আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পারমাণবিক স্থাপনায় রুশ সেনাদের হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনীয় সেনারাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেলের মজুত লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউক্রেনের রয়েছে। ইউক্রেনে সাম্প্রতিক রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরুর দিকেই বেলারুশ হয়ে রুশ সেনারা প্রবেশ করে জাপোরিজ্জার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
সে সময় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গোলাবর্ষণ করেছিল।
পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পর ইউক্রেনীয় কর্মীদের রুশ বাহিনী রেখে দেয়। তবে ইউক্রেনের অভিযোগ, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পর এটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রুশ সেনারা। সেখানে গোলাবারুদ মজুদ করছে এবং সেখান থেকে ইউক্রেনের অনেক বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার রাশিয়ার রকেট হামলায় পারমাণবিক স্থাপনার গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তিনটি তেজস্ক্রিয় শনাক্তকরণ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যে কোনো তেজস্ক্রিয় লিকের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় তা শনাক্তকরণ ও বিকিরণ প্রতিরোধ অসম্ভব হয়ে গেছে।
কিয়েভ বলছে, এবার ভাগ্যক্রমে পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও বার বার ভাগ্য সহায় হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে আইএইএ প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি বলেছেন, ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গোলাগুলির খবরে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের আণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ) ইউক্রেনের জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে যে কোনো ধরণের সামরিক পদক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপে পারমাণবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মারিয়ানো গ্রসি বলেছেন, শুক্রবারের হামলা পারমাণবিক বিপর্যয়ের সত্যিকারের ঝুঁকি তৈরি করেছে যা ইউক্রেন এবং এর বাইরে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় কর্মীদেরর অবশ্যই হুমকি ও চাপ ছাড়াই তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে এবং আইএইএকে প্রযুক্তিগত সহায়তার অনুমতি দেয়া উচিত।
ইউক্রেন এবং অন্যত্র একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক দুর্ঘটনা থেকে জনগণকে রক্ষা করার স্বার্থে আমাদের মতভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আইএইএর পক্ষ থেকে প্ল্যান্টটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলার পরই ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাপোরিজ্জায় গোলাবর্ষণের অভিযোগ আনলো। মস্কোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
জাপোরিজ্জায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রুশ প্রধান ইয়েভজেনি বালিতস্কি রোবরার টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেলের মজুত লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউরোপে পারমাণবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা জাতিসংঘের জাপোরিজ্জা পারামাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প তবে নিরপেক্ষভাবে কিয়েভ ও মস্কোর দাবির সত্যতাই যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
যেহেতু পারমাণবিক প্রকল্পটি রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে এবং সেখানে রুশ সেনারাই অবস্থান করছে, তাহলে ঠিক কী কারণে রুশ সেনারাই সেখানে হামলা চালাবে তা স্পষ্ট করেনি কিয়েভ।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘পারমাণবিক প্রকল্পে যে কোনো বোমা হামলা নির্লজ্জ অপরাধ, সন্ত্রাসের কাজ।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহের শুরুর দিকে অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর জন্য এই প্ল্যান্টটিকে নিরাপদ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
ব্লিঙ্কেনের অভিযোগ, ইউক্রেনে সেনারা সেখানে গুলিবর্ষণ করতে পারবে না, যদি সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতি হয়।
গত মার্চে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের মধ্যেই দেশটিতে অবস্থিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জাতে হামলা চালায় রুশ সেনারা। ইউক্রেন সে সময় দাবি করে, রুশ গোলার আঘাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছিলেন, এই কেন্দ্রের চুল্লি গলে যাওয়া চেরনোবিলের থেকে ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
এর আগে ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে সোভিয়েত আমলে এক পারমাণবিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পারমাণবিক প্রযুক্তির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ২০ বছরে তেজস্ক্রিয়তার পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: