বখতিয়ার রহমান, পীরগঞ্জ (রংপুর): বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকায় অটোরিক্সা মিছিলে অংশ নেয়া শাহীনুর হোসেন পুলিশের গুলিতে আহত হলেও কেউ তার খোঁজ রাখেনি। ৭ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম অসহায় শাহীনুর হোসেন (৪০) এখন চিকিৎসাহীন অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের রত্নেশ্বরপুর গ্রামের মৃত্য গোলজার হোসেনের পুত্র।
বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে গত ২০ জুলাই দেড় শতাধিক অটোরিকশা চালকের সঙ্গে মিছিলে অংশ গ্রহন করে শাহীনুর। মিছিলটি ঢাকার শনির আখড়ায় পৌছিলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগুতেই পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে। এতে সেখানে কয়েক জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে আর কিছুই মনে ছিল না তার। তার সঙ্গে থাকা অনেকেই ঘটনাস্থলেই শহীদ হয়েছেন। শাহীনুরকে মরা ভেবে কেউ নিতে আসেননি। কিন্তু মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে ফেরার পথে ক'জন মুসল্লী নড়াচড়া দেখে স্থানীয় দুটি মেডিকেলে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়। সে সময় তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে ওই অজ্ঞাতনামা মুসল্লিগণ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করান। গুলিটা তার বাম ঘাড়ের নিচে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেড়িয়ে যায়। চিকিৎসায় তার ৭ ব্যাগ রক্ত লেগেছে।
গুলি বিদ্ধ শাহীনুরের এখনও পর্যাপ্ত চিকিৎসা হয়নি । স্বাভাবিক চলাফেরা ও কথা বলতে পারছে না । তার পরেও তার চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজন অনেক টাকা ধার-কর্জ করেছে, এ টাকা পরিশোধ করবে ক্যামনে ? এ দুশ্চিন্তায় মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহীনুর বলেন, আমাদের ছেলে- মেয়েরা (ছাত্র-ছাত্রী) অধিকার আদায়ে রাস্তায় গুলি খেয়ে মরছে, আমরা তা মানতে পারি ? তাই ছাত্র- জনতার আন্দোলনের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলাম।’ শাহীনুরের মা রাজেকা খাতুন হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, হামার একনা নাতি পাভেল হোসেন ওটাও মানুষিক ভারসাম্যহীন। কখন কি করে ওকে সামলানোয় দায়। নাতনি দুটো জীবিকার সন্ধানে অল্প বয়সে গার্মেন্টসে চাকরী করে। নাতী, নাতনী, বৌ, বেটা মিলে ৭ সদস্যের সংসার কিভাবে চলবে? তা ভেবেই তিনি দুশ্চিন্তায়।
রংপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরিফুল সরকার আরিফ জানান, প্রথমত গুলিবিদ্ধ শাহীনুরের মরা খবর পেয়েছি, পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি আছেন এবং বেঁচে আছেন। অসহায় সহায় সম্বলহীন ভুমিহীন অটোরিকশা চালক শাহীনুর হোসেনকে দু'দিন পূর্বে গ্রামের বাড়িতে এনে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছি। কিন্তু সরকারীভাবে তার কপালে জোটেনি কোনো সাহায্য কিংবা অনুদান।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: