বিজয় কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ প্রচন্ড শীতে ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। হাড় কাঁপানো শীতে বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারনে গত ৩দিন ধরে মানুষের জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ঘন কুয়াশার কারনে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন ও ফেরি চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটছে।
ভোর রাত থেকে দিনের ১১/১২ টা পর্যন্ত ঢাকাগামী দূরপাল্লার মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন মালবাহী যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শীতকষ্ট নিবারনে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরে একটু বেশি মাত্রায় শীত নেমেছে। মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখা মিললেও দিনের বেশিরভাগ সময় তীব্র বাতাস ও কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারদিক। ঘন কুয়াশার সাথে বয়ে চলা হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছে।শৈত্যপ্রবাহের কারণে এখানকার সাধারণ কর্মজীবি মানুষ থেকে শুরু করে কারো সময়ই এখন ভাল যাচ্ছে না। হাওড়ে প্রচন্ড ঠান্ডায় বোর আবাদের বীজতলার ক্ষতি হচ্ছে। ঘাগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের দিনমজুর আনোয়ার বলেন, দুইদিন ধরে হাওড়ে কাজে যাইতাম পারছিনা। জালাভাংগাও জমি রোপনের কাজ ঠান্ডার কারনে করন যাইতাছেনা।
একই গ্রামের অপর কৃষক রতন মিয়া জানান, কুয়াশা ও ঠান্ডার কারনে বোর বীজতলা লাল রং ধরে জমিতেই মরে যাচ্ছে। ঠান্ডার কারনে জমিতে পোকার আক্রমন বৃদ্ধি পেয়েছে। এসকল জমিতে নতুন করে বীজতলা করা সম্ভব হবেনা। অন্যদিকে শীত জনিত রোগে বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না। এমনকি হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সের লোকদের শীতজনিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। তবে এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। প্রত্যহ শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, এজমা, এলার্জীসহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে লোকজন বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ফার্মেসীতে ভীড় করছেন।
মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের ডাক্তার মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, প্রতিদিন আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগে জরুরী বিভাগে অন্তত ২০জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এছাড়াও হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় অন্তত ১০জন রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে ঔষধের কোন সংকট নেই। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঠান্ডাজনিত রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়রা অনেকেই পল্লী চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতাল পর্যন্ত আসছেনা। অন্যদিকে নদীপথে ট্রলার চলাচলে বিঘ্ন সুষ্টি হচ্ছে। কোয়াশার কারনে ট্রলার গুলি সময়মত গন্তব্যে পৌছতে পারেনি। কথা হয় ট্রলার চালক দুলাল মিয়ার সাথে তিনি বলেন, কোয়াশার কারনে ট্রলার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সামনে কিছু দেখা যায়না, ৩ ঘন্টার রাস্তা সময় লাগে ৬ ঘন্টা। সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান,’শীত জনিত রোগে আক্রান্তদের যথাযথ সেবা দিতে চিকিৎসকরা সচেতন রয়েছেন।
হাওড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার হতদরিদ্র আম-জনতা শীতে কাপছে। শীতের তীব্র প্রকোপে কাবু হয়ে তাদের দিন কাটছে খুব কষ্টে ও দীর্ঘ নিঃশ্বাসে।
সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্র আম-জনতা শীত নিবারনে আগুন জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপে কিছু সময় শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। হাওড়ের প্রতিটি বাজারে রাস্তার পাশে দোকানীরা শীত বস্ত্র নিয়ে বসছে। হঠাৎ অসহনীয় এ শীতে সরকারি ও বেসরকারীভাবে ব্যাপকহারে শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: