• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

প্রমত্তা ধলেশ্বরী নদীর বুক চিরে ফসলের মাঠ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:০৭ পিএম
প্রমত্তা ধলেশ্বরী নদীর বুক চিরে
ফসলের মাঠ

বিজয় কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ শুকিয়ে প্রায় মরে গেছে ধলেশ্বরী নদী। দেশের হাওর প্রধান এলাকা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদী একসময় প্রবল স্রোতস্বিনী ছিল। আজ ভরাট হয়ে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নদীর অস্তিত মুছে যেতে বসেছে। এত দিন হাওরে বোরো ধান উৎপাদনের জন্য ধলেশ্বরীর পানি বড় ধরনের ভূমিকা রাখত। এ নদীর পানি দিয়ে কয়েক হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে কৃষক পরিবারগুলো তাদের সারা বছরের খাদ্য নিশ্চিত করত।

এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের দুঃস্বপ্নে দিন কাটছে। বর্তমানে নদীর বুক চিরে বোর ফসলের মাট দেখা যাচ্ছে। শুকনো নদীর উপর দাড়িয়ে রয়েছে আব্দুল হামিদ সেতু। নদীতীরবর্তী জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন উন্মুক্ত নদী হিসেবে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা এখন পেশা হারিয়ে বেকার। কেউ নতুন কাজ শিখছেন, কেউ দিনমজুরে কাজ করছেন। অনেকে জীবিকার তাগিদে শহরে চলে যাচ্ছেন। যারা থেকে গেছেন, চরম আর্থিক সংকটে দিন পার করছেন তারা।

অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ কিংবা বর্গাচাষি হিসেবে জীবন ও জীবিকা বেছে নিতে হচ্ছে তাদের। ধলেশ্বরীতে পাঁচ বছর আগেও তীব্র স্রোত ছিল। নদীটি হঠাৎ করে স্রোত হারিয়েছে ভাবতেই নদীপাড়ের এলাকাবাসীর মনে বিস্ময় জাগে। অষ্টগ্রাম, ভৈরব, আশুগঞ্জ, কুলিয়ারচর থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও যন্ত্রচালিত নৌকা, কার্গো চলাচলের অন্যতম পথ ছিল ধলেশ্বরী।

বিগত কয়েক বছরে অষ্টগ্রামের ভাটির নগরের উত্তরে মেঘনা ও ধলেশ্বরীর সংযোগস্থল থেকে জেগে ওঠা চর হুমায়ুনপুর, কাস্তুল, মসদিজামের পাশ দিয়ে সর্বশেষ অষ্টগ্রাম সদরের পূর্বদিকে ইকুরদিয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীকেন্দ্রিক সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ভরা বর্ষাতেও ধলেশ্বরীতে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌকা আটকা পড়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছে অসংখ্য মানুষ। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার একর বোরো ফসলি জমি সেচের পানির অভাবে হুমকির মুখে রয়েছে।

এবার বৃষ্টি না হলে আরও আড়াইহাজার একর বোরো জমি সেচ সংকটে পড়বে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। অষ্টগ্রামের কাস্তুল গ্রামের রবিদাস, সুশীল সূত্রধরসহ একাধিক জেলে জানান, এই নদীর মাছ ধরে আমাদের সংসার চলত। এখন জীবিকা সংকটে আছে পুরো জেলে সম্প্রদায়। অন্তত দুই সহস্রাধিক জেলে এলাকা ছেড়েছেন বিকল্প পেশার সন্ধানে। অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস বলেন, ধলেশ্বরী শুকিয়ে গেলে কয়েক হাজার জেলে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের একটি অংশ গ্রাম ছেড়ে বড় শহরে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে গেছে। এখনও যারা টিকে আছেন তাদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

নদীপাড়ের জেলেপল্লী, দেওঘর ইউনিয়নের সদয়নগর, সদর ইউনিয়নের খোপারচর, বাংগালপাড়া ইউনিয়নের কুড়ের পাড় এলাকার জেলেরা অভিযোগ করে জানান, এই করুন পরিণতি থেকে ধলেশ্বরী নদীকে সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। হাওর অঞ্চলবাসী ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাবু জানান, হাওরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো ভালো গবেষণা নেই।

অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে নদী ভরাট হয়েছে। ধলেশ্বরী নদীর প্রবাহ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্বহীনতা রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। জেলে সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করেন অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম। তিনি জানান, ধলেশ্বরী শুকিয়ে যাওয়ায় প্রায় পাঁচ হাজার জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন বেকার হয়েছেন। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের আরও নেতিবাচক প্রভাবের জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। দ্রত সময়ের মধ্যে ধলেশ্বরী নদী খনন করে সংরক্ষণ না করা হলে এর অস্থিত মুছে যাবে।

কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, হাওরে প্রবাহমান ধলেশ্বরী নদীসহ আরও কিছু নদী নিয়ে সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষার পর ধলেশ্বরীকে বাঁচাতে পরিকল্পনা উত্থাপন করা হবে। পরে প্রকল্প অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করা হবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image