
জহিরুল ইসলাম সানি
জাতীয়করণ হওয়া শিক্ষকদের ভোগকৃত টাইম স্কেলের সুবিধাদি ফেরত দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাতিলের দাবি জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। এছাড়া ৩ দফা দাবীও জানিয়েছে শিক্ষক নেতারা।
গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি করেন।
উল্লেখ্য, ৪৮,৭২০ জন প্রাথমিক শিক্ষকদের জাতীয়করণকৃত উত্তোলিত টাইম স্কেল সমস্যা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গত ১২ই আগষ্ট ২০২০ তারিখ জারিকৃত পত্র জারিকরে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষে মোট ৩৬,১৬৫ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ করেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে এক ঐতিহাসিক শিক্ষক মহাসমাবেশে দেশের ২৬,১৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত ১,০৪,৭৭২ জন শিক্ষকের চাকুরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। উক্ত ঘোষণা বাস্তবায়নের আলোকে প্রয়োজনীয় পরিপত্র ও গেজেট মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই জাতীয়করণকৃত শিক্ষকগণ সকল আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করে আসছেন।
তিনি বলেন, অধিগ্রহণকৃত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকুরী শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ বিধি (৯) উপবিধি (১) এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এরপর ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর এক পত্রের মাধ্যমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ডেকে বিধি ৯-এর উপবিধি-১ এর ভুল ব্যখ্যা দিয়ে কার্যকর চাকরির পরিবর্তে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়করণের দিন ধরে জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরির মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়।
তারা আরও জাতীয়করণকৃত সহকারী শিক্ষকদের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যত আইন ও পরিপত্র জারি করেছে, তার কোনোটাতেই ১ জানুয়ারি ২০১৩ সাল ধরে গণনা করার কথা বলা হয়নি। অন্যদিকে পৌনে আট বছর পর একই কায়দায় বিধি ৯ উপবিধি ১ এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু সংখ্যক ষড়যন্ত্রকারীর কুপ্ররোচনায়, জাতীয়করণ পূর্বের চাকুরীকাল গণনা না করে হিসাবরক্ষণ অফিসগুলো, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের উত্তোলনকৃত টাইমস্কেল ফেরত প্রদানের জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ আগষ্ট ২০২০ তারিখ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষকদের ভোগকৃত টাইমস্কেল ফেরত প্রদানের জন্য এক পত্র জারি করেন। তাতে ৪৮,৭২০ জন শিক্ষক চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।
সংবাবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষক নেতারা। তারমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১২ আগষ্ট ২০২০ তারিখে জারিকৃত পত্র বাতিল করা। জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের গেজেট অনুসারে কার্যকর চাকুরীকাল (৫০%) গণনা করে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান করা। এস.এম.সি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের নামের গেজেট দ্রুত প্রকাশ করা।
দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ রোববার দেশের সকল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করবেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করার ঘোষণাও দিয়েছে শিক্ষক নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থি ছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব রাধা রাণী ভৌমিক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন খোন্দকার, সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, মোঃ মোশাররফ হোসেন, আজমল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল হাই, মো. সুরত আলী-সহ অন্যান্য জেলা-উপজেলা নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এম আর
আপনার মতামত লিখুন: