• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার চাই : বিএনপিএস 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:২৮ পিএম
বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার চাই
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর

জহিরুল ইসলাম সানি : অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা নেই, যেখানে সকল ক্ষমতার মূল উৎস হলো অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং সম্পদ ও সম্পত্তিতে তার মালিকানা, যার শুরু হয় পরিবার থেকে। এই সংকট মোকাবেলার সবচেয়ে কার্যকর মূল পদক্ষেপ হবে নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ় করা, তথা উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, যা পরিবার, সমাজ রাজনীতিতে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করবে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে 'বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন।

সভা প্রধানের বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, বর্তমানে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে আমরা সবচেয়ে বেশি যে সংকটের মোকাবেলা করছি, তা হচ্ছে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতন। নারী ৩ কিশোরীরা পরিবার, অফিস আদালত, যানবাহন, রাস্তাঘাট, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় যৌন হয়রানি এ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই সংকটের প্রতিকারের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি নারী সংগঠনসহ বেসরকারি সংগঠনগুলোগু উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু এর রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। পারিবারিক সহিংসতা, মাতৃমৃত্যু ইত্যাদি রোগের উপসর্গ, মূল কারণে হাত না দিলে এই সংকট সমূলে উৎপাটন করা যাবে না। সেই মূল কারণটি হলো পুরুষতন্ত্র। উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।  সম্প্রতি দুজন নারীর নিজস্ব ঠিকানা না থাকায় তারা সমস্ত পরীক্ষায় পাস করেও পুলিশের চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছিলেন না, যেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছিল। 

আমাদের দেশের নারীরা সকল ধরনের কৃষিকাজ করলেও জমির মালিকানা না থাকায় সরকারি সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এমনকি ভূমিহীন নারীরা স্বামী বা সক্ষম পুত্র না থাকলে খাস জমির মালিকানা পান না।

উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকায় শিশু বয়স থেকেই পরিবারে মেয়ে শিশুকে লালনপালন করা হয় মূলত একটা উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে নিয়ে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেবার জন্য। 

পরিবারের এই মানসিকতা যেমন বাল্য বিয়ে বৃদ্ধি করে, তেমনি জীবনভর নারীদের পরজীবী হিসেবে গণ্য হবার পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়। পাশাপাশি পরিবারের দ্বিতীয় শ্রেণির সদস্য হিসেবে গণ্য হওয়া নারীদের প্রতি নানা ধরনের বৈষম্য-নির্যাতন দেখে দেখে পরিবারের অপরাপর সদস্যদের মধ্যেও পুরুষাধিপত্য ও অগণতান্ত্রিক মনমানসিকতার চর্চা ও আচরণ বিকাশ লাভ করে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া অপরিহার্য।

দেশের সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাংলাদেশের সব আইনই প্রণীত হয়েছে সংবিধানের আলোকে ইউরোপীয় সিভিল আইনের আদলে। শুধু নারী অধিকার খর্বকারী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আইনটিই ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে প্রণীত। 

আমরা মনে করি, একটি স্বাধীন দেশে এমন দ্বৈত ব্যবস্থা সুস্পষ্টভাবেই সংবিধান লঙ্ঘন।

তাছাড়া, মাধ্যমে 'জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে 'প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন' [৭ (২) ] হিসেবে সংবিধানের প্রাধান্য খর্ব হয়। কাজেই এ আইন সংবিধান বিরোধী।

এদিকে রাষ্ট্র জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদের ধারা ২ এবং ধারা ১৬.১ (গ) এর ওপর আজো সংরক্ষণ আরোপ করে রেখেছে, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০, ১৯, ২৬, ২৭ ও ২৮ এর মূল নির্যাসের সাথে সাংঘর্ষিক। স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার মূলনীতির সঙ্গেও যা সামজস্যপূর্ণ নয়।

সংবিধানের ২৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এই ভাগের (তৃতীয় ভাগ - মৌলিক অধিকার) বিধানাবলীর সহিত অসমঞ্জস সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।

অর্থাৎ, সংবিধানের অঙ্গীকার অনুযায়ী মৌলিক অধিকারের অন্যতম ভিত্তি বৈষম্যহীনতা'র সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন বহুল থাকার যৌক্তিক ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।

কাজেই, স্বাধীনতার মূলনীতি তথা সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অঙ্গীকারসমূহ লঙ্ঘন করা থেকে রাষ্ট্রকে বিরত রাখা এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির স্বার্থে বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করে সকল ধর্ম ও লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য উত্তরাধিকারে সমান ব্যবস্থা প্রণয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকারের যৌক্তিক দাবিটি আবারও আলোচনায় নিয়ে আসা এবং আইন কমিশন ও জাতীয় সংসদসহ রাষ্ট্র ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নাগরিকদের পক্ষ থেকে জোর দাবি তুলে ধরার জন্য আমরা আজকের (বৃহস্পতিবার) গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করেছি।

আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উপনীত হয়েছে। এই অবস্থানকে দৃঢ় করে অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সকল জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। শুধু সরকারি-বেসরকারি চাকুরি বা গার্মেন্টসের সস্তা শ্রমিক হিসেবে জনশক্তিকে রেখে দিলে অর্থনীতির পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে না। 

সেজন্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা তৈরি এই দুটি কাজ করতে হলে সমাজের সকল জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, দক্ষতা ও পুঁজির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর মূল ভিত তৈরি হবে উত্তরাধিকারে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানের আরো বক্তব্য দেন শাহনাজ সুমী, পরিচালক, বিএনপিএস; কানিজ ফাতেমা, সহকারী সমন্বয়কারী, বিএনপিএস; এডভোকেট মোঃ হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ড. সায়মা হক বিদিশা, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বনশ্রী মিত্র, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; ড. ফৌজিয়া মোসলেম, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন কানিজ ফাতেমা 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image