
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ যে কয়টি বিষয় নিয়ে গর্ব করতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। এটি বিশ্বের একমাত্র দীর্ঘতম ও অখণ্ডিত সমুদ্রসৈকত, যা আর পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতটি বালুকাময়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্রসৈকতের চেয়ে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়ায় এখানে পর্যটকদের সমাগম বেশি এবং এর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সাম্প্রতিক সময়ে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বর্তমান সরকার নিয়েছে নানামুখী উদ্যোগ।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে বিশ্বের বুকে এক অনন্য পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করছেন একের পর এক মহাপরিকল্পনা। কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে, যার কাজ শেষ হলে দেখা মিলবে সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে অবতরণ করছে বিমান। বিমানবন্দরটির প্রকল্পকাজ সম্পন্ন হলে ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে, যা রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়েও বেশি।
ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৪-এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এ বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে এবং এর ফলে এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে। বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজে হাত দিয়েছে সরকার। তাছাড়া কক্সবাজারকে রেল সংযোগের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ চলমান আছে। এটি শেষ হলে সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় কক্সবাজার এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বারবার ভ্রমণে যেতেন। সঙ্গে থাকত জাতির জনকের পরিবার। সে সময় আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েকবার জাতির জনকের সঙ্গে কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়েছিলেন। বর্তমানে কক্সবাজার ঘিরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকার কাজ করছে।
ঢাকা থেকে ৪২৫ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫৬ কিলোমিটার দূরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অবস্থান। এ জেলার রয়েছে গৌরবময় অতীত ইতিহাস। কক্সবাজারের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মোগল, পর্তুগিজ, আরকান, ব্রিটিশরা এখানে এসে অবস্থান করেছে এবং কক্সবাজারের উন্নয়ন সাধন করেছে। ১৭৭৩ সালের দিকে ক্যাপ্টেন হিরামকক্স কক্সবাজারে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি এ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নে কাজ করেন। কক্সবাজারের আদি নাম ছিল পালনকি। ক্যাপ্টেন কক্স ১৭৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার নামানুসারে পালনকি নাম পরিবর্তন করে কক্সবাজার নামকরণ করা হয়।
তারপর মূলত ১৯৪৭-এ ভারতভাগের পর মহকুমা হিসেবে স্বীকৃত কক্সবাজারের প্রথম মিউনিসিপ্যাল চেয়ারম্যান হন ক্যাপ্টেন অ্যাডভোকেট ফজলুল করিম। তিনিই সৈকত ধরে ঝাউবন লাগিয়ে পর্যটন স্পট হিসেবে তৈরি করেন। মূলত বোম্বে ও করাচি সি-বিচের মতো পর্যটকরা যেন সি-বিচ উপভোগ করতে পারে সে চেষ্টা করেন। ষাটের দশকের দিকে সড়ক ব্যবস্থা চালু হলে ধীরে ধীরে হেটেল-মোটেল চালু হতে থাকে। নব্বইয়ের দশকের পর পুরোদমে কক্সবাজারের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়, যা ২০১০ সালের পর এসে গতি পায়। বর্তমানে কক্সবাজারে ছোট-বড় অনেক হোটেল, কটেজ, রিসোর্ট, রেস্ট হাউজসহ বেশকিছু বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠছে।
কক্সবাজার হলো বাংলাদেশের পর্যটনের রাজধানী। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, অবকাঠামোগত উন্নতির কারণে কক্সবাজারে এখন সারা বছর পর্যটকের আনাগোনা লেগেই থাকে। এখন আর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প শীতকালকেন্দ্রিক নয়। সারা বছর পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। তবে যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটকের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে ঈদ, বাংলা নববর্ষ, ইংরেজি নববর্ষসহ যেকোনো বড় ছুটির উপলক্ষ হলেই কক্সবাজারে ঢল নামে অসংখ্য পর্যটকের, যা কোনো কোনো সময় ধারণক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ছাড়াও এখানে আছে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। বিভিন্ন উপজাতি বা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাসে বৈচিত্র্যময় এ জেলার জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, লাবণী বিচ, সুগন্ধা বিচ, কলাতলি বিচ, হিমছড়ি, ইনানী বিচ, মেরিন ড্রাইভ রোড, সেন্ট মার্টিন, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি। কক্সবাজারে একজন পর্যটক একদিকে যেমন পাহাড়ে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি দেখতে পারবেন, তেমনি অন্যদিকে উপভোগ করতে পারবেন বিস্তীর্ণ সমুদ্র। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনাও রয়েছে, যা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি পর্যটনকেন্দ্র। পাহাড়ের কোলঘেঁষে এ সমুদ্রসৈকতের নাম হিমছড়ি। এখানকার সমুদ্রসৈকতটি কক্সবাজারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নির্জন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এর সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। হিমছড়ি থেকে আরো পাঁচ কিলোমিটার গেলেই ইনানী বিচ বা ইনানী সমুদ্রসৈকত। ইনানী বিচে প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি। অনেকটা সেন্ট মার্টিনের মতোই। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো এখানে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে না সৈকতের বেলাভূমিতে। অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যাবে না। ভাটার সময়েই কেবল বিশাল এলাকাজুড়ে ভেসে ওঠে এ পাথর। প্রবাল পাথরে লেগে থাকে ধারালো শামুক-ঝিনুক।
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ মহেশখালী। মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। মহেশখালীতে রয়েছে হিন্দুদের তীর্থস্থান বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এ মন্দির সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এ প্রাচীন সভ্যতা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।
বৌদ্ধ কৃষ্টির জন্য বিখ্যাত কক্সবাজারের রামু থানা। কক্সবাজার থেকে ঢাকার পথে আসতে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান। এখানে রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির, প্যাগোডা, ধাতু ও ব্রোঞ্জের তৈরি বুদ্ধ মূর্তি, ছোট-বড় ১৩টি বুদ্ধ মূর্তি নিয়ে লাল সিং ও পাশে সাদা সিং নামের বৌদ্ধ বিহার। আরো আছে ১৩ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের বুদ্ধ মূর্তি, যা পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। এছাড়া রাবার বাগান, স্থানীয় রাখাইন ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে এ এলাকায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়। দ্বীপটি প্রবাল প্রাচীরের ওপর প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে। মূলত সেন্ট মার্টিনে পর্যটন মৌসুম শুরু হয় অক্টোবরে, যা এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে থাকে। এই কয় মাসে সেন্ট মার্টিনে বিপুল সংখ্যায় পর্যটক আসে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ সময় প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজারের বেশি পর্যটক এ দ্বীপ ঘুরতে আসে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কাছে পর্যটনের এক অনন্য সম্পদ। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় বেঁধে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে তুলবে। এ সড়ক কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ নামে সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ। সড়কের একপাশে সবুজ গালিছা বিছানো পাহাড়, অন্যপাশে সুবিস্তীর্ণ সাগর। এ দুইয়ের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মেরিন ড্রাইভ। সড়কের ধারে নারকেল, সুপারি, ঝাউ গাছের সমাহার রয়েছে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত। সেই সঙ্গে গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য চিত্র ফুটে ওঠে এ মেরিন ড্রাইভ সড়কের ধারে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মেরিন ড্রাইভ বা সমুদ্রপাড়ের সড়ক ঘিরে নিজ নিজ অঞ্চলের পর্যটনকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। অস্ট্রেলিয়ার ওশান ড্রাইভ ও আমাদের পাশের দেশ ভারতের মুম্বাই মেরিন ড্রাইভ পৃথিবীর অন্যতম সেরা পর্যটন আকর্ষণ। প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক ওশান ড্রাইভ ভ্রমণ করতে যায়, যা থেকে বছরে প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে দেশটি। এ বিপুল পরিসরের কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পনা। ওশান ড্রাইভকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়ার সরকার নানা ধরনের পর্যটনবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। যার মধ্যে জাতীয় উদ্যান, হেরিটেজ পার্ক, মেরিন মিউজিয়াম, গলফ কোর্সসহ আরো আন্তর্জাতিক মানের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতি বছর বিশ্ব সাইক্লিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়, যা এর প্রচার ও প্রসারে সাহায্য করে। কক্সবাজার হবে আধুনিক পর্যটন শহর। এজন্য চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
বর্তমানে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে একটি মেগা প্রকল্প, যেটি ‘সাবরাং ট্যুরিজম অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নামে পরিচিত। ২০১৬ সালে টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়নকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার তথা দেশের পর্যটন শিল্পের আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
টেকনাফে অর্থনৈতিক অঞ্চল সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক জোনে ১ হাজার ১৬৫ একর জমি রয়েছে। পাহাড় ও সাগরের বৈচিত্র্যময় দৃশ্য, সুদীর্ঘ বালুকাময় সৈকত এ স্থানকে সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটি বিনোদনপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে। পার্কটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশের পর্যটন খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছে বেজা কর্তৃপক্ষ। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটিতে পাঁচ তারকা হোটেল, ইকো ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম, বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা, সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের বিশেষ ব্যবস্থা, ভাসমান জেটি, শিশুপার্ক, ইকো কটেজ, ওশানেরিয়াম, আন্ডার ওয়াটার রেস্টুরেন্ট, ভাসমান রেস্টুরেন্টসহ নানা বিনোদনের সুবিধা রাখা হবে। এছাড়া টেকনাফে নাফ ট্যুরিজম পার্ক ও মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রকৃতি কক্সবাজারকে অপরূপভাবে সাজিয়েছে। এটি বর্তমানে দেশীয় পর্যটকদের কাছে অবকাশ যাপনের প্রধান কেন্দ্র। প্রতি বছর প্রায় ১৫-২০ লাখ দেশী পর্যটক এ সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ করে। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে কক্সবাজার, যার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে মানবসৃষ্ট পর্যটন আকর্ষণ বা বিল্ট এনভায়রনমেন্টের অভাবকে দায়ী করা হয়। কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ আর কিছু হোটেল ছাড়া অন্য কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। আর সন্ধ্যার পর তাদের সম্পৃক্ত করার জন্য কোনো কর্মকাণ্ড থাকে না। বিশ্বের জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকতগুলোর মতো করে আমাদের দেশে কক্সবাজারে জাতীয় উদ্যান, থিম পার্ক হেরিটেজ পার্ক, মেরিন মিউজিয়াম, গলফ কোর্সসহ বিভিন্ন প্রকার বিনোদনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের কনফারেন্স সেন্টার তৈরি করা যেতে পারে, যাতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্সবাজারে আয়োজন করা যায়। তাছাড়া আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি পর্যটদের কাছে তুলে ধরার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কক্সবাজারে পর্যটনের বিকাশে অন্যতম বাধা হলো অপরিকল্পিত উন্নয়ন। এখানে যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে ইট-পাথরের স্থাপনা। অনেক সময় পাহাড় কেটে প্রকৃতির ক্ষতি করে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এসব অনিয়ম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা তদারক করার জন্য সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সব প্রকার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকতের মধ্যে মাত্র তিন কিলোমিটার পর্যটন এলাকা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। তবে আশার কথা, বিদেশীদের জন্য কক্সবাজারে স্পেশাল জোন তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা বাস্তবায়িত হলে এখানে প্রচুর বিদেশী পর্যটকের আগমন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাকি এলাকা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রতি বছর কক্সবাজারে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়। এ সংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই পুরো কক্সবাজার ঘিরে বহুমাত্রিক পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে হবে। সবকিছু করতে হবে পরিবেশবান্ধবভাবে। নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করার জন্য নির্দিষ্ট জোন স্থাপন করতে হবে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে অদূরভবিষ্যতে কক্সবাজারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। আর এ লক্ষ্যে আমাদের সব ধরনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।
অধ্যাপক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: