বিনোদন ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তিন প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী কঙ্কন ভট্টচার্য্য, মন্দিরা ভট্টাচার্য্য ও রঞ্জিনী ভট্টাচার্য্যের সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হলেন মিলনায়তন ভর্তি দর্শক। লোকসঙ্গীত, বিদেশি গানের অনুবাদ আর নিজেদের লেখা ও সুর করা মৌলিক গানের সমন্বয়ে অনবদ্য একটি সঙ্গীত সন্ধ্যা উপহার দিলেন এই শিল্পী পরিবার। আর এমন অসামান্য আয়োজনের মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত একাদশ সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার। 'প্রলয় বাজাও গানে, সাহস জাগাও প্রাণে' এই শ্লোগান নিয়ে আয়োজিত এবারের উৎসবের তৃতীয় ও শেষ দিন ছিল ১২ মার্চ রোববার।
এদিন সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে শুরু হয় এবারের উৎসবের আমন্ত্রিত শিল্পী কঙ্কন ভট্টচার্য্য, মন্দিরা ভট্টাচার্য্য ও রঞ্জিনী ভট্টাচার্য্যের ত্রয়ী সঙ্গীত সন্ধ্যা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে আয়োজনের শুরুতেই শিল্পীদের মঞ্চে আহ্বান করেন সঞ্চালক, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন। এরপর তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুরাইয়া পারভীন।
শিল্পীদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। আর, উৎসব স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এছাড়া, উপহার ও বই তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। এরপর শিল্পীদের প্রতি উদীচীর প্রতিজ্ঞাপত্র পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হালিমা নূর পাপন।
শুরুর আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় শিল্পী ত্রয়ীর সঙ্গীত পরিবেশনা। সাঁওতাল বিদ্রোহ থেকে শুরু করে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসঙ্গীত, পল রবসন বা পিট সিগার-এর বিপ্লবী গানের অনুবাদ, চিলির গণজাগরণমূলক গানের অনুবাদ কিংবা বাংলার নিবারণ পণ্ডিত-এর গান কী ছিল না সেখানে। গানে গানেই যেন পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করেন কঙ্কন, মন্দিরা এবং রঞ্জিনী। সাথে ভ্রমণ করান মিলনায়তনে উপস্থিত শ্রোতাদেরকেও।
এছাড়া, নিজেদের লেখা ও সুর করা প্রখ্যাত সব গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন তিন শিল্পী। ছিল ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ এবং সলিল চৌধুরী ও হেমাঙ্গ বিশ্বাস-এর সৃষ্ট কিংবদন্তি সব গানও। তাদের একেকটি অনবদ্য পরিবেশনা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন শ্রোতারা। পান অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নতুন অনুপ্রেরণা।
এর আগে “প্রলয় বাজাও গানে, সাহস জাগাও প্রাণে”-- এই শ্লোগান নিয়ে ১০ মার্চ শুক্রবার শুক্রবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচীর একাদশ সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন উদীচীর অন্যতম উপদেষ্টা, বিশিষ্ট লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি। ১০, ১১ ও ১২ মার্চ তিনদিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল ১১ মার্চ শনিবার।
জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের হাতে ফুল, ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথি এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দ। উৎসবের প্রথম দুই দিনই সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিল দেশবরেণ্য গণসঙ্গীত শিল্পী ও দলের পরিবেশনা। এবারের উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: