• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

শত বছরের ঐতিহ্য পুরান ঢাকার হালখাতা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১০:০৩ পিএম
উত্তেজনা কাজ করছে ব্যবসায়ীদের মাঝে
পুরান ঢাকার হালখাতা

আতিক হাসান শুভ:  শত বছরের ঐতিহ্য পুরান ঢাকার হালখাতা। বৈশাখ মাসের প্রথম দিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হালখাতা খোলার দিন। পুরনো হিসাব চুকিয়ে শুরু হয় ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার পালা। বিগত দু’বছর করোনা মহামারির কারণে ঠিকমতো হালখাতার অনুষ্ঠান করতে পারেননি পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা। এবার তাই বৈশাখ ও হালখাতার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অন্যরকম আমেজ ও উত্তেজনা কাজ করছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে ঘিরে বরাবরই রঙিন সাজে মেতে ওঠে পুরান ঢাকা। মোঘল সম্রাট আকবর বৈশাখকে প্রথম মাস ধরে বাংলা বছর গণনা চালু করার পর থেকেই পহেলা বৈশাখের প্রচলন শুরু হয়। এ দিন বছরের সব দেনা-পাওনা মিটিয়ে নতুন বছরের জন্য নতুন খাতা খোলেন ব্যবসায়ীরা। আনন্দ-আয়োজন আর আপ্যায়নে তা খোলা হয়ে থাকে। পুরান ঢাকার সদরঘাট, তাঁতী বাজার, শাঁখারি বাজারের জুয়েলার্স ও অলংকার তৈরির কারখানা; শ্যাম বাজার, চক বাজার ও ইসলামপুরের কাপড়ের দোকানগুলোতে প্রতিবছরই হালখাতা হয়।

শত বছরের ঐতিহ্য পুরান ঢাকার হালখাতা
ইতিহাসের পাতায় হালখাতা সম্পর্কে যে বিবরণ পাওয়া যায় তা হলো, লাঙলের ব্যবহার শেখার পর মানুষ স্থায়ী বসবাস শুরু করে। কৃষিজাত দ্রব্য বিনিময়ের প্রথা শুরু হয় তখন। এই লাঙল বা হালের মাধ্যমে চাষের ফলে উৎপন্ন দ্রব্যসামগ্রী বিনিময়ের হিসাব একটি খাতায় লিখে রাখা হতো। সেই খাতার নাম ছিল হালখাতা। হাল শব্দটি সংস্কৃত ও ফরাসি—দুটি থেকেই এসেছে। সংস্কৃতিতে হল বা হালের অর্থ লাঙল এবং ফরাসিতে হাল শব্দের অর্থ নতুন। সময়কাল বিশেষে দুটি অর্থই হালখাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

মোঘল আমলে হালখাতার অনুকরণে জমিদারদের কাছ থেকে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য ‘পুণ্যাহ’ চালু করেন সম্রাট আকবর। একই নিয়ম মেনে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন পুণ্যাহ প্রচলন করেন। এ সময় খাজনা বা রাজস্ব পরিশোধ করতেন সবাই। প্রাচীনকালের হালখাতা নবাবী আমলে নাম পাল্টে হয় পুণ্যাহ। কিন্তু পরে হালখাতা নামটিই প্রচলিত হয়ে পড়ে।

শাঁখারি বাজারের অলংকার ব্যবসায়ী দেবব্রত বলেন, ‘আমরা শাঁখারি ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। পুরাতন হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাব শুরুর দিন এটি আমাদের। হালখাতা মানে যে শুধু পুরনো হিসাব চুকানো তা নয়, এটি আমাদের কাছে একটি উৎসব। করোনার কারণে গত দু’বছর হালখাতা বন্ধ ছিল। তবে হালখাতা অনুষ্ঠানের সেই আয়োজন বেশ কিছু বছর হলো আগের মতো আর নেই। পূর্বের হালখাতার এক দুই সপ্তাহ আগেই দোকান পাট সাজানো হতো। আগের মতো এখন আর অতো জমজাটভাবে অনুষ্ঠান হয় না।’

শত বছরের ঐতিহ্য পুরান ঢাকার হালখাতা
ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী নোমান উদ্দিন বলেন, ‌‘সারাবছর জুড়েই এখানে বাকিতে ব্যবসা চলে। ১লা বৈশাখ এলেই আমরা হালখাতা করে থাকি। নতুন টালি খাতা খুলে পুরনো হিসাব ক্লোজ করি। এই প্রথা যুগ যুগ ধরে চলছে। তবে এখন ব্যবসায়ীরা সবাই ইংরেজি মাসের ওপর ভিত্তি করে আয়-ব্যয় করেন। তাই ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখে হালখাতা উৎসব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন আমাদের মতো করে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাকিতে দেওয়া টাকা আদায় করে থাকি।’

শ্যামবাজারের কাঁচামালের বেপারী আরমান হোসেন বলেন, ‘বছর পাঁচেক আগেও আমরা হালখাতা করতাম। বাংলা বছরের শুরুতে আমরা দেনাপাওনা ক্লিয়ার করতাম। কিন্তু এখন আর হালখাতা করার জন্য অপেক্ষা করি না। যাদের কাছে টাকা পাওনা না থাকে, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজন অনুসারে আগেই টাকা নিয়ে নিই।’

শ্যাম বাজারের আরেক ভুসা মালের ব্যবসায়ী আমিন বলেন, ‘এখন বাংলা নববর্ষের জন্য অপেক্ষা না করে বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনেকে হালখাত করে ফেলেন। সে জন্য অনেকের মাঝেই এ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই।’

উল্লেখ্য, পুরান ঢাকায় এখনও হালখাতার যে ঐতিহ্য তা ধরে রেখেছে শাঁখারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। পূর্বের রীতিনীতি মেনে এখানও এখানকার ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখে তাদের পুরনো খাতার পুরনো হিসাবে চুকিয়ে নতুন করে বেচাকেনা শুরু করেন।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image