট্রেন একই দিনে বন্ধ থাকে। নতুন সূচিতে সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে। তবে সময়সূচিতে নতুন কোনো ট্রেন যুক্ত হচ্ছে না। যাত্রীরা যাতে দ্রুত গন্তব্যে যেতে পারেন, সেটা নজরে রাখা হবে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, আসলে ট্রেনের যে নতুন সূচি আসছে, তা যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই। ধরেন, অনেক ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি মঙ্গলবার। সেটা পরিবর্তন করে অন্য দিন দেওয়া হতে পারে।
ঈদের বাড়তি যাত্রীর চাপ এবং বিভিন্ন সময় ছোটোখাটো দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রায়ই শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ঈদের সময় দেখা যায়, রেলের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো গড়ে ৬ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে। কখনও কখনও ১২-১৩ ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনগুলো ছাড়ে। নতুন ট্রেনের সূচিতে যাত্রীদের এই ভোগান্তি কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার।
তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকেই ট্রেনের এই নতুন সূচি আসার কথা। তবে নতুন কোনো ট্রেন যুক্ত হচ্ছে না। ট্রেনের অপারেশন অনুসারে মানুষের কিছু দাবি আছে। সে জন্যই এ নতুন সূচি নিয়ে আসা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেখা যায়, কোথাও তিনটি ট্রেনের একই দিনে ছুটি থাকে। সে ক্ষেত্রে ওই জায়গার যাত্রীদের পক্ষ থেকে আপত্তি আছে যে তিনটি ট্রেন একই দিনে ছুটি দেওয়া যাবে না।
নতুন যে ট্রেনগুলো ইতোমধ্যে চালু হয়েছে তা ট্রেনের সূচির মধ্যে সংযুক্ত ছিল না। কিন্তু নতুন সূচির ফলে তা যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া আগে একটি ট্রেন ধরেন পার্বতীপুর থেকে টেনে আমরা পঞ্চগড় নিয়ে গেছি, কিন্তু তা সূচির মধ্যে সংযুক্ত ছিল না। তাও এখানে সংযুক্ত হবে।
তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে, আগে কোনো রেললাইন আগে খারাপ ছিল, এখন ভালো হয়েছে। কোথাও ট্রেন ১০টা কোচ দিয়ে চলত, এখন সেখানে আমরা ৯টি কোচ দিয়েই চালাতে পারব। আবার নতুন ইঞ্জিনের লিংক আছে, সেটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। এ ছাড়া নতুন সূচি আসার ফলে ট্রেনের শিডিউলে যদি ভুল থাকে, তাও সংশোধন হয়ে যাবে।
ট্রেনের এতে ব্যয় সংকোচন হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে টাকার আয় কম-বেশি বোঝা যাবে না। তবে ট্রেনের অপারেশনাল সুযোগ-সুবিধা আমরা বেশি পাব।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রেলের আয় বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন সূচি নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় জোনে নতুন কোনো ট্রেন যুক্ত হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ২০২৩ সালে রেলের নতুন সময়সূচি আসবে। আমরা কাজ করছি। হয়তো জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে এই নতুন সূচিতে ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই এটার কাজ শেষ হবে।
রেলের নতুন সূচি প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, যাত্রীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে বিশেষ করে কোন স্টেশনে যাত্রী বেশি, কোন রুটে যাত্রী বেশি– এসব চিন্তা করে সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে। আমরা আশা করি, রেলওয়ে নতুন এই সূচিতে যাত্রীদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। তাদের কথা মাথায় রেখেই ট্রেনের এগিয়ে বা পিছিয়ে নেয়া হবে। তাহলে রেল লাভবান হবে। কারণ রেলে এখন অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে সরকার। এখানে যদি সেখানে লাভ না হয়, রেল লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: