• ঢাকা
  • বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বালিখোলা বাজারে বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০১:১৬ পিএম
বালিখোলা বাজারে
বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ

বিজয়কর রতন, সিনিয়র ষ্টাফ রিপোটার, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হাওরের বিভিন্ন প্রকারের মাছ বিক্রি হয় বালিখোলা বাজারে শুধুমাত্র মাছকে ঘিরেই কয়েক ঘণ্টার বাজার। রুই, কাতলা, বোয়াল, বাইম, শিং, মাগুর, চিংড়ি, কই, পাবদা, টেংরাসহ প্রায় ৮০ থেকে ৯০ প্রজাতির দেশিয় মাছ বিক্রি হয় এ বাজারে। প্রতিদিন সকাল ৭টায় শুরু হওয়া মাছ বাজারটিতে বিক্রি চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। আর এই তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ।

মাঝে মধ্যে মাছের যোগান বেশি থাকলে বিক্রির পরিমাণ দেড় থেকে দুই কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়। হাওরের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা। ধনু নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা বালিখোলা বাজারের খ্যাতি রয়েছে হাওরের তরতাজা মাছের জন্য। পাইকারি ও খুচরা বাজারে পাওয়া যায় হাওরের নদ-নদী ও মুক্ত জলাশয়ের এসব মাছ।ভোর থেকেই ছোট ছোট নৌকায় মাছ নিয়ে বাজারে আসতে শুরু করেন জেলেরা। সারারাত হাওরে মাছ ধরে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘাটে আসে জেলেদের ছোট ছোট নৌকার বহর।

তারপর জেলেরা তাদের পছন্দের আড়তে নিয়ে মাছ বিক্রি শুরু করেন। বাজারের যেদিক চোখ যায় শুধু মাছ আর মাছ। বাজারটিকে দেখলে মনে হবে প্রাকৃতিক মাছের এক বিশাল রাজ্য। প্রতিদিনই বালিখোলা বাজারের মাছ পাইকারিদের মাধ্যমে চলে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।বিভিন্ন জেলার মাছ ব্যবসায়ীরা ভোর থেকেই মাছের গাড়ি নিয়ে ভিড় করেন বাজারে। চাষের কোনো মাছ পাওয়া যায়না এ বাজারে। মাছ বেচাকেনায় বাজারটিতে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়। তবে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে, এ বাজার স্থানীয় অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ভোরেই মাছ কিনতে বাজারে হাজির হন বিভিন্ন এলাকার মাছ ব্যবসায়ীরা হাওরের মাছের কদর রয়েছে সারা দেশজুড়ে। চাহিদার কারণে মিঠাপানির সুস্বাদু এই মাছকে ঘিরে বালিখোলার ব্যবসা-বানিজ্যও রমরমা। তাইতো শুধু কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চল নয়, বরং আশে পাশের জেলাগুলো থেকেও মাছ নিয়ে জেলেরা আসেন বালিখোলা বাজারে। ন্যায্য মূল্যে এখানে মাছ বিক্রি করতে পেরে যেমন বিক্রেতার খুশি থাকেন, তেমনই সঠিক দামে মাছ কিনতে পেরে ক্রেতাও খুশি হন। শুধু মাছ ব্যবসায়ীরা নন, যে কেউ চাইলে মাছ কিনতে পারেন এই বাজার থেকে। মিঠামইন উপজেলার মাছ বিক্রেতা আবুল কালাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমাদের ২৫ জেলের একটি দল সারারাত হাওরে মাছ ধরি। তারপর সেগুলো ভোরে এ বাজারে আড়ৎদারের মাধ্যমে বিক্রি করি। অনেক বছর ধরে আমরা এ বাজারে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি করছি। এখানে মাছের সঠিক দাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি এ বাজারে মাছ বিক্রিও অনেক নিরাপদ।’এই বাজারে মাছ বিক্রি করাকে নিরাপদ মনে করেন জেলেরা শতবছর পুরোনো বালিখোলা বাজারটি একসময় এতো জমজমাট ছিলনা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় দিন দিন এ বাজারের মাছ বেচা-বিক্রি বেড়েই যাচ্ছে। এতে করে এ বাজারকে ঘিরে ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইনের জেলেদের একটি আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। ঢাকা থেকে পাইকারি মাছ কিনতে এসেছেন মো. দ্বীন ইসলাম।

তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ঢাকা থেকে ভোরে চলে আসি এ বাজারে। এখান থেকে মাছ কিনে আবার ঢাকায় ফিরি। এখানকার মাছের দামও কম এবং অনেক তরতাজা। তাছাড়া হাওরের এ মাছ গুলোর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখানে হাওরের সুস্বাদু মাছ কিনতে আসেন।’ বালিখোলা বাজার আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি মো. সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘বালিখোলা বাজারে অন্তত ৬০টি আড়ৎ রয়েছে। কিশোরগঞ্জের বৃহত্তম হাওর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরের মাছ এ বাজারে বিক্রি হয়। এখানে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয়। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এ বাজারে শুধুমাত্র হাওরের মাছ বিক্রি হয়। কোন প্রকার ফিসারির বা চাষের মাছ এখানে বিক্রি হয় না।

হাওর ও নদীর মাছ পাওয়া যায় বাজারে তিনি আরো বলেন, ‘এই বাজারে প্রতিদিনই মাছের দাম ওঠা নামা করে। এছাড়া বিক্রিও মাঝে মধ্যে কম বেশি হয়। আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন এক কোটি টাকার মাছ বিক্রি। আর এই লক্ষ্যে আমরা মাছ বিক্রি করি। কখনো কখনো মাছের যোগান বেশি হলে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।’

কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ রিপন কুমার পাল বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ জেলায় ৩৪ লাখ মানুষের বাস। সে মোতাবেক ৬৫ থেকে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন মাছের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ। এর মধ্যে হাওর এবং নদ-নদীর মাছই রয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। তাই হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়ানো ছাড়াও বালিখলাসহ মাছের বড় বাজারগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মৎস্য অভায়াশ্রমসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ যাচ্ছে মৎস্য বিভাগ।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image