• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নিউজবাংলা, দৈনিক বাংলায় তোয়াব খানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৪৮ এএম
তোয়াব খানের জানাজা অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় তোয়াব খানের প্রথম জানাজা। এরপর ফুলেল শ্রদ্ধা শেষে মরদেহবাহী কফিন রওনা দেয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে।

সকাল থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। এর মধ্যেই শেষবার কার্যালয়ে এলেন নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক, কিংবদন্তি সাংবাদিক তোয়াব খান, তবে নিথর দেহে কফিনবন্দি হয়ে। শোকে স্তব্ধ সহকর্মীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রয়াত সম্পাদককে। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন স্বজনরা।

তোয়াব খানের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে নিউজবাংলার নির্বাহী সম্পাদক হাসান ইমাম রুবেল বলেন, ‘তোয়াব ভাই অসুস্থতার মধ্যেও অফিস করতে মরিয়া থাকতেন। উনাকে প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক হিসেবে আমরা চিনি। অনলাইন মিডিয়ার মতো আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মিডিয়ার সঙ্গে ওই অর্থে যোগাযোগ ছিল না, কিন্তু তিনি এই মিডিয়াও অনেক ভালোভাবে বুঝতেন।

‘অনলাইন পাঠক কী ধরনের রিপোর্ট বা কনটেন্ট পছন্দ করেন, সেগুলোর বিষয়ে তিনি আমাকে বলতেন। আমরা সেগুলো করছি কি না, তা পরদিন জানতে চাইতেন। তার এই কর্মস্পৃহা শেষ সময় পর্যন্ত ছিল।’

দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু বলেন, তোয়াব খান স্মরণে সপ্তাহব্যাপী শোক পালন করা হবে। এ বছর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তার নামে পুরস্কার দেয়া হবে। পরবর্তী বছর থেকে দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলার পক্ষ থেকে ‘তোয়াব খান স্মৃতি পুরস্কার’ চালু হবে।

বাবাকে স্মরণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তোয়াব খানের মেয়ে তানিয়া খান। তিনি বলেন, ‘এই দৈনিক বাংলায় আসার জন্য বাবার কী যে এক আকুতি ছিল। কবে কাজ শেষ হবে, কবে যাব।

‘আজ যখন এখানে আনা হচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল এভাবে তোমাকে আনতে চাইনি। সেই তুমি দৈনিক বাংলায় আসলে; প্রাণহীন।’

দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলা কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তানিয়া খান। তিনি বলেন, “আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনারা শেষ সময় পর্যন্ত তার অ্যাডভাইস নিয়েছেন, পরামর্শ করেছেন। এই জিনিসগুলো তাকে অনেক মোটিভেটেড রাখত। কাজ ছাড়া একটা দিন থাকতে পারত না। দৈনিক বাংলা যেদিন বের হয়, সেদিন একটা লেখা লিখে গিয়েছিলেন। আমি বলছিলাম, ‘তুমি পারছো লিখতে? এত রাত জেগে জেগে লিখছো।’ বলে যে, ‘না লিখাটা দিতে হবে, স্টার্টিং পেপারে দিতে হবে।’ তাকে কাজে ফেরানোর জন্য যেটা করছেন, আমরা খুবই কৃতজ্ঞ।

‘এটা না হলে আমার বাবুজি আরও আগে চলে যেত। তিনি কাজ ছাড়া থাকতেই পারেন না। আমি নাফিজ সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাবুজি এডিটর হিসেবে জয়েন করে এই যে চ্যালেঞ্জটা তিনি নিয়েছিলেন, এটা খুব বড় জিনিস। সবাই এই চ্যালেঞ্জ নেয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবুজি একসময় দৈনিক বাংলার সম্পাদক ছিলেন। আজ দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবেই বিদায় নিলেন। এটাই অনেক বড় পাওয়া।

‘এটাই কতজনের হয়? যেখানে ছিলাম, সেখান থেকেই চলে গেলাম। আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’

পরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় তোয়াব খানের প্রথম জানাজা।

বৃষ্টিভেজা দিনে শেষবার নিউজবাংলা, দৈনিক বাংলায় তোয়াব খান
এতে উপস্থিত ছিলেন নিউজবাংলার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, প্রকাশক শাহনুল হাসান খান, নির্বাহী সম্পাদক হাসান ইমাম রুবেল, দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু, আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন মোনেমসহ নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলার সংবাদকর্মীরা। তোয়াব খানের স্বজনরাও অংশ নেন জানাজায়।

এরপর ফুলেল শ্রদ্ধা শেষে মরদেহবাহী কফিন রওনা দেয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

এরপর বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খানের মরদেহ নেয়া হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে তাকে রাখা হবে বেলা ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। ওই সময় তার দ্বিতীয় জানাজা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মরদেহ নেয়া হবে গুলশানে তার নিজ বাসভবনে।

বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই সাংবাদিককে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।

বার্ধক্যজনিত জটিলতায় অসুস্থতার পর তোয়াব খানকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

তার জীবনের বর্ণাঢ্য অধ্যায়

১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তোয়াব খান। সাংবাদিক হিসেবে সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন রয়েছে তার।

২০১৬ সালে একুশে পদক পান তোয়াব খান। একই বছর তাকে সম্মানীত ফেলো নির্বাচন করে বাংলা একাডেমি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন তোয়াব খান। পরে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ছাত্রজীবন থেকেই তোয়াব খান বিভিন্ন পত্রিকায় সমকালীন ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেন। ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে।

১৯৬১ সালে দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন তোয়াব খান। ১৯৬৪ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচার হয় ‘পিণ্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন তোয়াব খান। দেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন যশস্বী এ সাংবাদিক।

নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেয়ার আগে সর্বশেষ তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image