মোহাম্মদ রুবেল
নেতৃত্বের গুণাবলী আর রাজনৈতিক দূরদর্শীতায় এবং এই মুহূর্তে রাজনীতির ময়দানে ও দলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনর বিকল্প নেই। তাই আসন্ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও তিনিই অপরিহার্য থাকছেন।তিনি রাষ্ট্র উন্নয়নের সারথি।তাই নেতৃত্বে তারঁ বিকল্প নেই।
দলের নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলছেন,সভাপতি আমাদের অপরিহার্য যিনি আছেন,তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক।কাউন্সিলরদের এক জনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না,যে তাকে (শেখ হাসিনা) সমর্থন করবে না।কাজেই এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।
তবে আওয়ামী লীগের রাজনতির ময়দানে এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িছে তাকে ঘিরে। আসন্ন সম্মেলনের মধ্যদিয়ে তাঁরস্থলে কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক?তিনিই কি থাকছেন? না কি ওবায়দুল কাদের হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন ? দলের নেতাকর্মীদের মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন তাকে ঘিরে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের ভেতরে এখন দুই মেরুকরণ।বইছে দুই স্রোত।দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বপদে থেকে গেলে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে দলের একাংশ।বিপরীতে দলের অপর অংশ সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখের সম্ভাবনাকে আস্থায় রেখে এগোচ্ছে।এই পদে অন্তত হাফ ডজন নেতা আছেন নেতৃত্বের দৌড়ে।তাঁরা নেতৃত্ব বদলের আশায় বুক বেঁধেছে আছেন।
জানা যায়,আগামী বছরের এপ্রিলের দিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ওবায়দুল কাদেরের।ওই সম্ভাবনা তৈরি হলে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ শূন্য হয়ে যাবে।তখন সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।কেননা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের কোনো পদ নেই।সেক্ষেত্রে চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে যাঁর নাম প্রথমে থাকে,তিনিই সিনিয়র হিসেবে পরিচিতি পান।আর তাঁকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
তাই সম্মেলনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।এই ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ,ডা.দীপু মনি,ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
দলে সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, দলের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।তবে‘সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকেরই ইচ্ছা থাকতে পারে।আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল।আমার জানামতে অন্তত দশ জন প্রার্থী আছেন।যারা সাধারণ সম্পাদক হতে চায়।কাজেই, কে হবেন সেটা নেত্রীর ইচ্ছা।কাউন্সিল অধিবেশনে সেখানে কাউন্সিলরদের মতামতে এর প্রতিফলন ঘটবে।আমি এই মুহূর্তে কোনও প্রেডিকশনে যেতে পারি না।সময় এখনও ম্যাচিউর হয়নি।
এ পটভূমিতে'উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত,সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে আট হাজার কাউন্সিলর এবং সমসংখ্যক ডেলিগেটরের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের।শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে।গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়,আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে গড়া মঞ্চ তৈরির কাজশেষ।মঞ্চটি করা হয়েছে তিন স্তরের।প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসবেন দলের সিনিয়র নেতারা।দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারিতে বসবেন অন্যরা। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের ১৪০ নেতা মঞ্চে থাকবেন।
দলের একাংশের নেতাকর্মী মনে করছেন,সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদলের সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।এখন পর্যন্ত দলের অনেক নেতাকর্মী তাঁদের নিজস্ব বিচার-বিশ্নেষণে সাধারণ সম্পাদকের পদে অনেকের ভিড়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেই আলোচনার শীর্ষে রাখছেন।তাঁদের দৃষ্টিতে,ওবায়দুল কাদেরের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।তাঁকে বেশ নির্ভর মনে হচ্ছে।এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে তিনি প্রতিটি জেলা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় রাজনীতির মাঠ চষে বেড়িয়েছেন।বেশিরভাগ জেলা সম্মেলনে পুরোনোরাই শীর্ষ নেতৃত্বে রয়ে গেছেন।কেন্দ্রেও এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।তাছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিড়ে বিরোধীপক্ষ রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।তাই এই মূহুর্তে সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদলের সম্ভাবন কম বলে মনে করছেন অনেক দলীয় নেতা-কর্মীরা।
এদিকে দলের অপর অংশ সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসতে পারে বলে মনে করছে।তাদের যুক্তি,মহিলা আওয়ামী লীগ,যুব মহিলা লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সম্মেলনে তারই আভাস মিলেছে। এই তিন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন নেতৃত্ব এসেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের সাফকথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পাওয়া নেতাই হবেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এমআর
আপনার মতামত লিখুন: