• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

পদ্মা সেতু দিয়ে বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৫১ পিএম
বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশ
পদ্মা সেতু

নিউজ ডেস্ক: পদ্মা নদীর ওপর সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু নির্মাণ করে উন্নয়নের এক সোনালি অধ্যায় রচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী যা করেছেন, তৃতীয় বিশ্বের আর কোনো দেশের নেতাই তা করে দেখানোর সাহস পাননি। সব দুঃখ-কষ্টকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রমাণ করেছেন যে বিশ্বকে চমকে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশ।

দুর্নীতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানালে তাদের কাজ গুটিয়ে নিতে বলেন শেখ হাসিনা। এরপর সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করেন এ মেগা প্রকল্প।

সেতু সাধারণত তৈরি হয় ইস্পাত বা কংক্রিট দিয়ে। কিন্তু বহুমুখী পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে ইস্পাত ও কংক্রিটের মিশ্রণে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতুর মূল কাঠামো ইস্পাত তৈরি, যা স্প্যান নামে পরিচিত। আর পিলার এবং যান চলাচলের পথ কংক্রিটের তৈরি।

পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ দশমিক ১২ মিটার (৪৯২ দশমিক ৫ ফুট) দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার (৩ দশমিক ৮২ মাইল) দৈর্ঘ্য এবং ২২ দশমিক ৫ মিটার (৭৪ ফুট) প্রস্থের এ সেতুটিই এখন বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। স্প্যান এবং মোট দৈর্ঘ্য উভয় দিক বিবেচনায়ই এটি দেশের সবচেয়ে সেতু।

বিশ্বে রেকর্ড:

শুধু দেশেই নয়, বিশ্বেও একাধিক রেকর্ড গড়েছে বাঙালি জাতির গর্ব ও আত্ম-অহংকারের প্রতীক পদ্মা সেতু।

নদীর তলদেশে তিন মিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে মাটির ১২২ মিটার গভীরে পাইল বসানো ছিল এই সেতু নির্মাণের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ, যা এখন রেকর্ড। এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্য কোথাও আর কোনো সেতুতে এত গভীরে পাইল বসাতে হয়নি।

এ ছাড়া পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং, যা আরেক বিশ্ব রেকর্ড। এর ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে গর্বের পদ্মা সেতু।

আবার রেকর্ড পরিমাণ নদী শাসন করেই বাগে আনতে হয়েছে প্রমত্তা পদ্মাকে। নদীর পাড় ভাঙনের কারণে সেতুটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার (মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব:

মেগা এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, যা নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের অভাবে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলটিতে দ্রুত উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি করবে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতে উল্লেখযোগ্য সময় বাঁচাবে পদ্মা সেতু। এমনকি পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাতায়াতে সময় বাঁচবে প্রায় ৪ ঘণ্টা।

শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতু চালু হলে পরিবহন খরচও কমবে উল্লেখযোগ্য হারে। যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করবে এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে উৎপাদন খরচ ও দামের ওপর।

এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার প্রতি বছর ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক এ উন্নয়ন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় ছয় কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে।

উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অনুমান, ঢাকা থেকে যাতায়াতের সময় ১০ শতাংশ কমে আসলে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নীত হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, পদ্মা সেতুকে ঘিরে সরাসরি বিনিয়োগের ফলে বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এ সেতু নিঃসন্দেহে ২০৩৫-৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মূলত স্বপ্নের সেতুকে ঘিরেই আবর্তিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কী করতে পারে তা উন্নয়ন সহযোগী এবং বিশ্বকে দেখানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানিয়েছে সংগঠনটি।

আইসিসি বলছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। বাংলাদেশ যে তার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এ ধরনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম, এই সেতু তার বড় প্রমাণ।

গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখবে পদ্মা সেতু। বিশেষ করে, এটি ভুটান, ভারত এবং নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও পর্যটনে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।
এদিকে ঢাকার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এ মেগা প্রজেক্টের প্রশংসা করেছে রাশিয়া। ঢাকায় রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে বহুমুখী পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।

সোমবার (২০ জুন) রুশ দূতাবাস জানায়, বহুবিধ সম্ভাবনার কারণে পদ্মা সেতু সত্যিকার অর্থেই ‘গেম চেঞ্জার’। স্থানীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পারস্পরিক সংযোগ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে এ সেতু। এটি দেশের জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আমূল উন্নয়ন ঘটাবে।

দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য একটি ল্যান্ডমার্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দূরদর্শিতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ আমাদের চোখের সামনে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান:

২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষ্যে পদ্মার দুই পাড়েই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে জাঁকজমকপূর্ণ।

তিন স্তরের নিরাপত্তার মধ্যে উদ্বোধনের পর ২৫ জুন সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে পদ্মা সেতু খুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন তিনি। পরে শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image