নিউজ ডেস্ক: গভীর সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহের শুরুতেই বড় ধরনের বিপত্তি দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি থেকে প্রথমবারের মতো জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে গিয়েই পাইপ ফেটে গেছে। কিছু জ্বালানি তেল ভেসে গেছে সাগরেও।
পাইপ ফাটার মাধ্যমে সাময়িকভাবে ভেস্তে গেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের পরিকল্পনা। সনাতন পদ্ধতিতেই এখন তেল খালাস করতে হতে পারে তাদের। বিষয়টি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। তাদের দায়িত্বশীল কেউ সমকালের ফোনকল রিসিভ করেননি। তবে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন পাইপ ফাটার কথা সমকালের কাছে স্বীকার করেছে। বুধবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ নামে প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২২২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মুখপাত্র ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আশরাফ আমিন বলেন, ‘এসপিএম প্রকল্পের জ্বালানি তেল নিয়ে আসা প্রথম জাহাজ যথাযথভাবে তেল পাইপলাইন দিয়ে খালাস করতে পারেনি। কী কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে তা আমার জানা নেই। শুনেছি তাদের পাইপ ফেটে গেছে।’
প্রায় ৮২ হাজার টন অশোধিত তেল নিয়ে জাহাজটি গত ২৪ জুন দেশে পৌঁছে ৷ গত মঙ্গলবার তেল খালাস শুরু হয়।
ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমানের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। কথা বলেননি এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক শরীফ হাসনাতও। কল রিসিভ করেননি মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মোস্তফা কুদরত-ই-ইলাহিও।
প্রকল্পটির মাধ্যমে তেল সরবরাহ করতে না পারায় সনাতন পদ্ধতিতেই এখন তেল খালাস করছে তারা। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন থেকে দুটি লাইটার জাহাজ গেছে মাতারবাড়ীতে। সেখানে বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করবে তারা। ইস্টার্ন রিফাইনারির দায়িত্বশীল কেউ সমকালের ফোনে সাড়া দেননি। তবে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) দুটি লাইটার জাহাজ পাঠানোর কথা সমকালের কাছে স্বীকার করেছে।
প্রথম জাহাজ থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী তেল খালাস করতে না পারায় এসপিএম প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে গেছে। সাগরের তীব্র স্রোতে জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকতে না পারায় পাইপ নির্ধারিত স্থান থেকে ছুটে গেছে বলে জানা গেছে। আরেকটি সূত্র বলছে, পাইপ লিক করেছে। সাগরে কিছু জ্বালানি ভেসে গেছে। ঠিক কী পরিমাণ জ্বালানি সাগরে পড়েছে তা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরেরও কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ।
আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল ও ফিনিশড প্রোডাক্ট স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে এবং নিরাপদে খালাস করার স্বপ্ন দেখিয়েছিল এ প্রকল্প। বলা হয়েছিল, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
বলা হচ্ছিল, প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে চালু হলে ১১ দিনে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল খালাস করা যায়, সেটির সময় কমে আসবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর লাইটার জাহাজের প্রয়োজন হবে না। ফলে বছরে পরিবহন খরচের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। জ্বালানি সক্ষমতা বাড়বে ৩৩ শতাংশ।
ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে পরিশোধন ক্ষমতা ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: